Fire Cracker Factory

সম্পাদক সমীপেষু: ছাড়পত্র নেই

বিস্ফোরণে এতগুলি নিরীহ মানুষের মৃত্যু কি তাঁদের সচেতন করবে? একটা সময় ছিল পঞ্চায়েত প্রতিনিধিদের কাজ করাকে ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর সঙ্গে তুলনা করা হত।

Advertisement
শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০২৩ ০৪:৫৪
An image of Fire Crackers

বিস্ফোরণের সম্ভাবনা আছে এমন বস্তু, বা সহজদাহ্য পদার্থ নিয়ে ব্যবসার ক্ষেত্রে আলাদা ছাড়পত্র নিতে হয়। ফাইল চিত্র।

বাজি না বোমা— এই প্রশ্নে যখন তর্ক-বিতর্ক তুঙ্গে, তখন বিস্ফোরক আইনে ছাড় কেন, এই প্রশ্ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ (বাজি বাজার পাড়াতেই, ২৩-৫)। প্রশাসনিক কর্মজীবনের অভিজ্ঞতার নিরিখে বলি, শব্দবাজির উপকরণ এবং বোমার (পেটো) মশলার তেমন পার্থক্য নেই। এই উপকরণ গুদামজাত করা এবং শব্দবাজির কাজে লাগানোর বিষয়ে সুনির্দিষ্ট আইনকানুন আছে। পঞ্চায়েতের ব্যবসার অনুমতিপত্র প্রদান করা আইনসিদ্ধ তো নয়ই, বরং হাস্যকর, সে যে আমলেই হোক না কেন! বিস্ফোরণের সম্ভাবনা আছে এমন বস্তু, বা সহজদাহ্য পদার্থ নিয়ে ব্যবসার ক্ষেত্রে আলাদা ছাড়পত্র নিতে হয়। পাহাড় কাটার জন্য ডাইনামাইট তৈরির কারখানার ক্ষেত্রেও কঠিন আইনি প্রক্রিয়ার বিধান আছে। সুতরাং, গ্রামাঞ্চলের যে কোনও স্থানে বাজির কারখানা হবে মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য, এ যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়।

পঞ্চায়েত অবগত নয়, এ অত্যন্ত দুর্বল যুক্তি। বেশির ভাগ পঞ্চায়েত প্রতিনিধিদের দৃষ্টিভঙ্গির আমূল পরিবর্তন হয়েছে, জনকল্যাণমূলক কাজকর্ম তাঁদের কাছে অগ্রাধিকার পায় না। বিস্ফোরণে এতগুলি নিরীহ মানুষের মৃত্যু কি তাঁদের সচেতন করবে? একটা সময় ছিল পঞ্চায়েত প্রতিনিধিদের কাজ করাকে ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর সঙ্গে তুলনা করা হত। কিন্তু এখন অনেক ক্ষেত্রেই পঞ্চায়েত প্রতিনিধিদের অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদবৃদ্ধি সমালোচিত হচ্ছে। পুলিশ-প্রশাসনের কর্মদক্ষতা সম্বন্ধে আমি আশাবাদী। কিন্তু তাকে রাজনৈতিক প্রভাবের বাইরে রাখা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অবশ্য কর্তব্য।

Advertisement

সুবীর ভদ্র, ডানকুনি, হুগলি

কাজের অভাবে

‘কাজের টান, অর্থের টোপে তাই প্রাণ-বাজি’ (১৮-৫) শীর্ষক প্রতিবেদনে নির্মম সত্যটি উঠে এল। অতিমারি-পরবর্তী পরিস্থিতিতে মানুষের হাতে কাঁচা টাকার যে অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে, তা রাজ্যের অনুদান প্রকল্পগুলি এবং কেন্দ্রের রেশনে বরাদ্দ বিনা পয়সার চাল-গমের হাত ধরে যে মেটানো যাচ্ছে না, তা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। রাজ্যে একশো দিনের প্রকল্পে টাকা নয়ছয়ের জন্য কেন্দ্র অর্থ দেওয়া বন্ধ করেছে। সব মিলে রাজ্যের এক শ্রেণির মানুষের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে। ২০১৮ এবং ২০১৯ সালের হিসাবে উচ্চবর্ণের শ্রমজীবীদের নিরিখে ৫৫ শতাংশ মজুরি জোটে দলিতদের। শহরাঞ্চলে শ্রমিকদের তুলনায় অর্ধেক আয় করেন গ্রামাঞ্চলের শ্রমিকেরা। এক জন পুরুষ শ্রমিক ১ টাকা রোজগার করলে মহিলা শ্রমিক পান ৬৩ পয়সা।

অনেক দিন ধরেই একশো দিনের কাজ এবং অর্থ বরাদ্দ নিয়ে আমরা কেন্দ্র এবং রাজ্যের তরজা শুনে আসছি। বিজেপি নেতাদের অভিযোগ, ভুয়ো মাস্টার রোল বানিয়ে পঞ্চায়েতগুলিতে টাকা লুট করছে তৃণমূল। আবার স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের দাবি, গত বিধানসভা ভোটে জিততে না পেরে বিজেপি রাজ্যের মানুষকে ভাতে মারতে চায়, তাই একশো দিনের কাজে অর্থ বন্ধ করেছে কেন্দ্র। গণতন্ত্রে শাসক-বিরোধীদের এই তরজা আমরা দেখতে অভ্যস্ত। কিন্তু প্রদীপের নীচে অন্ধকার হয়ে পড়ে-থাকা দরিদ্র মানুষের দুরবস্থার সুযোগে এক শ্রেণির লোক টাকার লোভ দেখিয়ে গ্রামবাসীদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিযুক্ত করছেন। সংবাদে প্রকাশ, কর্মচারী না পেলে গ্রামের গরিব লোকজনকে হুমকি দেওয়া কিংবা সাহায্যের নামে গরিবগুর্বো মানুষগুলিকে ঋণের জালে বেঁধে ফেলার ফন্দিও প্রয়োগ করেছিলেন খাদিকুলের অবৈধ বাজি কারখানার মালিক। এতে তৃণমূলস্তরে শাসকের গণসংযোগের দীনতার চিত্রটিই ফুটে ওঠে। সমাজের এই করুণ চিত্রগুলি সংবাদপত্রের প্রথম পৃষ্ঠায় ঠাঁই করে নেওয়ায় রাজ্যের শাসক যতটা অস্বস্তিতে পড়বেন, প্রাতিষ্ঠানিক গণতন্ত্রে আস্থাশীল মানুষ ততটাই ধন্দে পড়বেন।

সঞ্জয় রায়, দানেশ শেখ লেন, হাওড়া

জীবিকার দোহাই

পূর্ব মেদিনীপুরের এগরার খাদিকুল গ্রামে বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে ১১ জন মারা গেলেন। বাজি কারখানার মালিক কৃষ্ণপদ বাগ ওরফে ভানু খোলাখুলি এই বেআইনি কারখানা চালাতেন। গ্রামের মানুষ জীবন হাতে নিয়ে কাজ করতে বাধ্য হতেন। কেবল বেআইনি বাজি তৈরি হত না, বোমাও তৈরি হত ওই কারখানায়। এই সব তথ্যই সামনে এল বিস্ফোরণের পর।

আমাদের রাজ্যে বিগত এক দশক ধরে এটা রীতিতে দাঁড়িয়েছে যে, কোথাও কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে, মানুষের প্রাণ গেলে প্রশাসনের টনক নড়ে ও তৎপরতা দেখা যায়। কিছু দিন পর আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসে। এ ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম নেই। ঘটনা ঘটার পরেই প্রশাসনের পক্ষ থেকে মৃতের পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। মন্ত্রী ও দলের সাংসদকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। অথচ, এই বাজি কারখানাটা বেআইনি জেনেও প্রশাসন যদি আগে বন্ধ করে দিত, তা হলে এতগুলো গরিব গ্রামবাসীর প্রাণ যেত না। আমাদের রাজ্যে যে কোনও শব্দবাজি বেআইনি। অল্প কয়েকটি কারখানা ছাড়া সব বেআইনি। এমন বেআইনি বাজি কারখানাই এত দিন প্রকাশ্যে চালাচ্ছিলেন ভানু বাগ।

এখন বাজি তৈরির সঙ্গে যুক্ত লোকজনদের পেশাগত পুনর্বাসন করার কথা বলা হচ্ছে। সরকারের এক সাংসদ বলেন, ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের টাকা বন্ধ। তাই মানুষ জীবিকার প্রয়োজনে এ সব করতে বাধ্য হচ্ছেন। প্রশ্ন হল, ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের টাকা কম-বেশি দু’-তিন বছর বন্ধ। তা হলে দু’বছর আগে গ্রামের মানুষ কেন ওই বেআইনি বাজি কারখানাতে কাজ করতেন? এটা ব্যর্থতাকে চাপা দেওয়ার প্রয়াস ছাড়া আর কিছু নয়। যদি এই দুর্ঘটনা না ঘটত, তা হলে প্রশাসন এই রকম নির্দেশ দিত না, আর বেআইনি বাজি কারখানাও রমরমিয়ে চলত।

ইতিমধ্যে কেবল হুগলি জেলা থেকে ৭৮০ কেজি নিষিদ্ধ বাজি পুলিশ উদ্ধার করেছে। অন্য দিকে, ব্যারাকপুরের শিবদাসপুরে ৪৫ কিলোগ্রাম বেআইনি বারুদ এবং বাজি তৈরির অন্য বেশ কিছু সরঞ্জাম উদ্ধার হয়েছে। তবে এই তৎপরতা কত দিন বজায় থাকবে? প্রশাসনিক ব্যর্থতা, অবহেলা, নজরদারির অভাবে এই ধরনের ঘটনা রাজ্য জুড়ে ঘটেই চলেছে। দুর্ঘটনা ঘটার পর তৎপরতা না দেখিয়ে, প্রশাসনকে কড়া হাতে এই ধরনের কাজ দমন করতে হবে।

অপূর্বলাল নস্কর, ডোমজুড়, হাওড়া

শান্তি দিন

বগটুইতে দশ জন নিরীহ মানুষের নির্মম হত্যা এখনও টাটকা। আবার এ বছর ১৬ মে এগরার খাদিকুলে বিস্ফোরণে প্রাণ হারালেন এগারো জন। প্রশাসন কি ঘুমিয়ে ছিল? প্রকাশ্যে একটা নিষিদ্ধ বাজি কারখানায় বোমা বাঁধা হচ্ছিল, পুলিশ তার কোনও খবর রাখত না? পুলিশ চাইলে সব কিছু করতে পারে। কিন্তু তার টিকি বাঁধা উপর মহলে, যেখান থেকে সবুজ সঙ্কেত না পেলে পুলিশ কিছুই করবে না।

বাংলায় কি মানুষ প্রতিবাদ করবে না? রাজনৈতিক মতাদর্শের লড়াই এক জিনিস, আর ক্ষমতা দখলের জন্য আইনশৃঙ্খলা নিজেদের হাতে তুলে নেওয়া আর এক। মানুষ আজ আতঙ্কিত যে, আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে কত মায়ের কোল আবার খালি হবে? আমার প্রস্তাব— নির্বাচন না করে বিধানসভায় যে দলের যত আসন সেই সমানুপাতিক ভিত্তিতে পঞ্চায়েত বোর্ডের সদস্য বাছাই করে দেওয়া হোক। তা হলে অন্তত প্রাণহানি এড়ানো যাবে। বাংলার মানুষ খুনখারাপি দেখতে দেখতে ভারাক্রান্ত। রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন, রাজ্যে শান্তি বজায় রাখতে অক্ষম হলে পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী আনা হোক। মানুষ একটু শান্তি চায়। দয়া করে মানুষকে একটু শান্তি দিন।

কমল চৌধুরী, কলকাতা-১৪০

আরও পড়ুন
Advertisement