‘দেখার অনেক বাকি’ (২৪-১০) প্রবন্ধে পক্ষপাত রয়েছে। দেবাশিস ভট্টাচার্য প্রায় ৪২ বছর আগের জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের সঙ্গে বর্তমান জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনকে একই পাল্লায় মেপেছেন। এ ভাবে তিনি এই গণআন্দোলনকে কিছুটা স্তিমিত করার প্রয়াস করেছেন বলেই মনে হয়েছে। ১৯৮৩ সালে জুনিয়র ডাক্তারদের ধর্মঘটের সময়ে আমি ছিলাম নবম শ্রেণির ছাত্র। জেনেছিলাম, জুনিয়র ডাক্তারদের বেতন বাড়ানো, হাসপাতালে অত্যাবশ্যক ও জীবনদায়ী ওষুধের ঠিকঠাক সরবরাহ, ২৪ ঘণ্টা রক্ত পরীক্ষা, ব্লাড ব্যাঙ্ক চালু রাখা, এক্স-রে, ইসিজি-র বন্দোবস্ত, জুনিয়র ডাক্তারদের এই সব দাবি ছিল জনসাধারণের জন্য অত্যন্ত ন্যায্য দাবি। পরবর্তী কালে বাম সরকার সেই দাবিগুলি মেনে হাসপাতালে সেই সব ব্যবস্থা চালুও করেছিল। এ বারের আন্দোলন কি তাই? সরকারি হাসপাতালে দুর্নীতি, খুন-ধর্ষণ, হুমকি-প্রথা, হাসপাতালে সিন্ডিকেট, মেধাহীনদের ডাক্তারিতে ভর্তি, হাসপাতালে নিরাপত্তাহীনতা এবং দুর্বল পরিকাঠামোর বিরুদ্ধে জুনিয়র ডাক্তাররা আন্দোলন করছেন। মেডিক্যাল কলেজগুলিতে সুষ্ঠু নির্বাচনও রয়েছে তাঁদের দশ দফা দাবিতে।
এ কথা মনে রাখা প্রয়োজন যে, ৪২ বছর আগের জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে সাধারণ মানুষ যুক্ত ছিলেন না। সুতরাং, সে দিনের আন্দোলন আর আজকের আন্দোলন ভিন্নধর্মী। এবং যে যা-ই বলুক, এ বারের আন্দোলন এখনও পর্যন্ত ‘অরাজনৈতিক’ বলেই মনে করি। কারণ, এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন সর্বস্তরের, সব পেশার মানুষ। এমন মানুষও এসেছেন, যাঁরা কোনও দিন রাজনীতির আঙিনায় আসেননি, এক দিনের জন্যও মিছিল-মিটিংয়ে হাঁটেননি। এটাও দেখা গিয়েছে যে, বিভিন্ন দলের সমর্থকরা অরাজনৈতিক ভাবে ‘রাত দখল’ কর্মসূচিতে এবং দ্রোহের কার্নিভালে পা মিলিয়েছেন তিলোত্তমার সুবিচারের দাবিতে।
তাই প্রবন্ধকারের সূত্র ধরেই বলি, প্রয়াত জ্যোতি বসু বা অনিল বিশ্বাস কী করে গিয়েছেন, জানার দরকার নেই। জনগণ বামফ্রন্টকে তো শূন্য করে দিয়েছে। এখন যাঁরা ক্ষমতায় আছেন, তাঁরা আগামী দিনে কী করেন, সেটাই দেখার।
স্বপন আদিত্য কুমার বিশ্বাস, অশোকনগর, উত্তর ২৪ পরগনা
বিষবৃক্ষ
দেবাশিস ভট্টাচার্য চমৎকার ভাবে ডাক্তারদের আন্দোলনের বাস্তব প্রেক্ষাপট এড়িয়ে গিয়েছেন। ‘অনিলায়ন’-এর প্রসঙ্গ এনে বিষবৃক্ষ রোপণের শিক্ষা নেওয়ার কথা লিখেছেন। কিন্তু শিক্ষাক্ষেত্র, খাদ্য দফতর, স্বাস্থ্য দফতরে দুর্নীতির পাঠ বর্তমান শাসক কাদের কাছে পেলেন, এ বিষয়ে প্রবন্ধকার চুপ থেকেছেন। স্বাস্থ্য দফতরের দুর্নীতির যাঁরা হাতিয়ার, তাঁদের যে কোনও ভাবে বাঁচানোই যে সরকারের প্রধান কাজ ছিল, জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর আলোচনা থেকে এটা জলের মতো পরিষ্কার।
বাম শাসনের হুমকি, সর্বস্তরে রাজনীতিকরণের জন্য নেতৃত্বের একাংশের ভূমিকা নিশ্চয়ই সমালোচনার যোগ্য। তাই বলে যখন শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীদের দুর্নীতির নানা ছবি নানা সময়ে উঠে আসছে, সর্বোপরি যখন একটা প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির শিকার হলেন এক তরুণী চিকিৎসক, তখন এই প্রবন্ধে আর একটু বিশ্লেষণের প্রয়োজন ছিল বলে মনে করি।
আশীষ কুমার দাশগুপ্ত,কলকাতা-৬৪
অজানতে নয়
‘দেখার অনেক বাকি’ প্রবন্ধের শুরুতেই প্রবন্ধকার, যেন তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মতো করেই, বামফ্রন্ট সরকারের অপশাসনের উদাহরণ দিয়েছেন। কিন্তু মানুষ সেই অপশাসনের পরিবর্তন চেয়েছিল বলেই এই সরকারকে ক্ষমতায় এনেছিল! এখন কেন পুরনো কাসুন্দির গন্ধ আমরা শুঁকব? যে লাইভ স্ট্রিমিং-এর জন্য প্রথম দিন জুনিয়র ডাক্তারদের বৃষ্টির মধ্যে তিন ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে ফেরত পাঠানো হল, এবং বলা হল সাবজুডিস ম্যাটার বলে লাইভ স্ট্রিমিং হবে না, আবার সেই একই বিষয় কোন মন্ত্রবলে লাইভ স্ট্রিমিং হল? এটা স্বৈরাচার নয়?
সে দিনের মিটিংয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর জি করের অধ্যক্ষকে রীতিমতো ধমকেছেন যে, কেন তিনি হুমকি-প্রথার সঙ্গে যুক্ত ৪৭ জন ছাত্রকে বহিষ্কার করেছেন স্বাস্থ্য ভবনকে না জানিয়ে। স্বাস্থ্য ভবনকে না জানিয়ে কিছু করা যাবে না। তা হলে এই প্রশ্নটি কি স্বাভাবিক নয় যে, নিশ্চয়ই আগের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ যা করতেন সব স্বাস্থ্য ভবনকে জানিয়ে করতেন। হয়তো সেই জন্যই তাঁকে কখনও ধমক তো খেতেই হয়নি, উপরন্তু বার বার পুরস্কৃত করা হয়েছিল।
সাগ্নিক হালদার, হাবড়া, উত্তর ২৪ পরগনা
তিরাশির ছায়া
দেবাশিস ভট্টাচার্য লিখেছেন, পুরনো কাসুন্দি ঘাঁটতে ইচ্ছে হয়। ১৯৮৩ সালে ডাক্তারদের ধর্মঘট চলাকালীন ডাক্তার প্রতিনিধিদের বৈঠকে জ্যোতি বসু বলেছিলেন, “আপনারা সীমা ছাড়াচ্ছেন। বিপদে পড়বেন। আগে স্ট্রাইক তুলুন, বাকি পরে। আমার কথা শেষ।” ছোট ছোট বাক্যে জ্যোতি বসুর ভাবপ্রকাশের অভ্যাস সর্বজনবিদিত। তবে সে দিন জুনিয়র ডাক্তারদের যে সব দাবি ছিল, সেগুলো যে কোনও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তোলা হয়ে থাকে। তার মোকাবিলা করতে লাঠি চার্জ, জেল ইত্যাদি হয়েছিল। কিন্তু জুনিয়র ডাক্তারদের বর্তমান আন্দোলনের চরিত্র ভিন্ন। এক ডাক্তার ছাত্রীর হত্যার বিচারের দাবিতে আন্দোলন শুরু হলেও ক্রমশ সেই আন্দোলন দুর্নীতি, হুমকি-প্রথার বিরোধিতায় সরব হয়েছে। যুক্ত হয়েছে সীমাহীন দুর্নীতির জন্য সমাজের নানা স্তরের নাগরিকদের ক্ষোভ।
এই আন্দোলন শুধুমাত্র পরিষেবার মানোন্নয়নের জন্য নয়, তার লক্ষ্য অভয়ার বিচার এবং একটি ঘুণ-ধরা ব্যবস্থার আমূল সংস্কার। আর জি কর কাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত অপরাধীদের শাস্তি দান এবং বরখাস্ত নিশ্চিত করার জন্য এই লড়াই। এর অভিঘাত সুদূরপ্রসারী। প্রশাসনের সঙ্গে জুনিয়র ডাক্তারদের বৈঠকের লাইভ সম্প্রচারে দেখা গেল, জুনিয়র ডাক্তাররা প্রশাসনিক প্রধানকে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করেও তাঁর চোখে চোখ রেখে, যুক্তি দিয়ে দুর্নীতি এবং হুমকি সংস্কৃতির বিষয়গুলি তুলে ধরেছেন। প্রশাসন কিন্তু অভিযুক্তদের কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা করতে অপারগ। এমনকি অভিযুক্তদের বহিষ্কার করে কলেজ কর্তৃপক্ষ ‘হুমকি সংস্কৃতি’-কে প্রশ্রয় দিয়েছেন, এমনও অভিমত প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী। ১৯৮৩-র জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনকে জ্যোতি বসু যে ভাবে মোকাবিলা করেন, সে ভাবে আজকের আন্দোলনকে মোকাবিলা করা মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষে কি সম্ভব?
দেবব্রত সেনগুপ্ত, কোন্নগর, হুগলি
‘শিশুশ্রম’
বর্তমানে রুপোলি পর্দায় রিয়্যালিটি শো এবং বিভিন্ন বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানে শিশুশিল্পীর চাহিদা অত্যধিক বেড়ে গিয়েছে। পর্দার জৌলুস, কাঁচা পয়সা এবং প্রতিযোগিতার তীব্র ইচ্ছা শিক্ষার ভিতটিকে নড়বড়ে করে দিচ্ছে। এর জন্য সম্পূর্ণ রূপে দায়ী আমরা বড়রা। শিশুরা নিয়মিত স্কুলে যেতে পারে না। কেড়ে নেওয়া হচ্ছে তাদের শৈশবের উচ্ছলতাও। ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরে আবার পরের দিনের প্রস্তুতি নেওয়া কোনও অংশে ‘শিশুশ্রম’-এর চেয়ে কম নয়।
বিজুরিকা চক্রবর্তী,দমদম, কলকাতা