বিরোধী কণ্ঠ রোধ করলে দেশের ক্ষতি, কারণ তাতে ভুল সংশোধনের উপায় থাকে না। একান্ত সাক্ষাৎকারে বললেন রঘুরাম রাজন
Raghuram Rajan Interview

গণতন্ত্রের সুদিন ফিরবে, সে আশা ছাড়ার কারণ নেই

বছরে সাত শতাংশ বৃদ্ধির হারকে কোনও ভাবেই খারাপ বলা যাবে না। কিন্তু, ভারতে অপুষ্টির হার কত? ৩৫ শতাংশ। সেটা অনেক বড় দুঃসংবাদ।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:২৪
বিপর্যস্ত: দেশজোড়া লকডাউন চালু হওয়ার পরে হেঁটে বাড়ি ফিরতে বাধ্য হয়েছিলেন অসংখ্য পরিযায়ী শ্রমিক।

বিপর্যস্ত: দেশজোড়া লকডাউন চালু হওয়ার পরে হেঁটে বাড়ি ফিরতে বাধ্য হয়েছিলেন অসংখ্য পরিযায়ী শ্রমিক। —ফাইল চিত্র।

প্রশ্ন: আপনার সদ্য প্রকাশিত বই ব্রেকিং দ্য মোল্ড: রিইম্যাজিনিং ইন্ডিয়া’জ় ইকনমিক ফিউচার (পেঙ্গুয়িন)-এ আপনি লিখেছেন, নরেন্দ্র মোদীর সরকার তার আর্থিক ব্যর্থতাগুলিকেও এমন ভাবে প্রচার করেছে যে, মনে হয় সেগুলো আসলে সাফল্য। আরও অনেকেই বলেছেন যে, গত দশ বছরে এই সরকারের মূল কৃতিত্ব হল অপটিকস তৈরি করতে পারা, যে কোনও ঘটনাকেই নিজেদের সাফল্য হিসাবে দেখাতে পারা। আসলে সাফল্যের ভাগ কতটুকু?

Advertisement

উত্তর: সাফল্য যে একেবারেই নেই, তা বলছি না। উদাহরণ হিসাবে পরিকাঠামো ক্ষেত্রের কথা বলা যায়। সেখানে যে উন্নতি হয়েছে, সেটা সরকার না বলে দিলেও মানুষের চোখে পড়বে। কিন্তু, যা করেছি তার সবটাই সফল, সবটাই দেশের উপকারে লেগেছে, এই দাবি করলে মুশকিল। প্রথম কথা হল, তাতে সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হয়— সরকারের যে কোনও কৃতিত্বের দাবিতেই অন্তত কিছু মানুষের সন্দেহ হয় যে, সরকার সত্যি কথা বলছে না। এমন পরিস্থিতি তো কাম্য হতে পারে না। তা ছাড়া, যে কোনও আধুনিক সরকারের কর্তব্য নিজের ভুল থেকে শেখা। সমালোচকদের কথায় গুরুত্ব দেওয়া। কোনও সরকার যদি দাবি করে যে, তাদের কিছু শেখার নেই, তারা যা করছে সবটাই ঠিক, যদি সরকার সমালোচকদের প্রতি খড়্গহস্ত হয়, তা হলে ভুল সংশোধনের জায়গাটাই আর থাকে না। কোনও সমালোচনা সহ্য করতে না পারা, যে কোনও সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে চূড়ান্ত গোপনীয়তা দেখলে সন্দেহ হয়, আসলে এই সরকার শুধুই ধোঁকার টাটি খাড়া করছে না তো? ব্যর্থতার কথা ঢাকার জন্যই কি এমন রাখঢাক? এই সন্দেহ অর্থব্যবস্থার স্বাস্থ্যের পক্ষে ইতিবাচক নয়।

নোট বাতিল এবং কোভিড লকডাউনের কথা আমরা এই বইয়ে বলেছি— যদি একতরফা কেন্দ্রীয় ভাবে, কোনও ঐকমত্যে পৌঁছনোর চেষ্টা না করেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তবে তাতে ভুলের সম্ভাবনা স্বাভাবিক ভাবেই বাড়ে। বলতে পারেন যে, নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের আগে গোটা দেশে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা অসম্ভব ছিল— তা হলে সরকারের উদ্দেশ্যটাই ব্যর্থ হত। কিন্তু, এত বড় একটা সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে অন্তত বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করা উচিত ছিল, তাঁদের মতামত নেওয়া উচিত ছিল। অতিমারির মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে এবং লকডাউনের ক্ষেত্রে সব দেশই অনেক রকম ভুল করেছিল। ভারতও করেছিল। কিন্তু, সেই ভুল যদি স্বীকারই না করা হয়, যদি সরকার শুধুই সাফল্যের দাবি করতে থাকে, তা হলে ভুলের ক্ষেত্রগুলিও চিহ্নিত করা যায় না, তার থেকে শিক্ষা নেওয়ারও পথ থাকে না। বিভিন্ন নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষক সংস্থার হিসাব বলছে, ভারতে কোভিডে যত জন মারা গিয়েছেন বলে কেন্দ্রীয় সরকার স্বীকার করেছে, প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা তার দশ গুণ। যদি সত্যিই পঞ্চাশ লক্ষ মানুষ কোভিডে মারা গিয়ে থাকেন, তা হলে কি সেটা জানার অধিকার দেশবাসীর নেই? সরকারকেও তো জানতে হবে যে, অতিমারির কোন পর্যায়ে বেশি মানুষ মারা গেলেন, কেন মারা গেলেন, কোথায় খামতি ছিল। ভারতে অতিমারির প্রথম প্রবাহে মৃতের সংখ্যা কম দেখানো হল। তার ফলে সরকারের ধারণা হল যে, এই অতিমারিতে ভারতের কোনও বিপদ হতে পারে না, আমাদের সম্পূর্ণ ভাবে প্রস্তুত। তার ভয়ঙ্কর প্রভাব পড়ল দ্বিতীয় প্রবাহের সময়। আমরা অপ্রস্তুত অবস্থায় সেই পর্যায়ে প্রবেশ করলাম, ফলে প্রাণহানির সংখ্যা বাড়ল।

প্র: অতিমারির সময়ে টেলিভিশনে এক পরিযায়ী শ্রমিকের সাক্ষাৎকার দেখেছিলাম। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, এই দুর্দশার জন্য কি তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে দোষী ভাবেন? তিনি বললেন, না, কারণ প্রধানমন্ত্রী সবই করছেন। এটা কি আশ্চর্য নয় যে, সমস্ত বিশ্লেষণ যেখানে প্রধানমন্ত্রীর অবিবেচনার দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করছে, সেখানে সেই অবিবেচনার বোঝা যাঁদের সবচেয়ে বেশি বইতে হল, তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর দোষ দেখতে পেলেন না? এই ভাবমূর্তি কী ভাবে তৈরি করা সম্ভব?

উ: এই প্রশ্নের উত্তর জানা থাকলে তো হয়েই যেত! তবে শুধু নরেন্দ্র মোদী নন, বিভিন্ন পর্যায়ে একাধিক নেতা এমন ভাবমূর্তি তৈরি করতে পেরেছিলেন। আমেরিকায় রোনাল্ড রেগনের এই রকম একটা ভাবমূর্তি ছিল, যেখানে সব সাফল্যের কৃতিত্ব তাঁর, কিন্তু কোনও ব্যর্থতারই দায় তাঁর নয়। ভারতে বাংলাদেশ যুদ্ধের পর থেকে জরুরি অবস্থার আগে অবধি ইন্দিরা গান্ধীরও এমন ভাবমূর্তি ছিল। এটা বেশ যত্ন করে তৈরি করতে হয়, মানুষকে ক্রমাগত বুঝিয়ে যেতে হয় নেতার মাহাত্ম্য।

প্র: বিজেপি এখন ভারতের অর্থনৈতিক সাফল্য নিয়ে ঢাকঢোল পেটাচ্ছে। মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জিডিপি) নিরিখে ভারত দুনিয়ার পঞ্চম বৃহত্তম অর্থব্যবস্থা হয়ে উঠেছে বলে গর্ব প্রকাশ করছে। মজার কথা হল, গত পাঁচ বছরে দেশের যে সব মানুষের আয় বাড়েনি, অনেক ক্ষেত্রে কমেছে, তাঁরাও ভারতের ‘সাফল্যে’ গর্বিত হচ্ছেন। মাথাপিছু আয়ের হিসাবে গোটা দুনিয়ায় ভারতের অবস্থান ১৪০তম, কোভিডের আগে থেকেই আয়বৃদ্ধির হার নিম্নমুখী। গ্রামাঞ্চলে প্রকৃত ভোগব্যয় কমেছে, বেকারত্ব মাঝেমধ্যেই ভয়াবহ হয়ে উঠছে। প্রশ্ন হল, যে মানুষগুলো প্রত্যক্ষ ভাবে এই অবস্থার শিকার, তাঁদেরকেও কী ভাবে ভারতের আর্থিক মহাশক্তি হয়ে ওঠার গল্পে বিশ্বাস করিয়ে ফেলা গেল?

উ: এই প্রশ্নটা আমাদের বইয়ে আছে, তবে স্বীকার করতেই হবে যে, তার কোনও সন্তোষজনক উত্তর আমরা খুঁজে পাইনি। এটা খুব সত্যি যে, ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির সুফল সবার কাছে সমান ভাবে পৌঁছয়নি। উচ্চবিত্ত এবং উচ্চমধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রভূত উন্নতি হয়েছে, কিন্তু তার নীচে যাঁরা আছেন, তাঁদের অবস্থা ভাল নয়। ভোগব্যয়ের প্রায় সব সূচকই এক কথা বলছে। খবরের কাগজের শিরোনাম পড়লে মনে হবে যে, ভারতীয় অর্থব্যবস্থা খুব ভাল ভাবে চলছে। কিন্তু তা তো নয়— নরেন্দ্র মোদীর শাসনের এক দশকে আর্থিক বৃদ্ধির হার তার আগের এক দশকের তুলনায় তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে কম। এবং, তার জন্য কোভিডের দিকে আঙুল তোলা যাবে না— অতিমারির আগের পর পর চার বছরে আর্থিক বৃদ্ধির হার তার আগের বছরের তুলনায় কম ছিল। ভারত খুব ভাল ভাবে অতিমারি সামলেছে বলে সরকার গর্ব করে। কিন্তু কোভিড না এলে, অর্থাৎ অতিমারি-পূর্ব বৃদ্ধির হার বজায় থাকলে ভারতীয় অর্থনীতি এত দিনে যেখানে পৌঁছত, ভারত এখনও সেখানে পৌঁছতে পারেনি। অর্থাৎ, অতিমারির ধাক্কা অর্থব্যবস্থাকে এখনও বয়ে চলতে হচ্ছে। অন্য অনেক দেশই কিন্তু এই ধাক্কা অতিক্রম করে গিয়েছে। কিন্তু, তার পরও প্রচার চলছে যে, ভারতীয় অর্থব্যবস্থার বৃদ্ধির হার রীতিমতো চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়ার মতো।

তবে, বলব যে, বাৎসরিক বৃদ্ধির হারের সঙ্কীর্ণ হিসাব থেকে বেরিয়ে বড় ছবিটার দিকে তাকানো দরকার। ভবিষ্যতে আমরা যে ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে চলেছি, তার জন্য কি অর্থব্যবস্থা হিসাবে আমরা প্রস্তুত? বছরে সাত শতাংশ বৃদ্ধির হারকে কোনও ভাবেই খারাপ বলা যাবে না। কিন্তু, ভারতে অপুষ্টির হার কত? ৩৫ শতাংশ। সেটা অনেক বড় দুঃসংবাদ। অতিমারির পর দেখা গিয়েছে, স্কুলের ছেলেমেয়েদের পাটিগণিতের দক্ষতা আগের চেয়েও কমেছে। অর্থাৎ, তারা ভবিষ্যতের জন্য তৈরিই হচ্ছে না। কর্মসংস্থানের অবস্থা কেমন? দেশের মোট কর্মসংস্থানে কৃষির অনুপাত বেড়ে গেল কেন? যে দেশে এত দ্রুত আর্থিক বৃদ্ধি হচ্ছে, সে দেশে তো শিল্পক্ষেত্রে এত চাকরি তৈরি হওয়ার কথা যে, কৃষি থেকে শিল্পে অনেকে চাকরি নিয়ে চলে আসবেন। উল্টোটা ঘটছে কেন? ১৪০ কোটি লোকের দেশ, অথচ সেখানে ভোগব্যয় যথেষ্ট বাড়ছে না কেন? আর্থিক বৃদ্ধির সরকারি গল্পের সঙ্গে এর কোনও হিসাবই তো মিলছে না। তার মানে, কোথাও একটা বড় গোলমাল আছে।

রঘুরাম রাজন।

রঘুরাম রাজন।

প্র: আপনি বইয়ে অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যনকে উদ্ধৃত করে প্রশ্ন তুলেছেন, সরকার যে আর্থিক বৃদ্ধির হারের কথা বলছে, আদৌ কি ভারতের জাতীয় আয় সেই হারে বাড়ছে?

উ: সেই প্রশ্ন তো আছেই। কিন্তু বৃদ্ধির হারের প্রশ্নে ঢুকলেই প্রচুর টেকনিক্যাল কথা চলে আসবে, যেটা স্বভাবতই সাধারণ মানুষের বোধগম্য হবে না। কাজেই, আমি এখানে একটা সহজ প্রশ্ন করছি, যেটা প্রত্যেকে বুঝতে পারবেন, নিজের মতো করে সেই প্রশ্ন করতে পারবেন— যদি চড়া হারে আর্থিক বৃদ্ধি হয়ে থাকে, তা হলে সেই অনুপাতে কর্মসংস্থান হচ্ছে না কেন? তা হলে কি কর্মসংস্থানহীন আর্থিক বৃদ্ধি ঘটছে? আমার ধারণা, এটা আংশিক ভাবে সত্যি। যদি আর্থিক বৃদ্ধির সিংহভাগ কতিপয় বৃহদায়তন শিল্প থেকে আসে, যেগুলো মূলত প্রযুক্তিনির্ভর ও মূলধননিবিড়, তা হলে আর্থিক বৃদ্ধি ঘটলেও কর্মসংস্থান বাড়বে না। অর্থাৎ, বৃদ্ধির সুফল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের কাছে পৌঁছবে না। আমার ধারণা, অর্থব্যবস্থাকে সংগঠিত করার সরকারি প্রচেষ্টায় এই ঘটনাটাই ঘটছে, যেখানে ছোট বা মাঝারি শিল্প মার খাচ্ছে, লাভবান হচ্ছে কয়েকটা অতিবৃহৎ শিল্প।

প্র: আপনি বলেছেন যে, উৎপাদন ক্ষেত্রের চেয়ে ভারতের বেশি মনোযোগী হওয়া উচিত তথ্যপ্রযুক্তি বা কৃত্রিম মেধার ক্ষেত্রে, যেখানে ইতিমধ্যেই ভারতীয়রা আন্তর্জাতিক স্তরে একেবারে প্রথম সারিতে রয়েছেন (দেখুন: ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ নিয়ে সরব রাজন’, আবাপ পৃ ৮, ২৮-১)। কিন্তু, সেই ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক স্তরের অগ্রগণ্য শক্তি হয়ে ওঠার জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন। মুকেশ অম্বানী বা গৌতম আদানির মতো লগ্নিকারীদের কি এই ক্ষেত্রে লগ্নি করা উচিত?

উ: এখানে একটা কথা মনে করিয়ে দিতে চাই। যখন যে দিকে হাওয়া বইছে, ঠিক সেটাই নকল করার মধ্যে কিন্তু বিচক্ষণতা নেই। কৃত্রিম মেধার জগতে লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলের ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই বিপুল বিনিয়োগ হচ্ছে। ফেসবুক করছে, গুগল করছে। কাজেই, আমরা যদি ভাবি যে, ঠিক সেই কাজটাই করে আমরা রাতারাতি বিশ্বশক্তি হয়ে উঠতে পারব, তা হলে মুশকিল। ভারত যদি এখনই ক্লাউড সোর্সিংয়ে দুনিয়ার সবচেয়ে বড় শক্তি হয়ে উঠতে চায়, সেই কাজটা কঠিন হবে। আমাদের আলাদা করে ভাবতে হবে যে, কোন ক্ষেত্রটিতে আমরা সবচেয়ে ভাল ভাবে সফল হতে পারি। কৃত্রিম মেধার অনেক ধরনের ব্যবহার তৈরি হচ্ছে, ভারতকে সেখানে নিজের জন্য আলাদা জায়গা তৈরি করে নিতে হবে। তার জন্য লগ্নি দরকার। সেই লগ্নি খুবই লাভজনক হতে পারে, কিন্তু তার জন্য প্রথমে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হবে। শ্রীমুকেশ অম্বানী বা শ্রীগৌতম আদানির এত দিনের ব্যবসায়িক রেকর্ড যদি দেখি, তা হলে বলতেই হয় যে, প্রতিযোগিতায় তাঁদের তেমন রুচি নেই। যেখানে তাঁদের জন্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা রয়েছে, অথবা সেই ব্যবস্থা করে নেওয়া সম্ভব, তাঁরা মূলত তেমন ক্ষেত্রেই লগ্নি করতে পছন্দ করেন। কাজেই, তাঁরা কৃত্রিম মেধার দুনিয়ায় লগ্নি করতে আদৌ আগ্রহী হবেন কি না, সে প্রশ্ন থাকছে।

প্র: ভারতের আর্থিক ভবিষ্যতের ক্ষেত্রে বিভিন্ন গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বের কথা আপনি এই বইয়ে বারে বারেই উল্লেখ করেছেন। বর্তমান শাসনকালে এই প্রতিষ্ঠানগুলির যে ভয়ঙ্কর ক্ষতি হয়েছে, সে কথাও বলেছেন। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার বাছাইয়ের প্রক্রিয়া থেকে প্রধান বিচারপতিকে বাদ দেওয়ার চেষ্টায় আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

উ: সে তো বটেই। গণতন্ত্রের পক্ষে সবচেয়ে অলঙ্ঘনীয় হল নির্বাচনী প্রক্রিয়া। কাজেই, সেই প্রক্রিয়ার প্রধান পরিচালক বাছাইয়ের কাজটা যে নিরপেক্ষ হতেই হবে, তা নিয়ে কোনও সংশয়ই থাকতে পারে না। প্রধান বিচারপতিকে সেই প্যানেল থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টাটা এই কারণেই ভয়ঙ্কর। মনে রাখতে হবে যে, সেই প্যানেলে ইতিমধ্যেই এমন কিছু মানুষ অন্তর্ভুক্ত, যাঁদের দেখে প্যানেলের নিরপেক্ষতা সম্বন্ধে সন্দিহান হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতি।

প্র: এত ক্ষণ যে কথা হল, তাকে ভারতের পক্ষে, ভারতীয় গণতন্ত্রের পক্ষে খুব ইতিবাচক বলা যাবে না। আপনি কি ‘ভারত নামক ধারণা’টির ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে এখনও আশাবাদী?

উ: ঘটনা হল, গণতন্ত্রের সুদিন আসে, আবার দুর্দিনও আসে। এখন নিঃসন্দেহে দুর্দিন চলছে। কিন্তু, সুদিন যে আসবে না, সেটা আমি মনে করি না। তবে, দুর্দিন কেটে গিয়ে নিজে থেকেই সুদিন ফিরে আসবে, এই ভরসায় বসে থাকা বিপজ্জনক, অতি বিপজ্জনক। গণতন্ত্রের মর্যাদা রক্ষায় আমাদের সবাইকে লড়তে হবে। সবাইকে। কারণ, গণতন্ত্র সবার জন্য জরুরি। তবে, ভারতের ইতিহাসে আগেও গণতন্ত্র লাঞ্ছিত হয়েছে, এবং সেই পর্ব কেটেও গিয়েছে। তাই বলব, গণতন্ত্রের জন্য যে লড়াই আমরা সবাই নিজের মতো করে লড়ছি, তাতে আশাবাদী হওয়ার কারণ রয়েছে। সুদিন ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে, ভারত নামক যে ধারণাটি নিয়ে আমরা চিরকাল গর্বিত, তাতে ফের প্রতিষ্ঠা করা যাবে, এই ভরসা, এই আশাবাদ মনে নিয়েই লড়তে হবে।

সাক্ষাৎকার: অমিতাভ গুপ্ত

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement