চিত্রকলা ও ভাস্কর্য ১...

বারবার উদ্ভাসিত হয়েছে বাস্তবের রূঢ় সত্য

স্টুডিয়ো ২১-এ অনুষ্ঠিত হল একটি সম্মেলক আলোকচিত্র প্রদর্শনী। লিখছেন মৃণাল ঘোষস্টুডিয়ো ২১-এ সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হল আলোকচিত্রের প্রদর্শনী। কলকাতার ম্যাক্সমুলার ভবনের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে উপস্থাপিত এই প্রদর্শনীর শিরোনাম ‘দ্য ইনটেরিয়র’। ‘ আলোকচিত্র-বিষয়ক ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘পিক্স’-এ প্রকাশিত ছবিগুলিই দেখানো হল এই প্রদর্শনীতে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৪ ২৩:৩৫

আলোকচিত্র প্রথম যখন উদ্ভাবিত হয়েছিল, তখন থেকেই তার প্রধান দায় ছিল বাস্তবকে তার স্বাভাবিকতায় রূপবদ্ধ করা। আলোকচিত্র যখন ছিল না, তখন সেই কাজটি করতে হত চিত্রকলাকে। আলোকচিত্রের যান্ত্রিক প্রযুক্তির সঙ্গে চিত্রকলা প্রতিযোগিতায় নামতে চায়নি। সে তখন বেছে নিয়েছিল প্রকাশের এক স্বতন্ত্র ভুবন। চেষ্টা করেছিল বাস্তবের অন্তরালে নিহিত সত্যকে উন্মোচিত করতে। যে কোনও শিল্পই সেটা চায়। আলোকচিত্র প্রযুক্তিগত ভাবে এবং অভিজ্ঞতায় যত অগ্রসর হতে থাকল, ততই বেশি করে সে নিজেকে নিয়োজিত করতে চাইল সত্যেরও সন্ধানে। তার গতিপথ প্রবাহিত হতে থাকল চিত্রকলারই সমান্তরালে। আজকাল আলোকচিত্রের অনেক প্রদর্শনীতে এই বৈশিষ্ট্যটি আমরা অনুধাবন করতে পারি।

স্টুডিয়ো ২১-এ সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হল এ রকমই একটি আলোকচিত্রের প্রদর্শনী। কলকাতার ম্যাক্সমুলার ভবনের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে উপস্থাপিত এই প্রদর্শনীর শিরোনাম ‘দ্য ইনটেরিয়র’। ‘পিক্স’ একটি আলোকচিত্র-বিষয়ক ত্রৈমাসিক পত্রিকা। ২০১৩-র অগস্টে প্রকাশিত এর অষ্টম সংখ্যায় বিষয় হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছে ইরানের সাম্প্রতিক আলোকচিত্রকে। ইরানের ১৪ জন আলোকচিত্রীর কাজ প্রকাশিত হয়েছে এই সংখ্যায়। এখানে প্রকাশিত ছবিগুলিই দেখানো হল এই প্রদর্শনীতে। আলোকচিত্রের পূর্বোক্ত দ্বৈত সত্তার প্রকাশ এই ছবিগুলিকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে সমৃদ্ধ করেছে। তথ্যগত ভাবে বাস্তবের রূঢ় সত্য যেমন উদ্ভাসিত হয়েছে, তেমনই আলোকচিত্রের সঙ্গে চিত্রের সমন্বয় ঘটিয়ে স্বতন্ত্র এক নান্দনিক পরিসর সৃষ্টির প্রয়াসও হয়েছে। ইরানের আলোকচিত্র চর্চার গতি-প্রকৃতি জানার সুযোগ করে দিল এই প্রদর্শনী।

Advertisement

শিল্পী: আরাশ ফেশারাকি।

চিত্র ও আলোকচিত্রের সমন্বয়ের ক্ষেত্রটিতে খুবই কল্পনাদীপ্ত কাজ করেছেন আরাশ ফেশারাকি। তেহেরান বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রাফিক ডিজাইন নিয়ে তাঁর অধ্যয়ন। যে ছবিগুলি রয়েছে তাঁর, সেগুলি ২০১২ তে করা ‘মেমোরিজ অব দ্য ইন্টেরিয়র’ সিরিজের অন্তর্গত। এরই একটি ছবির শিরোনাম ‘ন্যুড বাই হার চাইল্ডহুড’। ঘরের অভ্যন্তরে কার্পেট আচ্ছাদিত পরিসরে রয়েছে খেলনা নিয়ে একটি শিশুর আলোকচিত্র। অতীতের সেই শিশুটি আজ পূর্ণযৌবনা। তারই উপবিষ্ট নগ্নিকা রূপ ছন্দিত রেখায় এঁকেছেন শিল্পী। চিত্র ও আলোকচিত্রকে সমন্বিত করে অতীত ও বর্তমানে ব্যঞ্জিত সত্যের দুই রূপকে একসঙ্গে মিলিয়েছেন। ‘বাথরুম’, ‘সলিচ্যুড’, ‘টেম্পটেশন অব মর্নিং স্লিপ’ ইত্যাদি রচনায় রেখাচিত্রে নগ্নিকার উপস্থাপনা দীপ্ত এক নান্দনিক পরিসর রচনা করেছে।

দারিয়ুশ কিয়ানি তেহেরানের আনন্দ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিত্রকলার স্নাতক। তাঁর ‘স্কোয়ার অব সাইলেন্স’ শিরোনামের ডিজিটাল চিত্রমালার কয়েকটি নিদর্শন দেখানো হয়েছে এই প্রদর্শনীতে। তীব্র কালো প্রেক্ষাপটে সাদা ও ধূসরের সমন্বিত রচনায় তিনি উপস্থাপিত করেছেন পুরুষের পোশাকের কিছু কিমাকার রূপ। যেমন একটি শার্টের কলার ও হাতাদু’টি শুধু দেখানো হচ্ছে। বাস্তবের অনেকটা অদৃশ্য রেখে অল্প কিছু অংশকে দৃশ্যমান করে তুললে যে ‘গ্রটেস্ক’ অনুভব জাগে, সেটা নিয়েই নানা ভাবে খেলেছেন শিল্পী।

আলোকচিত্রের প্রকট বাস্তবতাকেও কী ভাবে কল্পরূপে অভিষিক্ত করা যায়, তার দৃষ্টান্ত মেহরদাদ আসগারির তারি-র ছবিগুলি। ‘দ্য সেকেন্ড টেক’ শীর্ষক ডিজিটাল আলোকচিত্রমালার অন্তর্গত রচনাগুলিতে শিল্পী ব্যক্তিকে রেখেছেন পূর্ণ স্বাভাবিকতায় কিন্তু তাঁর মুখ বা মাথাটিকে অদৃশ্য করে দিয়েছেন। মাহ্ডিয়ে মিরহাবিবি তুলেছেন ইরাক ও ইরানের যুদ্ধবিধ্বস্ত পরিমণ্ডল ও মানুষ এবং সোমালিয়ার সংঘর্ষ ও দুর্ভিক্ষের ছবি। তাঁর সাদা-কালো রচনায় প্রকট হয়েছে বাস্তবের গভীর ট্র্যাজিক রূপ। একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে সোমালিয়ার ক্ষুধার্ত শিশুরা পাত্র হাতে বসে আছে খাদ্যের প্রতীক্ষায়। আর একটি ছবিতে একটি সোমালি মেয়ে বসে আছে তাঁর আঁকা ছবির সামনে। বাস্তব দিয়েই সত্যের নিষ্ঠুরতাকে ধরতে পেরেছেন শিল্পী।

এ রকমই যুদ্ধ ও সন্ত্রাসের প্রকট বাস্তবতাকে ধরেছেন আজাডে তাঁর ‘বাই অ্যান আই-উইটনেস’ শীর্ষক চিত্রমালায়। উন্মোচিত হয় মানুষের অমানবিকতার কঠিন সত্য।

এ ছাড়াও প্রদর্শনীতে ছিলেন কাডে বাঘদাদচি, বাবাক কাজেমি, আতা মোহাম্মাদি, রেজা নাদজি, নিকু তারখানি, ঘোলাম রেজা ইয়াজদান, আলি আদজিয়ান ও রামিয়ার।

আরও পড়ুন
Advertisement