Hijab Row

সম্পাদক সমীপেষু: শিক্ষাই লক্ষ্য

দু’পক্ষকেই এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করে একটি সমাধানে আসতে হবে, পড়ুয়াদের স্বার্থ রক্ষা করতে হবে, তারা যেন কোনও ভাবেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অংশগ্রহণ থেকে বঞ্চিত না হয়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৮:৫০

দোলন গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘প্রতিবাদের স্পর্ধাকেই কি ভয়’ (১০-২) শীর্ষক প্রবন্ধটি পড়ে একটা প্রশ্ন মনে জাগছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়া হয় শিক্ষা অর্জনের জন্য। এটাই প্রধান ও প্রাথমিক লক্ষ্য। কী জামাকাপড় পরে যাবে ছাত্রছাত্রীরা, সেটা কি খুবই গুরুত্বপূর্ণ? শিখ সম্প্রদায়ের মানুষেরা মাথায় পাগড়ি বাঁধেন, হিন্দু বিবাহিত মহিলারা শাঁখা-সিঁদুর পরেন, মুসলিম মেয়েরা হিজাব পরিধান করেন, এতে অসুবিধাটা কোথায়? তবে এটাও ঠিক, যে কোনও বস্ত্র পরিধান যেন শালীনতার সীমা লঙ্ঘন না করে, সে দিকে খেয়াল রাখা উচিত। নার্সের পেশায় যাঁরা নিযুক্ত তাঁদের এক রকম ‘ড্রেস কোড’, আইনি পেশায় যাঁরা নিযুক্ত তাঁদের এক রকম ড্রেস কোড, যাঁরা পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত তাঁদের এক রকম পরিধান, এবং তাতে তাঁদের কাজে কোনও অসুবিধা হয় বলে জানা নেই। তাই স্কুল-কলেজে যদি কোনও নির্দিষ্ট ড্রেস কোড থাকে, তা মেনে চললে কিন্তু কারও কোনও অধিকার খর্ব হয় না। স্কুল-কলেজ বাদ দিয়ে অন্য জায়গাতে নিজের ইচ্ছামতো পোশাক পরা যায়।

দু’পক্ষকেই এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করে একটি সমাধানে আসতে হবে, পড়ুয়াদের স্বার্থ রক্ষা করতে হবে, তারা যেন কোনও ভাবেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অংশগ্রহণ থেকে বঞ্চিত না হয়। শিক্ষার অধিকার জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলের, তা যেন কোনও মতে লঙ্ঘিত না হয়।

Advertisement

সর্বানী গুপ্ত, বড়জোড়া, বাঁকুড়া

অকারণ বিতর্ক

হিজাব বিতর্ক কর্নাটক রাজ্য ছাড়িয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ার পর এখন বিদেশেও তার আঁচ লেগেছে। নোবেলজয়ী মালালা ইউসুফজাই ও ফ্রান্সের ফুটবলার পল পোগবা সম্প্রতি হিজাব কাণ্ডের নিন্দার পর এ বার আমেরিকার সরকারের পক্ষ থেকেও সমালোচনা করা হয়েছে, এবং একে মহিলাদের ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ বলে দাবি করা হয়েছে, যা খুবই অনভিপ্রেত এবং দুঃখজনক। ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মহলের হস্তক্ষেপের অধিকার আছে কি? ভারতের একটি রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত নিয়ে কেন এত বিতর্ক, বোঝা যাচ্ছে না, যা এখনও সে রাজ্যের আদালতে বিচারাধীন। কর্নাটকের কলেজের ঘটনা পূর্ব পরিকল্পিত কি না, তা-ও দেখা দরকার।

কলেজে ও স্কুলে নির্দিষ্ট ইউনিফর্ম পরে আসাই বিধেয়। একই স্কুল-কলেজে ছাত্রছাত্রীরা একই রকম পোশাক পরে এলে তা দেখতে যেমন সুন্দর লাগে, তেমনই শিক্ষাঙ্গনে শৃঙ্খলা বজায় থাকে। কর্নাটক সরকারের হিজাব পরে শিক্ষাঙ্গনে না আসার নির্দেশ বাস্তবোচিত। অযথা এই নিয়ে বিতর্ক ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করা উচিত হয়নি।

তবে কর্নাটকের ওই হিজাব-পরা কলেজছাত্রীকে ঘিরে গেরুয়া উত্তরীয় পরা ছাত্র দলের ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দেওয়া কোনও মতেই সমর্থনযোগ্য নয়। এর তীব্ৰ নিন্দা করছি। শিক্ষাঙ্গনে কেন ধর্মীয় স্লোগান দিয়ে সম্প্রীতি ক্ষুণ্ণ করা হবে? ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দেওয়ার জায়গার অভাব পড়েছে না কি? একই সঙ্গে নিন্দনীয় এক দল ছাত্রের কলেজে ভারতের জাতীয় পতাকা নামিয়ে গেরুয়া পতাকা উত্তোলন করা। এটা কি দেশদ্রোহিতার নামান্তর নয়? দোষীদের চিহ্নিত করে অবিলম্বে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা করা উচিত।

অতীশচন্দ্র ভাওয়াল, কোন্নগর, হুগলি

অসম্মান

‘হিসাবি’ (১১-২) শীর্ষক সম্পাদকীয়টির পরিপ্রেক্ষিতে এই পত্রের অবতারণা। নির্বাচনের ঢাক বেজে উঠলেই ধর্মের তাস খেলার হিড়িক ওঠে। কর্নাটকের হিজাব-সংক্রান্ত ঘটনা তারই অন্যতম সংস্করণ! হিজাব তো কোনও উগ্রতার প্রতিচ্ছবি নয়, নয় জাতীয়তাবিরোধী কোনও আবেগের বহিঃপ্রকাশ! তবে কেন এই হঠকারিতা, কেন এই লাগামছাড়া অসহিষ্ণুতা? আরবিতে ‘হিজাব’ শব্দটির অর্থ হল পর্দা। সম্পাদকীয়টিতে যথার্থ ভাবেই বলা হয়েছে যে, এখন রাজ্য, কেন্দ্র, সকলের ক্ষেত্রে সংবিধানের বিরুদ্ধতা অত্যন্ত মামুলি ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগামী দিনে নিশ্চিত ভাবেই তা অশান্তির ঘূর্ণাবর্তের আভাস দিচ্ছে।

বিশ্বজিৎ কর, কলকাতা-১০৩

বিতর্ক কেন?

‘হিসাবি’ সম্পাদকীয়ের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু প্রশ্ন জেগেছে। প্রথমত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা অন্য যে কোনও প্রতিষ্ঠানের নিজের পোশাক সম্বন্ধীয় নিয়মকানুন থাকতেই পারে, এবং সেটা অবশ্যমান্য। এ নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই। প্রশ্ন হচ্ছে, সেই পোশাক ছাড়াও ধর্মীয়, বা অন্য যে কোনও প্রথা মেনে আরও কিছু পরিধান করা যাবে কি না। এই অতিমারির সময় সবাইকেই মাস্ক ব্যবহার করতে হচ্ছে, সেটা কি প্রাতিষ্ঠানিক অনুশাসনের বিরোধিতা, না সময়ের দাবি? অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মেয়েদের ফ্রক বা স্কার্ট, এবং ছেলেদের হাফ প্যান্ট পরতে হয়। শীতের সময় সেই ছাত্রছাত্রীরা বড় মোজা বা লেগিংস ব্যবহার করে। সেটাও কি অনুশাসনহীনতার পর্যায়ে পড়বে? নিশ্চয়ই নয়। তা হলে অনর্থক এই বিতর্ক কেন? সম্পাদকীয়তে সঠিক ভাবেই এর কারণ চিহ্নিত হয়েছে, ধর্মীয় মেরুকরণ। আরও এক ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পুরুষেরা সর্বত্র মাথায় পাগড়ি পরে যান, বিদ্যালয় থেকে সংসদ পর্যন্ত। কখনও এ ব্যাপারে বিতর্ক হয়েছে? তা হলে হিজাব নিয়ে এত কথা কেন?

কুশল মিত্র, কলকাতা-

হারানো কৌতুক

আমরা কি ভুলে যাচ্ছি মজা করতে? রাস্তায় হঠাৎ দেখা হয়ে গেলে ক্ষণিক দাঁড়িয়ে হালকা কথার মাঝে নির্মল রসিকতা মনটা ভরে তুলতে পারে তাৎক্ষণিক আনন্দে। কিছু মানুষের উপস্থিতিই জানান দেয়, তিনি মজার মানুষ, তাঁর চলনবলনের মধ্যেই ফুটে উঠবে অনাবিল আনন্দ। তিনি নিজেই হাসিখুশিতে ভরপুর। অনেককে দেখা যায় মজার মানুষটাকে খেপিয়ে মজা করতে। সে মানুষটা হয়তো আর পাঁচ জনের মতো নন, অকারণে রেগে যান। আর সেটাই হয়ে ওঠে কিছু মানুষের কাছে হাসির খোরাক। সমাজে কিছু মানুষ অজানতেই সকলের কাছে হয়ে ওঠেন মজারু। জীবনে প্রতি মুহূর্তে ঘটে-চলা বিষয় নিয়ে কথার মাঝে হাস্যরস শুকিয়ে আজ জীবন যেন শুষ্ক কাঠ। যে কাউকে দেখে মনে হয় পৃথিবীর সমস্ত দুঃখের ভার তার মাথায়। অনেকটা যেন বোজা পুকুর, যতই ঢিল মারো ঢেউ ওঠে না। অদ্ভুত এক দূরত্ব রেখে চলেন সবাই। প্রতি দিন আসা-যাওয়া বাজার-দোকানে, প্রতিটা দোকানেরই মাছ বিক্রেতা, আনাজ বিক্রেতা পরিচিত। কারও কারও কাছ থেকে প্রত্যেক দিনই করতে হয় কেনাকাটা। তবুও কোথাও যেন একটা অবিশ্বাস কাজ করে দু’তরফেই। পান থেকে চুন খসলেই বাদানুবাদ।

হাসি-মজায় মজে থাকতে বোধ হয় আমরা সকলেই চাই, সমস্যাটা হল একে অপরের মনের কাছে আসতে না পারাটা। একে অন্যের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া সেই অক্ষমতা। কোনও একটা জায়গায় থেকে গিয়েছে অপছন্দ, অস্বস্তি। একা থাকার অভ্যাস করে নিয়েছি আমরা, তাই পড়শি সহনাগরিক হয়েও মাথা নিচু করে পাশ কাটানোই এখন দস্তুর।

কয়েক বছর আগেও রেডিয়োতে শোনা যেত হাসির নানা অনুষ্ঠান। ছিল তুবড়ি, হাসির নাটক থেকে কৌতুক নকশা। সেই রেডিয়োই তো এখন বিলুপ্তপ্রায়। আগে ক্যাসেটে বাজত কৌতুকশিল্পীর কৌতুক। শ্রোতাদের কেউ কেউ মাঝেমাঝে সেই সব কৌতুক অনুকরণ করে অনেকে চেষ্টা করতেন পাশের কাউকে হাসাতে। মনে পড়ে যাচ্ছে কৌতুক শিল্পী উত্তম দাস ও বিভাস সুরের কথা। কেমন আছেন সেই কৌতুক শিল্পীরা? আর যাঁরা পশুপাখির স্বর, কিংবা অন্যের গলার স্বর নকল করে সবাইকে আনন্দ দিতেন? খুব জানতে ইচ্ছে করে তাঁদের কথা।

সনৎ ঘোষ, বাগনান, হাওড়া

আরও পড়ুন
Advertisement