Medicne Price

সম্পাদক সমীপেষু: রোগীর ক্ষতি

২০২৪-এর ফেব্রুয়ারি মাসে প্রায় আঠারো হাজার কোটি টাকার ওষুধ বিক্রি হয়েছিল ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ০৭:৫৫

বিষাণ বসুর ‘এ রোগ কোন ওষুধে সারবে?’ (২৫-৩) প্রবন্ধটিকে সমর্থন করে বলতে চাই যে, ওষুধ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত নানা দুর্নীতি। অন্য সব ক্ষেত্রের মতো, এখানেও মাসুল গুনতে হয় সাধারণ মানুষকে। ওষুধ কোম্পানিগুলো কী ভাবে বড় ডাক্তারবাবুদের পোষণ করে, তা আজ আর কারও অজানা নয়। রোগের সঙ্গে সঙ্গতিবিহীন এমন অনেক ওষুধ চিকিৎসকদের একাংশ প্রেসক্রিপশনে লিখে থাকেন, যা রোগীর পরিবার কিনতে বাধ্য হয়। কারণ, রোগীর স্বাস্থ্য নিয়ে কোনও ঝুঁকি নিতে চান না অনেক পরিবারই। এক বার এক হাসপাতালে চক্ষু পরীক্ষা করাতে গেলে ডাক্তারবাবু চোখের ওষুধের সঙ্গে একটা হেলথ টনিক দেন। স্থানীয় দোকানের কর্মী জানান যে, ওই ডাক্তারবাবু সব রোগীকেই ওই হেলথ টনিক লিখছেন!

Advertisement

ওষুধ কোম্পানিগুলির তরফে চিকিৎসকদের নগদ টাকা, দামি উপঢৌকন, সপরিবার বিদেশে ভ্রমণের সুযোগের কথা তো শোনাই যায়, নোটবন্দির সময়ে পুরনো নোট বদলে নতুন নোট দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও নাকি দেওয়া হয়েছিল। অতএব নির্বাচনী বন্ড যে ওষুধ কোম্পানিগুলো বিনা স্বার্থে কেনে না, এটা সবাই জানে। তারা এই চাঁদার অঙ্ক সুদে আসলে তুলে নেয় বাজার থেকে। সেই জন্যই বাড়ে মূল্য। ওষুধ কোম্পানিগুলো অনেকখানি দাম বাড়ালেও চোখ বুজে থাকে কেন্দ্রীয় সরকার থেকে রাজ্য সরকার অবধি। তাই সাধারণ রোগীকে মামুলি কাশির সিরাপ কিনতে হয় একশো টাকা বা তারও বেশি অর্থের বিনিময়ে। মুক্তির উপায় নেই।

তারক সাহা, হিন্দমোটর, হুগলি

গভীর অসুখ

বিষাণ বসুর প্রবন্ধ প্রসঙ্গে বলতে চাই, ওষুধের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে নির্বাচনী বন্ড কেনার সম্পর্ক আছে বলে মনে করি না। নির্বাচনী বন্ড চালু হওয়ার আগে ওষুধের কোম্পানিগুলো কি রাজনৈতিক দলগুলোকে টাকা দিত না? যে দল ক্ষমতায় থাকে, সে দলই চাঁদা পায়। দেখা যাচ্ছে, কোনও কোম্পানির দফতরে আয়কর হানায় বহু কোটি টাকা উদ্ধার করার পর কেনা হয়েছিল বন্ড। প্রশ্ন হল, কোম্পানির দফতরে এত নগদ টাকা কেন থাকবে? ওষুধের খুচরো বিক্রি ভিন্ন অন্য কোনও স্তরে নগদে লেনদেন হয় না। বন্ড ক্রেতাদের অনেকে বিভিন্ন বেনিয়মে অভিযুক্ত। এটাও দেখা যাচ্ছে, যে সব সংস্থা ভারতের ভেষজ বাজারে কোনও ব্র্যান্ডেড ওষুধ বিক্রিই করে না, অথবা বাজারে পিছনের সারিতে রয়েছে, সেই সংস্থাই বেশি মূল্যের বন্ড কিনেছে।

২০২৪-এর ফেব্রুয়ারি মাসে প্রায় আঠারো হাজার কোটি টাকার ওষুধ বিক্রি হয়েছিল ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারে। তার কম-বেশি ৪৬ শতাংশ প্রথম দশটি ওষুধ বিক্রয়কারী সংস্থার, যদিও ভারতে তিন হাজারের কিছু বেশি ওষুধের কোম্পানি রয়েছে, এগারো হাজারের কাছাকাছি ওষুধ তৈরির কারখানা আছে। উল্লেখ্য, এই দশটি কোম্পানির মধ্যে কেবলমাত্র একটাই বহুজাতিক কোম্পানি। আর বাকি ন’টি দেশি কোম্পানির নব্বইয়ের দশকেও ওষুধের বাজারে তেমন উপস্থিতি ছিল না। এত কম সময়ে এমন প্রভাব বিস্তার অতি কঠিন কাজ।

লক্ষণীয়, অধিকাংশ ওষুধ সংস্থার কেনা নির্বাচনী বন্ডের মূল্য সেই সব সংস্থার বিক্রির তুলনায় বেশ কম। বন্ড কেনানো হয়েছে ভীতি প্রদর্শন, বা কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ওঠা বেনিয়মের অভিযোগ ধামাচাপা দেওয়ার জন্য, হয়তো বহু মূল্যের টেন্ডার পাওয়ার জন্য। এই পরিস্থিতির কারণ বহুবিধ— কেন্দ্রীয় সরকারের শ্রম মন্ত্রকের দ্বারা গঠিত সেলস প্রোমোশনের কর্মীদের স্থায়ী ত্রিপাক্ষিক কমিটির মিটিং সাত বছর ডাকা হয়নি। বিগত ৯ বছর ভারতের শ্রম সম্মেলন সংঘটিত হয়নি। কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে, সরকার-পরিচালিত ওষুধ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ের নজরদারি, ওষুধের গুণমান ঠিক রাখতে নজরদারি, ওষুধের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের উপর কঠিন নজরদারির প্রক্রিয়া নিষ্ক্রিয় রয়েছে। আরও অনেক সমস্যা রয়েছে।

স্মরণে থাকবে করোনা অতিমারি চলাকালীন কয়েকটি ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি কেন্দ্রীয় সরকারের থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা ‘অনুদান’ পেয়েছিল কোভিডের ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা করার জন্য। একটি কোম্পানির ভ্যাকসিনই ব্যবহার করা হয়েছিল ব্যাপক ভাবে, অন্য একটি সংস্থা রাশিয়ার উৎপাদিত ভ্যাকসিন ভারতে নিয়ে আসে। আর একটি কোম্পানির ভ্যাকসিন কেউ নিয়েছে বলে জানা নেই, অন্তত এ রাজ্যে। এই তিনটি সংস্থার মধ্যে দু’টি কোম্পানির কেনা বন্ডের মূল্য নেহাত কম নয়।

ওষুধের কাঁচামাল কেনা হয় ওজনে টনের হিসাবে, আর বিক্রির যোগ্য পণ্যের দাম সাধারণত মিলিগ্রামে নির্ধারিত হয়ে থাকে। কেন্দ্রীয় সরকারের ভেষজ ওষুধের দাম নির্ধারণকারী সংস্থা দাম নির্ধারণ করে সেই সব ওষুধের, যেগুলো সংস্থার তালিকাভুক্ত। ভেষজ শিল্প মালিকদের সংগঠনগুলি চেষ্টা করে, যাতে তাদের ওষুধ তালিকাভুক্ত না হয়। সফল না হলে ঘুরপথে যায়। যেমন, সুলভ অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ দোকানে সরবরাহই করা হয় না। তার সঙ্গে অপ্রয়োজনীয় ওষুধ মিশিয়ে বেশি দামে বিক্রি করা হয়।

বহুজাতিক কোম্পানিগুলো ধীরে ধীরে ভারতের ওষুধের বাজার থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিচ্ছে। কোথাও ক্ষতিপূরণ দিয়ে কর্মীদের অবসর নেওয়ানো হচ্ছে, কোথাও সরাসরি বরখাস্ত করা হচ্ছে। যে কোম্পানিগুলো বিগত ১০ বছরের মধ্যে বিক্রির নিরিখে সামনের সারিতে চলে এসেছে, সেগুলির প্রায় কোনওটিতে কর্মী সংগঠন নেই। এগুলির মধ্যে একটি সংস্থা কোভিডের সময় ডাক্তারবাবুদের বাড়ি, চেম্বার ইত্যাদি স্যানিটাইজ় করে দিয়েছিল, ‘সামাজিক দায়িত্ব’-এর দৃষ্টান্ত দেখিয়ে। এ সব সংস্থায় চাকরির শর্তাবলি অদ্ভুত। যেমন, চাকরিজীবন ২৫ বছর বা কর্মীর বয়স ৫০ বছর, যেটা আগে হবে, সে দিন অবসর।

কিন্তু এ সব অনিয়ম দেখবে কে? যে দেশে ওষুধ, কেরোসিন, অ্যাসিড, ফলিডল গোত্রের বিষাক্ত রাসায়নিক, ইউরিয়া সার, একই মন্ত্রকের অধীনে, তাতে এমনই ঘটতে বাধ্য। অবিলম্বে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতরের অধীনে আনা উচিত ওষুধ শিল্পকে। অথবা কেবলমাত্র ওষুধ শিল্পের জন্য একটা পৃথক মন্ত্রক গঠন করতে হবে। এতে সব সমস্যার সমাধান হবে না, কিন্তু এই শিল্পের সঙ্গে সংযুক্ত সবাইকে অন্তত একটা ছাতার তলায় এনে দেশের আইনের আওতায় আনার প্রচেষ্টার প্রাথমিক কাজ শুরু হতে পারে।

সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা-৫৯

ব্যতিক্রমী

‘বুঝি সময় হল’ (২৫-৩) শীর্ষক সম্পাদকীয়ের পরিপ্রেক্ষিতে বলি, আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরীওয়ালের দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার অন্য কোনও দলের পদাধিকারী গ্রেফতারের সঙ্গে তুলনীয় নয়। নীতিভিত্তিক রাজনৈতিক চর্চা ও চর্যা, জনসাধারণের সঙ্গে সংলাপের ভিত্তিতে নীতি প্রণয়ন এবং আমজনতার প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দিয়ে আপ দল আত্মপ্রকাশ করে। ম্যাগসাইসাই পুরস্কার পাওয়ার, এবং ইন্ডিয়ান রেভিনিউ সার্ভিসের উচ্চপদ ত্যাগের নজির ছিল কেজরীওয়ালের। আমজনতাকে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, জল, বিদ্যুৎ বিনামূল্যে দেওয়ার নীতি ‘রেউড়ি’ বলে সমালোচিত হলেও, সব দলই ক্রমশ তা গ্রহণে বাধ্য হয়। এই রাজনীতির ধাক্কায় রাজধানীতে প্রধান দুই দল গুরুত্ব হারিয়েছে এক দশক। সৎ রাজনীতি ও প্রশাসনিক দক্ষতার যোগফলে দিল্লিতে একাধিক বার জনাদেশ পেয়েছে আপ। শিক্ষা, স্বাস্থ্যে হয়েছে দৃষ্টান্তমূলক উন্নতি। এই সব আশ্চর্যের স্থপতির ছিদ্রান্বেষণ করা হবে, স্বাভাবিক।

নৈতিক প্রশ্নে সতর্কতায় গলদ ছিল। তাই আবগারি নীতি প্রত্যাহার করতে হয়। আম আদমি নেতার বাসভবনে বিলাসবহুল সংস্কার আপ রাজনীতির বিপ্রতীপ। কেজরীওয়ালের গ্রেফতার তাঁর বিরোধীদের রচিত চিত্রনাট্য হলেও চক্রান্ত সন্ধানে নয়, আত্মবিচারে, সংশোধনে হতে পারে পরিত্রাণ।

মানস দেব, কলকাতা-৩৬

আরও পড়ুন
Advertisement