চিত্রকলা ও ভাস্কর্য ১

ধ্বংসের বিপরীতে উজ্জীবনের চিত্রকল্প

বিড়লা অ্যাকাডেমিতে অনুষ্ঠিত ‘সোসাইটি অব কনটেম্পোরারি আর্টিস্ট’-দের প্রদর্শনী দেখলেন মৃণাল ঘোষ।সোসাইটি অব কন্টেম্পোরারি আর্টিস্ট দলটি গড়ে উঠেছিল ১৯৬০ সালে। আমাদের দেশে আধুনিকতাবাদী শিল্পকলার বিকাশে এই দলের অন্তর্গত শিল্পীদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিগত ৫৫ বছরে আমাদের দৃশ্যকলায় বিপুল পরিবর্তন এসেছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সোসাইটির সামগ্রিক প্রকাশভঙ্গিও নবীকৃত হয়েছে। তরুণতর শিল্পীরা যোগ দিয়েছেন। নতুন মূল্যবোধের সঞ্চার ঘটেছে। বিড়লা অ্যাকাডেমিতে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হল এই দলের ৫৫-তম বার্ষিক প্রদর্শনী।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৫ ০০:০১

সোসাইটি অব কন্টেম্পোরারি আর্টিস্ট দলটি গড়ে উঠেছিল ১৯৬০ সালে। আমাদের দেশে আধুনিকতাবাদী শিল্পকলার বিকাশে এই দলের অন্তর্গত শিল্পীদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিগত ৫৫ বছরে আমাদের দৃশ্যকলায় বিপুল পরিবর্তন এসেছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সোসাইটির সামগ্রিক প্রকাশভঙ্গিও নবীকৃত হয়েছে। তরুণতর শিল্পীরা যোগ দিয়েছেন। নতুন মূল্যবোধের সঞ্চার ঘটেছে। বিড়লা অ্যাকাডেমিতে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হল এই দলের ৫৫-তম বার্ষিক প্রদর্শনী। ২২-জন শিল্পীকে কালানুক্রম অনুসারে তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা যায়। প্রথম প্রজন্ম, যাঁরা ১৯৬০-এর দশক থেকে এই দলের সঙ্গে যুক্ত আছেন। দ্বিতীয় প্রজন্ম, ১৯৮০-র দশকে প্রতিষ্ঠাপ্রাপ্ত শিল্পীরা। তৃতীয় প্রজন্ম, ১৯৯০-এর দশক পরবর্তী তরুণতর শিল্পী, যাঁদের অনেকেই পোস্ট-মডার্ন ও বিশ্বায়নের দ্বান্দ্বিকতাকে আত্মস্থ করতে চেষ্টা করেছেন।

Advertisement

এ বছর এই দলে ভাস্কর রয়েছেন পাঁচজন। এর মধ্যে দুজন এবছরই যোগ দিয়েছেন দলে। শান্তিনিকেতন কলাভবনের শিক্ষক পঙ্কজ পাঁওয়ার ও কলকাতা গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজের অখিল চন্দ্র দাস। এছাড়া দুজন শিল্পী ভাস্কর্য-সম্পৃক্ত ইনস্টলেশন করেছেন: পার্থ দাশগুপ্ত ও শ্রীকান্ত পাল। পার্থ-র লোহার পাত যুক্ত করে নির্মিত দুটি রচনার একটি প্রয়াত শিল্পী বি.আর পানেসরের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি হিসেবে নিবেদিত।‘আয়রন কোলাজ’ রচনাটিতে কোলাজ-প্রকরণটিকে ত্রিমাত্রিকতায় ব্যবহার করা হয়েছে। তাঁর ‘ওঁ শান্তি’ রচনাটি দৃশ্য ও ধ্বনির সমন্বয়ে তৈরি। একটি আয়ত ঘনকাকার প্রকোষ্ঠ। তার চোখ আছে। ভিতরে শান্তির প্রতীকী আলোর বিচ্ছুরণ। সেই আলোরই ধ্বনিরূপ হিসাবে বাজতে থাকে বৌদ্ধ সঙ্গীতের সুর। শ্রীকান্ত পালের ‘কাট পিস, পেষ্ট’। চার প্রান্তে চারটি কাস্তে দিয়ে আটকানো ফাইবারে তৈরি একটি মানবদেহ আনুভূমিকভাবে শূন্যে ঝুলতে থাকে। নীচে ভূমিতে ছড়ানো থাকে বিশ্বশিল্পের কিছু প্রতিলিপি।

নিরঞ্জন প্রধানের বিদ্যাসাগরের আবক্ষ-মূর্তি অসামান্য রচনা। ‘কায়া ও ছায়া’ শীর্ষক রচনায় তিনি নতুন আঙ্গিক সন্ধান করেছেন। মানিক তালুকদারের তিনটি মিশ্রমাধ্যমের রচনাতেও রয়েছে নতুন আঙ্গিকের সন্ধান। অখিল চন্দ্র দাস ব্রোঞ্জে ঘোড়ার প্রতীকে সাম্প্রতিকের সংঘাতকে রূপায়িত করেছেন। সুনীল কুমার দাস ও বিমল কুণ্ডু তাঁদের নিজস্ব আঙ্গিক-পদ্ধতিকে পরিশীলিত করেছেন।

১৯৬০-এর দশকে প্রতিষ্ঠাপ্রাপ্ত শিল্পীদের মধ্যে রয়েছেন দীপক বন্দ্যোপাধ্যায়, গণেশ হালুই, লালু প্রসাদ সাউ, মনু পারেখ, সনৎ কর, সুহাস রায় ও সুনীল দাস। গত অর্ধ-শতকে বিবর্তনের পথে কোথায় এসে পৌঁছেছেন তাঁরা, তার নিদর্শন ধরা থাকে তাঁদের ছবিতে। নিজস্ব সাফল্যে সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে তাঁদের প্রকাশ।

আশির দশকের শিল্পীদের মধ্যে আদিত্য বসাকের ‘কলকাতা ১,২,৩’ শীর্ষক তিনটি ক্যানভাস আজকের সামাজিক সংকটকে ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সমন্বয়ে তুলে ধরতে চেষ্টা করেছে। দ্বিতীয় ছবিটিতে তিনি কলকাতার বিপর্যস্ত নিসর্গ উপস্থাপিত করেছেন। তার উপর শব্দমালায় উৎকীর্ণ করেছেন কেমন করে এই সভ্যতা বিজ্ঞানের সাহায্যে গণহত্যার নানা পদ্ধতি উদ্ভাবন করে চলেছে। মনোজ দত্তের তিনটি টেম্পারায় পাওয়া যায় এরই বিপরীত সুর। তিনি এঁকেছেন ফুলদানিতে ফুল ও বর্ণিল বৃক্ষে পাখিদের কলকাকলি। পরিবৃত ধ্বংসের বিপরীতে উজ্জীবনের ইঙ্গিত থাকে তাঁর ঐতিহ্য-উদ্ভাসিত রচনায়।

জলরঙে অসামান্য দক্ষতার পরিচয় রয়েছে প্রদীপ মৈত্রর তিনটি ছবিতে। শ্যামল দত্তরায়ের আঙ্গিকগত পরিমন্ডলকে তিনি হয়তো ইচ্ছাকৃতভাবেই তুলে আনতে চেয়েছেন শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসেবে। অতীন বসাক ‘দ্য কিং ১,২’ ও ‘ফসিল’-এ উঠে আসে ফুল ও পাখির প্রতিমা। মনোজ মিত্রের ‘অ্যাক্ট অব টামব্লিং’-এ উচ্ছ্বাসের ভিতরেও মগ্ন এক বিপর্যয়ের সুর প্রতিধ্বনিত হয়।

অতনু ভট্টাচার্যের ‘নস্টালজিয়া’ মগ্ন-বিমূর্ততার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। রাজেন মণ্ডলের ‘অ্যামফিবিয়াল’ ও ‘একজিস্টিং’। প্রথমটি একটি কুমির। দ্বিতীয়টি বাঘের দুপাশে নারী ও পুরুষ। হিংসার বিপরীত এর আবহ সৃষ্টি করেন তিনি।

আরও পড়ুন
Advertisement