পুস্তক পরিচয় ৩

হারানো সময় ও মানুষ

মনোজ মিত্রের আত্মস্মৃতি, আবার হারানো সময়ের ইতিকথাও। গল্পনা (দে’জ, ২০০.০০)। বেছে নিয়েছেন ১৯৫০, যখন তাঁর বয়স বারো, দেশভাগ ও স্বাধীনতা দুই-ই একসঙ্গে ঘটে গিয়েছে বাঙালির জীবনে। গৃহস্থের ঘরবাড়ি ফুঁড়ে বর্ডার টানা হল।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০০:০০

মনোজ মিত্রের আত্মস্মৃতি, আবার হারানো সময়ের ইতিকথাও। গল্পনা (দে’জ, ২০০.০০)। বেছে নিয়েছেন ১৯৫০, যখন তাঁর বয়স বারো, দেশভাগ ও স্বাধীনতা দুই-ই একসঙ্গে ঘটে গিয়েছে বাঙালির জীবনে। গৃহস্থের ঘরবাড়ি ফুঁড়ে বর্ডার টানা হল। রান্নাঘর, ধানের গোলা, ঢেঁকিশাল এদেশে-ওদেশে ভাগ হয়ে গেল। দু’দেশেই ছিন্নমূল পরিবারগুলো অজানা অচেনা ভূখণ্ডে বসতভিটে আর স্বজনের সন্ধানে রত— লেখক কলম ধরেছেন যেন সেই লগ্ন থেকে। ‘বারবার ফিরে গেছি ছেড়ে আসা দেশে। কিছুটা দেখা, অনেকটা শোনা, বাকিটা অনুমান এবং অগোচর কল্পনায় গল্পনা নামের এই স্মৃতিকথাখণ্ডখানি বোনা।’ মনোজবাবু জানিয়েছেন বইটির শুরুতেই।

‘ফিরে যাই ফিরে ফিরে চাই’ রচনাটি পড়তে-পড়তে তাঁর অভিনয় মনে পড়ে যাবে ‘বাঞ্ছারামের বাগান’-এ। লিখছেন ‘‘ধূলিহরে কাপালি সম্প্রদায়ের কাজ ছিল আনাজপাতি শাকসবজি ফলপাকুড় ফলানোর। কাপালিরাও চাষি বটে, তবে ধানপাট শস্যকলাই চাষের নয়। এরা লাঙলচাষি নয়, হাতে এদের কোদাল আর খুরপি। সূর্য পড়ে এলে— রোদ্দুরের তেজ মিইয়ে এলে— কাপালিবৌরা ঘোমটা খুলে কোমরে আঁচল জড়িয়ে সারিবাঁধা আলুখেতের নালিতে জল ঢালত... ‘বাঞ্ছারামের বাগান’ ছবিটা করার আগে আমার মুখে এত কথা শুনে চলচ্চিত্রকার তপন সিংহ চোখ দুটোকে ধনুকের শরের মতো স্থির এবং তীক্ষ্ণ করে কিছুক্ষণ চুপ করে ভেবেচিন্তে নিয়ে তাঁর ইউনিটের সহকর্মীদের জানিয়েছিলেন, ‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শুটিং শুরু করব, দেরি করলে শীতের সর্ষেফুল পাব না।’ তারপর আমার দিকে ফিরলেন, ‘আপনার এই বাঞ্ছারাম কাপালির বাগান আমি খুঁজে বার করব ভাই...’।’’

Advertisement

রঞ্জন দত্তের মায়াবী অলংকরণের সঙ্গে মনোজবাবুর এক-একটি গদ্য প্রায় গল্পে বুঁদ করে রাখে পাঠককে। প্রচ্ছদ দেবব্রত ঘোষের।

বাঙালির সংস্কৃতি মানচিত্র থেকে মুছে যেত যে সব মানুষ না থাকলে, তাঁদের নিয়ে ছোট ছোট গদ্য। স্মৃতির ডানায় ভর করে কত-না সত্যি গল্পের আলো-আঁধারি, বিভাস চক্রবর্তীর কলমে। ভুলি কেমনে (দীপ, ২০০.০০)। বিভাসবাবু তাঁর রঙিন স্কেচে তুলে আনা বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের ভিতর দিয়ে পৌঁছতে চান আঁকাবাঁকা ইতিহাসে, সেখানেও আমাদের পরাধীনতা-দেশভাগ-স্বাধীনতা যেন পরস্পর জুড়ে জুড়ে থাকে। ‘অগ্রজরা যেমন আছেন, আছেন অনুজেরাও, সমসাময়িকরা তো বটেই... তাঁদের কাজ দেখে বোঝার চেষ্টা করেছি।... যেহেতু মানুষগুলি গুরুত্বপূর্ণ, এবং তাঁদের সম্পর্কে অনুভবগুলিও সৎ এবং একান্ত আপনার, তাই বই-আকারে প্রকাশ করতে সংকোচ বোধ করিনি।’ বইয়ের শুরুতেই জানিয়েছেন লেখক।

প্রায় কেউ বাদ নেই বিভাসবাবুর স্মৃতিকথনের আওতা থেকে, তালিকা দেওয়া তাই অতীব দুরূহ। তবু তাঁর বাবা-মায়ের পরেই আছেন হেমাঙ্গ বিশ্বাস: ‘‘কেউ যদি আমাকে জিজ্ঞেস করত তোমার ‘আইডল’ কে, আর আমি যদি আজকের যুগের কথাবার্তায় রপ্ত হতাম, তাহলে অবশ্যই বলতাম, আমার বাবা ছাড়া হেমাঙ্গ বিশ্বাসই আমার প্রধান ‘আইডল’।’’ বিশ্বনাথ দে-র আঁকা প্রতিকৃতিগুলি সুন্দর।

আরও পড়ুন
Advertisement