ব্রিজভূষণ সিংহের (বাঁ দিকে) বিরুদ্ধে পদকজয়ী সাক্ষী মালিক (মাঝখানে), বিনেশ ফোগটেরা (ডান দিকে) যে ভাবে আন্দোলনে নেমেছেন, এমনটা দেশের খেলাধুলার ইতিহাসে কখনও দেখা যায়নি। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
বয়স ছেষট্টি। দেখে যদিও বোঝার বিশেষ উপায় নেই। চুল-দাড়ি কালো এবং ঘন। নির্ঘাত কলপ। ছেষট্টিতে কারও চুল-দাড়ি কি আর আলকাতরার মতো কালো থাকতে পারে! পরনে ধুতি-কুর্তা। গলা থেকে ঝুলছে উত্তরীয় আর একাধিক রোগা-মোটা স্বর্ণহার (গৌরবার্থে ‘চেন’। যা ‘দাদাগিরি’র অব্যর্থ সূচক)। ঘাড়ে-গর্দানে চেহারা। কপালে সিঁদুরের ফোঁটা (লম্বা ‘টিকা’ নয়, এক আঙুলের ডগায় লাগানো ফোঁটা)। চওড়া কব্জি। হাত ঘোরালে পাঞ্জাটা থাবার মতো লাগে। বাঁ হাতের মণিবন্ধে সোনালি রঙের ধাতব স্ট্র্যাপের অল মেটাল ঘড়ি। ডান হাতের কব্জিতে কালো কারের সঙ্গে ঝকঝক করছে সোনার বালা। ডান হাতের তিন আঙুলে তিনটি পাথর-বসানো আংটি, একই রকম ঝকঝকে।
হুবহু ‘বাহুবলী’! অবশ্য ভারতের যে প্রান্তে তিনি রাজনীতি করে করে এই এত বড়টি হলেন, সেখানে হাঁকের লোক, ডাকের লোক, দাপের লোক না-হলে কল্কে পাওয়া যায় না। আশ্চর্য নয় যে, তিনি নিজেও নিজেকে অহরহ সেই শিরোপাতেই ভূষিত করে থাকেন— বাহুবলী! তিনি নিজেকে ‘শক্তিশালী’ও (ডাকাবুকো কুস্তিগিরদের যে আনুষ্ঠানিক উপাধি দেওয়া হয়) বলেন বটে। আরও বলেন, তিনি ‘গুন্ডো কা গুন্ডা’। অর্থাৎ, গুন্ডাদেরও গুন্ডা!
১৯৯১ সাল থেকে তিনি লোকসভার সাংসদ। উত্তরপ্রদেশের গোন্ডা লোকসভা কেন্দ্র থেকে বিজেপির টিকিটে প্রথম নির্বাচিত। ২০০৪ সালে বিজেপি ছেড়ে মুলায়ম সিংহ যাদবের সমাজবাদী পার্টিতে গিয়েছিলেন। ২০০৯ সালে সমাজবাদী পার্টির টিকিটে জিতেওছিলেন। তবে তাল বুঝে ২০১৪ সালের আগে আবার বিজেপিতে ফিরে আসেন। জেতেন। আপাতত তিনি উত্তরপ্রদেশের কায়সরগঞ্জ লোকসভার বিজেপি সাংসদ। টুইটার বায়োর কভার ছবিতে যিনি হাস্যমুখে দাঁড়িয়ে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর পাশে। নট ব্যাড। নট ব্যাড অ্যাট অল।
টানা ছ’বারের লোকসভা সাংসদ তিনি। পাঁচ বারই বিজেপির টিকিটে। আশ্চর্য নয় যে, বিজেপি তাঁকে ‘সম্পদ’ মনে করে। ১৯৭৪ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত তাঁর নামে নয়-নয় করে ৩৮টি মামলা ছিল। তবে ‘টুপির পালক’ নিঃসন্দেহে ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের দায়ে সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হওয়া (ওই মামলায় প্রথম যে ৩৯ জন গ্রেফতার হন, তিনি তাঁদের মধ্যে এক জন)। গ্রেফতার হয়েছেন সন্ত্রাসবাদ বিরোধী আইন ‘টাডা’তেও। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল মুম্বইয়ের জে জে হাসপাতালে গুলিচালনার পরে সেই ঘটনায় অভিযুক্ত দাউদ ইব্রাহিমের গ্যাংয়ের লোকজনকে আশ্রয় দেওয়ার। পরে অবশ্য প্রমাণের অভাবে বেকসুর খালাস পান। খুন, খুনের চেষ্টা, খুনের হুমকি, অপহরণ, চুরি-ডাকাতি— কী কী সব অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে! যদিও তাঁর নির্বাচনী হলফনামা বলছে, সমস্ত অভিযোগ থেকেই তিনি খালাস পেয়ে গিয়েছেন।
জন্ম রাজপুত পরিবারে। জাতিতে ক্ষত্রিয়। অযোধ্যার কলেজে আইনশাস্ত্র নিয়ে পড়াশোনা। কালক্রমে তিন পুত্র এবং এক কন্যার জনক। ২০০৪ সালে তাঁর বড় ছেলে একটি লাইসেন্সড রিভলভার দিয়ে নিজেকে গুলি করে আত্মঘাতী হন। তেইশ বছরের আত্মজ তাঁর সুইসাইড নোটে লিখে গিয়েছিলেন, বাবার ‘স্বার্থপর’ মনোভাবই তাঁকে আত্মহননের পথে ঠেলে দিল। স্ত্রী গোন্ডা জেলার পঞ্চায়েতের সভানেত্রী। আরেক পুত্র গোন্ডা (সদর) বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক।
এই পর্যন্ত ঠিকই আছে। কিন্তু তিনি আবার ভারতীয় কুস্তি ফেডারেশনের সভাপতিও। যে সভাপতির বিরুদ্ধে যৌননিগ্রহ এবং হেনস্থার অভিযোগ এনেছেন দেশের নামজাদা মহিলা কুস্তিগিরেরা। যা নিয়ে দেশ উত্তাল। যা নিয়ে দেশ কার্যত দ্বিধাবিভক্তও বটে। কেউ ছি-ছি করছেন। কেউ বলছেন, ছোঃ! এ সব হল রাজনীতি। কুস্তিগিরেরা রাজনীতির দাবাখেলায় ‘বোড়ে’ হয়ে গিয়েছেন।
হতে পারে। না-ও হতে পারে। ঘটনা হল, বেশ কয়েক জন মহিলা কুস্তিগির অভিযোগ করেছেন, ‘প্রশিক্ষণ’ ইত্যাদির নামে ‘বাহুবলী’ বিভিন্ন নাবালিকা এবং সাবালিকা কুস্তিগিরের সঙ্গে যা-যা করেছেন, তা আদতে যৌননিগ্রহ। ট্রেনিং দেওয়ার নামে যে ভাবে বালিকা বা মহিলা কুস্তিগিরদের দেহের বিভিন্ন অংশ ছুঁয়েছেন, তার মধ্যে অপাপবিদ্ধতা ছিল না। ২০১২ সাল থেকে ২০২২— দশ বছর ধরে বিভিন্ন স্তরে, দেশে এবং বিদেশে সেই ‘নিগ্রহ’ চলেছে। সেই সূত্রেই কুস্তির সংগঠনের শীর্ষপদ থেকে তাঁর ইস্তফা এবং তাঁকে গ্রেফতারের দাবিতে গত জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে কুস্তিগিরদের আন্দোলন। যা এখনও চলছে।
কুস্তিতে ম্যাট-পূর্ব যুগে গোন্ডা জেলায় নিজের পকেটের পয়সা দিয়ে একের পর এক ‘দঙ্গল’ আয়োজন করেছেন তিনি। নিজেও একটা সময় আখড়ায় মাটি মেখে কুস্তি লড়তেন। তবে স্থানীয় পর্যায়ের বেশি এগোতে পারেননি। কিন্তু কুস্তি নিয়ে তাঁর একটা ‘ব্যক্তিগত ঐতিহ্য’ আছে। এক, সেই পটভূমি এবং দ্বিতীয়ত, কুস্তিগিরেরা এমনিতেই খানিক ‘বেয়াড়া’ হন। তাঁদের সামলাতে আরও ‘বেয়াড়া’ লোকের দরকার বলে কুস্তি ফেডারেশনের সভাপতির পদে তাঁকে আনা হয়েছে। নিজেই ঘোষণা করেছিলেন তিনি।
রাঁচীতে অনূর্ধ্ব-১৫ জাতীয় কুস্তির আসরে সর্বসমক্ষেই এক কুস্তিগিরকে সপাটে চড় কষিয়েছিলেন। তা নিয়ে কোনও তাপ-উত্তাপ দেখা যায়নি তাঁর মধ্যে। পরে প্রশ্ন করায় বলেছিলেন, ‘‘বাচ্চা ছেলেটা বার বার বলছিল, নন্দনপুর থেকে এসেছে। তা আমি ওকে প্রথমে বললাম, বেটা, তুই নন্দনপুর থেকে এসেছিস তো আমি কী করব! যে ভাল লড়বে, সে জিতবে। তা-ও কানের কাছে বকবক করছিল। মেজাজটা চড়ে গেল! কী করব? আপনার বাড়ির বাচ্চা বদমায়েশি করলে আপনি কি দু’ঘা দেন না?’’
ঠিকই। অকাট্য যুক্তি। কিন্তু ‘বাহুবলী’কে কে বোঝাবে, উত্তরপ্রদেশের গ্রামের পঞ্চায়েতি মোড়লগিরি জাতীয় ক্রীড়ার আসরে চলে না।
২০২৩ সালের ২৩ জানুয়ারি নয়াদিল্লির যন্তর মন্তরে কুস্তিগিরেরা প্রথম প্রতিবাদ-ধর্নায় বসেন। তখনই তাঁরা প্রথম প্রকাশ্যে ‘বাহুবলী’র বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ করেন। কেন্দ্রীয় সরকার তাঁদের আশ্বাস দেয়, অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্য কমিটি তৈরি হবে। আশ্বাস পেয়ে কুস্তিগিরেরা অবস্থান তুলেও নেন। ৫ এপ্রিল সরকার-নিযুক্ত কমিটি তাদের রিপোর্ট জমা দেয়। কিন্তু সেটি প্রকাশ্যে আনা হয়নি। ২৩ এপ্রিল থেকে কুস্তিগিরেরা আবার ধর্না শুরু করেন। অভিযোগ করেন, সরকারি কমিটি তাঁদের কাছে যৌন হেনস্থার প্রমাণ হিসেবে অডিয়ো এবং ভিডিয়ো টেপ চেয়েছে। ঠিক যে কথাটা বুক ঠুকে বলছেন তিনি। বলছেন, ‘‘একটাও অডিয়ো-ভিডিয়ো প্রমাণ দেখাতে পারবেন?’’ আরও বলছেন, ‘‘গত ১০ বছরে কেন কেউ এই অভিযোগগুলো তোলেনি? হরিয়ানার ভোট এগিয়ে আসছে বলে এ সব বলা হচ্ছে!’’
ঠিকই। কিন্তু কে তাঁকে বোঝাবে, যৌননিগ্রহ করা হবে ভেবে কেউ গোপন ক্যামেরা বা অডিয়ো রেকর্ডার নিয়ে কারও ঘরে ঢোকে না! দ্বিতীয়ত, ক্ষমতাধর এবং প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে সাধারণত কেউ অভিযোগ করে না। তৃতীয়ত, শিশু সুরক্ষা (এ ক্ষেত্রে নাবালিকা নিগ্রহ) আইনে বলা আছে, অপরাধের যত দিন পরেই অভিযোগ করা হোক না-কেন, সেই অভিযোগের গুরুত্ব কমে না।
তিনি আরও বলছেন, ‘‘হরিয়ানার কংগ্রেসি রাজ্যসভা সাংসদ দীপেন্দ্র সিংহ হুডা রয়েছেন কুস্তিগিরদের এই আন্দোলনের পিছনে। পুরোটাই রাজনীতির খেলা।’’
রাজনীতি? হতে পারে। আমাদের এই পোড়া দেশ রাজনীতি বাদ দিয়ে কি কোনও কিছুই করতে পারে! হতে পারে এটা জাঠ বনাম ক্ষত্রিয় লড়াই। হতে পারে এটা হরিয়ানার রাজনৈতিক দখল নিয়ে বিজেপি বনাম কংগ্রেসের লড়াই। কিন্তু সে বিধানসভা নির্বাচন তো ২০২৪ সালের অক্টোবরে! তার আগে দেশে একটা সাধারণ নির্বাচন হয়ে যাবে। চুলোয় যাক রাজনীতি! এটা অস্বীকার করি কী করে যে, এর আগে ভারতে ক্রীড়াবিদেরা কখনও এত বড় আন্দোলন করেননি। যে আন্দোলনের সামনের সারিতে রয়েছেন আন্তর্জাতিক স্তরে সফল মহিলা কুস্তিগিরেরা। সবে সবে এ দেশের মহিলারা কমনওয়েল্থ বা এশীয় স্তরের খেলায় ধারাবাহিক ভাবে ভাল ফল করতে শুরু করেছেন। একজন সাক্ষী মালিক, একজন বিনেশ ফোগট, একজন পিভি সিন্ধু বা সাইনা নেহওয়ালের হাত ধরেই আন্তর্জাতিক স্তরে ভারত সম্মান পেয়েছে। ইতস্তত এবং বিক্ষিপ্ত কিছু মনে রাখার মতো পারফরম্যান্স থাকলেও এই পর্যায়ে এতখানি সাফল্য মহিলা ক্রীড়ায় এর আগে এই দেশে আসেনি।
আরও একটা বিষয় এই দেশে কখনও হয়নি। আন্তর্জাতিক সম্মান এনে-দেওয়া ক্রীড়াবিদদের দেশের রাজধানীর রাজপথ ধরে টেনে-হিঁচড়ে-ছেঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে উর্দিধারী পুলিশ— এ জিনিস আগে কখনও দেখেনি এই দেশ। দেখেনি, সেই রাগে-অপমানে তাঁরা চোখের জলে ভাসতে ভাসতে দেশের হয়ে জেতা পদক ভাসিয়ে দিতে যাচ্ছেন গঙ্গায়!
দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল, নিতান্তই অকিঞ্চিৎকর নিজের খেলাধুলোর ইতিহাস। কিন্তু সেই স্কুলজীবন থেকে পাওয়া প্রতিটা মেডেল, প্রতিটা ট্রফি কত যত্নে, কত আদরে, কত মমতায় রেখে দিয়েছি। সে স্কুলের বার্ষিক ফুটবল লিগই হোক বা আনন্দবাজার অনলাইনের হয়ে শপিং মলের ছাদের উপর মশারি-ঘেরা একচিলতে ম্যাটের উপর ‘টার্ফ ক্রিকেট’। এ শহর থেকে সে শহরে ঠাঁইনাড়া হতে হয়েছে কাজের কারণে। কত কিছু ফেলে এসেছি ভুলে, না-ভুলে। কিন্তু প্রাণে ধরে পদক আর ট্রফিগুলো ফেলে দিতে পারিনি। মাঝেমধ্যে যখন ব্রাসো দিয়ে ঘষে ঘষে চকচকে করি, মনে পড়ে সেগুলোর সঙ্গে মাখামাখি পরিশ্রম, সাফল্য আর গর্বের কাহিনি। প্রতিটা পদক, প্রতিটা ট্রফি একটা করে গল্প বলে। আজীবন বলবে।
মনে হচ্ছিল, যাঁরা বলছেন, সাক্ষী-বিনেশদের আন্দোলনের মধ্যে শুধুই রাজনীতি আছে, তাঁদের কেউ কোনও দিন কি নিজের পাড়ার মঞ্চে দাঁড়িয়েও সমবেত করতালির মধ্যে গলায় সাফল্যের পদক পরেছেন? তাঁরা কি সত্যিই জানেন, কোন অবমাননায় আজীবনের গর্বের সূচক ধুলোয় ফেলে দিতে চায় কেউ! যে মুহূর্তে সাক্ষী-বিনেশরা তাঁদের সাফল্যের পদক পরেছিলেন, সেই মুহূর্তে সেই গরিমার শরিক তো আমিও ছিলাম। আমরাও ছিলাম। আমাদের সেই গরিমাই তো গঙ্গার জলে ভেসে যেতে বসেছিল!
মনে হচ্ছিল, যে বিনেশ ফোগট যন্তর মন্তরে আন্দোলনে বসেছিলেন, তাঁর ইতিহাস রয়েছে টোকিয়ো অলিম্পিক্সে সহ-কুস্তিগিরদের সঙ্গে ট্রেনিং না করার এবং অলিম্পিক্সে দেশের জার্সি না-পরার দায়ে সাসপেন্ড হওয়ার এবং পরে ক্ষমা চেয়ে অব্যাহতি পাওয়ার। ছুটকোছাটকা শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ কখনও-সখনও উঠেছে বিনেশের সহ-আন্দোলনকারিণী সাক্ষী মালিকের বিরুদ্ধেও। সেই সত্য প্রণিধানযোগ্য। কিন্তু তার চেয়েও বেশি সত্যি হল এই যে, বিনেশ ফোগট হলেন প্রথম ভারতীয় মহিলা কুস্তিগির, যিনি কমনওয়েল্থ এবং এশিয়ান গেম্সে সোনা জিতেছিলেন। সাক্ষী মালিক হলেন প্রথম ভারতীয় মহিলা কুস্তিগির, যিনি অলিম্পিক্স পদক জিতেছিলেন। অনেক সত্যতর সেই মুহূর্তগুলো, যেখানে আলোয় ভেসে যাচ্ছে চারদিক। ভিকট্রি স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে কোনও এক সাক্ষী মালিক বা এক বিনেশ ফোগট। গলায় ঝলমলে পদক। ‘জনগণমন’র সুরে উঁচুতে, আরও উঁচুতে উঠে যাচ্ছে জাতীয় পতাকা।
মনে হচ্ছিল, সচরাচর সামান্য কোনও টুইটের ভিত্তিতে মামলা শুরু করে-দেওয়া দিল্লি পুলিশের এই ‘বাহুবলী’র বিরুদ্ধে অভিযোগ নিতে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন হল কেন! কেন এত দিন পরে গিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলল পুলিশ! যে লোকের এই ইতিহাস, এই পটভূমি, এই চলনবলন, এই রাহানসাহান, আইনের বাইরে গিয়ে তাঁকে এত দিন এতখানি সাহায্য করা হচ্ছিল কেন?
মনে হচ্ছিল, গোটা দেশের চোখের সামনে একটা সামাজিক মন্থন শুরু হয়েছে। যেখানে কৃষকেরা মহিলা ক্রীড়াবিদদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। সাধুসন্তেরা দাঁড়িয়ে পড়েছেন বিজেপির ‘বাহুবলী’ সাংসদের সমর্থনে। এই দেশ এখন দেখছে কৃষক বনাম সাধুর লড়াই। ক্রীড়াবিদ বনাম পুলিশের প্রকাশ্য ‘দঙ্গল’। এ জিনিস এ দেশে এর আগে কখনও হয়নি।
মনে হচ্ছিল, শাসকের মধ্যে এক ধরনের চারিত্রিক দৃঢ়তা থাকতে হয়। যে অন্তর্ভেদী দৃষ্টি বলে, আমি কারও পক্ষ নেব না। সেই দৃষ্টি কি আর নেই? রাজধানীর রাজপথে চ্যাম্পিয়ন কুস্তিগিরদের চ্যাংদোলা করে তুলে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। সমাজ এক ধরনের জটিল বিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তার দিকে কি আমরা তাকাচ্ছি?
মনে হচ্ছিল, তাঁর বিরুদ্ধে যৌননিগ্রহের অভিযোগের তদন্তকারী কমিটির এক সদস্য নাকি বলেছেন, গোন্ডার ‘বাহুবলী’ যা যা করেছিলেন, সবই একজন ‘ফাদার ফিগার’ হিসেবে। পিতার মতো ব্যবহার। তবে পিতার হাতে কন্যার নিগৃহীত হওয়ার ইতিহাসও তো আছে। দেশে এবং বিদেশেও।
বাপু! তবে ক্ষতিকারক, হানিকারক বাপু।