যিনি একটানা দশ বছর ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তাঁর সম্বন্ধে ‘একান্ত ব্যক্তিগত’ কথা কি লেখা সম্ভব? তাঁর নাম যদি মনমোহন সিংহ হয়, তবে সম্ভব। তিনি নিজের ব্যক্তিগত জীবনকে রাজনীতির পরিসরে টেনে আনেননি বলে সম্ভব, তাঁর ছোটবেলার গল্প নিয়ে কমিকস বিক্রি হয়নি বলে সম্ভব। মনমোহনের প্রধানমন্ত্রিত্বের এক দশকেও তাঁর কোনও জীবনী বেরোয়নি। মনে রাখা ভাল, তাঁর উত্তরসূরি প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিটি দখল করার আগেই তাঁর জীবনীর সংখ্যা হিসেবের বাইরে চলে গিয়েছিল।
কন্যা দমন সিংহ মনমোহন ও তাঁর স্ত্রী গুরশরনের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে বইটি লিখেছেন। আসলে, রাজনীতির বাইরে যে মনমোহন সিংহ, এটা তাঁর জীবনের গল্প। অন্য ভাবে দেখলে, রাজনীতির মনমোহনকে ব্যাখ্যা করে এই ব্যক্তিগত মনমোহন। অধুনা পাকিস্তানের অন্তর্গত এক প্রত্যন্ত গ্রামের প্রায় অশিক্ষিত পরিবারের মাতৃহীন ছেলে টালমাটাল শৈশব, বাবার দ্বিতীয় বিয়ে, আর দেশভাগের ধাক্কা সামলেও কী ভাবে হয়ে উঠলেন ভারতীয় অর্থনীতির এক মূল কাণ্ডাির, এটা তারও গল্প।
ইন্দিরা গাঁধী যখন তাঁকে যোজনা কমিশনে নিয়ে যান, চাকরি ছাড়তে অসম্মত হয়েছিলেন মনমোহন। তাঁর জন্য নতুন পদ তৈরি হয়— মেম্বার সেক্রেটারি। কেন? তাঁর প্রতি ‘ম্যাডাম’-এর আস্থা, নাকি পি এন হাসকরের মতো তাঁকেও সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল অনতিগুরুত্বপূর্ণ পদে? এই প্রশ্নের উত্তরে মনমোহন বলেন, কোনওটাই নয়। আমি তখনও এত গুরুত্বপূর্ণ কেউ ছিলাম না যে তাঁর জন্য শ্রীমতী গাঁধী আলাদা করে ভাবিত হবেন। নিজের সম্বন্ধে এই (হয়তো প্রয়োজনের চেয়ে বেশিই) স্পষ্ট ধারণা মনমোহনের বৈশিষ্ট্য।
তবে, দমনের কৃতিত্ব, তাঁর আখ্যানে গুরশরন কোথাও গুরুত্ব হারাননি। তিনি চমৎকার সব গল্প শোনান। তাঁরা যখন পরস্পর বাগদত্ত, তখন মনমোহন এক দিন তাঁদের বাড়িতে এসেছিলেন, আংটি পরাবেন বলে। সে দিনই গুরশরনের কলেজের পিকনিক ছিল। হবু স্বামীর অপেক্ষার পরোয়া না করেই পিকনিক থেকে নিজস্ব সময়ে ফিরেছিলেন তিনি! এই ঘটনার কথা বলে গুরশরন যোগ করেন, ‘অন্য সময়েও তো আসতে পারত, যে দিন দু’জনেরই সুবিধা হত’।
একটাই অনুযোগ: প্রধানমন্ত্রিত্বের দশটা বছরকে একেবারে না এড়িয়ে গেলেই পারতেন দমন। সে সময়ের ব্যক্তিগত মুহূর্তও হয়তো প্রধানমন্ত্রী মনমোহনকে বুঝতে আর একটু সাহায্য করত।