পুস্তক পরিচয় ২

অনেক আলো জ্বালিয়ে গিয়েছেন

উন্নয়নের চাহিদা অল্প দিনের মধ্যেই আমাদের এমন জায়গায় ঠেলে নিয়ে যাবে যখন পরিষ্কার জল, নির্মল জল, নিরাপদ শস্য, এমনকী হয়ত স্বচ্ছবুদ্ধির জন্যও নিরুপায় হয়ে আমাদের আবার সেই মহাত্মা গান্ধীর ভাবনারই শরণাপন্ন হতে হবে।— গাঁধী-চিন্তাবিদ অনুপম মিশ্রের আলোচনা ভূমধ্যসাগর-এ (সম্পা: জয়া মিত্র)।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০০:০০

উন্নয়নের চাহিদা অল্প দিনের মধ্যেই আমাদের এমন জায়গায় ঠেলে নিয়ে যাবে যখন পরিষ্কার জল, নির্মল জল, নিরাপদ শস্য, এমনকী হয়ত স্বচ্ছবুদ্ধির জন্যও নিরুপায় হয়ে আমাদের আবার সেই মহাত্মা গান্ধীর ভাবনারই শরণাপন্ন হতে হবে।— গাঁধী-চিন্তাবিদ অনুপম মিশ্রের আলোচনা ভূমধ্যসাগর-এ (সম্পা: জয়া মিত্র)। প্রায় একই স্বর সম্পাদকের ‘ডেস্ক থেকে’-তে: ‘‘শুধু আমার দেশ নয়, পৃথিবীর বহু দেশ, বিশেষত যে সব দেশ প্রাকৃতিক সম্পদে ছিল সমৃদ্ধ, সেই দেশগুলোর কোটি কোটি মানুষ নিজের নিজের দেশে ‘পরবাসী, উদ্বৃত্ত’।’’

নিত্যানন্দের স্ত্রী হিসেবে বঙ্গের বৈষ্ণব সমাজের সঙ্গে পরিচয় হয়ে গেলেও জাহ্নবা ‘প্রাক্‌ ঔপনিবেশিক বঙ্গ জীবনে নারী প্রগতির এক স্বতন্ত্র ইতিহাস নির্মাণ করেছিলেন।...’ লিখেছেন পরমাশ্রী দাশগুপ্ত, নীললোহিত-এর (সম্পা: বাসব দাশগুপ্ত) ক্রোড়পত্র ‘প্রাক্‌-স্বাধীনতা পর্বে সাহিত্যে মানবীচেতনা’য়। দ্বিতীয় ক্রোড়পত্রটি বিলুপ্তপ্রায় ‘লেটার প্রেস’ নিয়ে।

Advertisement

‘সংস্কৃত এবং ফারসি দুটো সংস্কৃতিতেই শিক্ষক সম্পর্কে নানা উপমা আছে। একটা হল যিনি জ্ঞানশলাকার দ্বারা আমাদের চক্ষু উন্মীলিত করেছেন। তার থেকে সুন্দর কথা হল, তাঁরা নিজের জ্ঞানের দীপ থেকে অন্য অনেক আলো জ্বালিয়ে দেন। অশোক সেন অনেক আলোকে জ্বালিয়ে গেছেন।’ সুদীপ্ত কবিরাজের স্মরণলেখ সদ্যপ্রয়াত অশোক সেন সম্পর্কে। মিহির সেনগুপ্ত লিখেছেন ভূমেন্দ্র গুহ সম্পর্কে। ক্রোড়পত্রে ‘প্রসঙ্গ: যৌনতা’। চলচ্চিত্রকার নীতীন বোসকে ‘ফিরে দেখা’। অনুষ্টুপ-এর (সম্পা: অনিল আচার্য) সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষের দ্বিতীয় সংখ্যা, গত সংখ্যার মতো এ সংখ্যাতেও একগুচ্ছ মননশীল পরিশ্রমী প্রবন্ধ— রবীন্দ্রনাথের ‘রক্তকরবী’, কেশবচন্দ্র সেন ও বটতলা থেকে শরদিন্দু-র ‘ব্যোমকেশ’, নানা বিষয়ে।

খোয়াই-এ (সম্পা: গার্গী দাশগুপ্ত) এ বারের বিষয়: ‘মুদির দোকান’। মুখ্‌রা-য় জানানো হয়েছে ‘প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে মুদি দোকান। তার সেই জীবন সংগ্রামের খাতা, মানবিক কর্মধারা, মফস্‌সলের গন্ধমাখা স্মৃতি... নিয়েই এমন পরিকল্পনা।’ একগুচ্ছ সুচিন্তিত নিবন্ধ।

বিংশ শতাব্দীর পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাসে, বিশেষত বিশ্লেষণী দর্শনের ধারায় দীর্ঘ কাল ধরে লুডহ্বিগ হ্বিটগেনস্টাইনের মতবাদের আধিপত্য লক্ষ করা যায়। তাঁকে নিয়েই বকলম-এ (সম্পা: সরসিজ বসু) চর্চা করেছেন ইন্দ্রাণী সান্যাল, মিহির চক্রবর্তী, নির্মাল্য নারায়ণ চক্রবর্তী।

তিতির-এর ‘ডায়েরি’ সংখ্যায় (সম্পা: সঞ্জয় সাহা) ডায়েরির নির্বাচিত অংশের সঙ্গে আলোচনা। মণীন্দ্র গুপ্তের পর্যবেক্ষণে ‘বিভূতিভূষণের দিনলিপি’তে: ‘হাটে তেঁতুলের সাড়ে সাত টাকা দর, জাঙ্গিপাড়ার নিরাপদ গ্রাম্য আড্ডাঘর এবং ভূস্বর্গ কাশ্মীরের সৌন্দর্য মহাকাশের দূর নীহারিকার স্পন্দনের সঙ্গে এক।’

এখন ইছামতী বিদ্যাধরী (সম্পা: অসীমকুমার রায়) বিষয় বেছেছে ‘বাউন্ডুলের রোজনামচা’। ‘জীবনে বাঁধভাঙার স্বাদ কে না পেতে চায়!... এই ভাঙাভাঙি জীবনের মতো সাহিত্যের সংসারেও এক নতুন পথের দিশারী হয়ে ওঠে... আমরা তাই বাউন্ডুলেপনার দিকে নজর দিয়েছি।’ ‘বিশেষ রচনা’-য় রজতেন্দ্র মুখোপাধ্যায়: ‘‘পরপর কিছুদিন বাজারে না-গেলে শাকউলি মাসি বা চারাপোনা বিক্রেতার মুখ থেকে ভেসে আসা জীবনানন্দের সেই অমোঘ লাইন ‘এতদিন কোথায় ছিলেন?’— তা ‘মল’-এ গিয়ে শুনতে পাওয়ার কোনো চান্স-ই নেই।’’

‘মানুষ জীবিকা বা নতুন জীবনের খোঁজে প্রতিনিয়তই কৃত্রিম সীমান্তের বাধা ডিঙিয়ে নতুন বসতি খুঁজে নিয়েছে ও নিচ্ছে... এটি একটি খুব বড়ো সমস্যাও বটে।’ শুরুতেই জানিয়েছেন গুয়াহাটি-র পত্রিকা একা এবং কয়েকজন-এর সম্পাদকমণ্ডলী (দেবীপ্রসাদ সিংহ, কুমার অজিত দত্ত, শ্যামল বিশ্বাস), সে জন্যেই এবার ‘প্রব্রজন’ নিয়ে তাদের প্রয়োজনীয় সংকলন।

২০০৯-এ দশদিশি-র (সম্পা: অতনুশাসন মুখোপাধ্যায়) ‘বিষয়: শ্রীচৈতন্য’-এর পর এ বার ‘বিষয়: শ্রীচৈতন্য’-এর ‘দ্বিতীয় পর্ব’। এতে ঠাঁই পেয়েছে ‘চৈতন্য চর্চার প্রাসঙ্গিকতা ও ভবিষ্যৎ’, ‘দর্শন, সংস্কৃতি ও ধর্মান্দোলনের গতি-প্রকৃতি’, ‘পুণ্যতীর্থ পরিব্রজন’, ‘পার্ষদ-গৌরব’, ‘সমকালীন সমাজ ও অর্থনীতি’ ইত্যাদি নামাঙ্কিত বিভাগে গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধাদি।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে কী ভাবে ‘গড়ে উঠছে এক মিথ্যার পাহাড়। মিথ্যার পাহাড়, মিথের আদলে।’— লিখেছেন শেখর দাশ, তাঁর তদন্তমূলক রচনায়। এমনই সব রচনায় ঋদ্ধ কালধ্বনি (সম্পা: প্রশান্ত চট্টোপাধ্যায়)। যেমন তাতে সুজিত চৌধুরীর ‘বড় বাজারে ছোট কৃষকের অবস্থা’ বা স্থবির দাশগুপ্তের ‘দারিদ্র্যের তাণ্ডব, জৈবিকতা ও জনস্বাস্থ্য’।

বেহালা মার্গ মিউজিক সার্কেল-এর সংগীত পত্রিকা অবাক হয়ে শুনি-তে (সম্পা: অরুণ দে) নানা নিবন্ধের সঙ্গে বিভিন্ন সংগীত ব্যক্তিত্বের সাক্ষাৎকার। সোমেশ্বর ভৌমিকের মান্টো-র অনুবাদ, শওকত আলীর সাক্ষাৎকার, অনিতা অগ্নিহোত্রীর গল্পে ঋদ্ধ আরশিনগর (সম্পা: স্বাতী গুহ দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায়)।

সোনালি সকাল-এর (সম্পা: আসাদুল ইসলাম) বিষয়: ‘পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যালঘু মুসলমানদের দ্বারা পরিচালিত আবাসিক মিশন-স্কুল’। এতে আবাসিক শিক্ষার ধারা, সংখ্যালঘু সমাজের নানা দিক নিয়েও আলোচনা। রাজ্যের শতাধিক মিশনের খুঁটিনাটি পূর্ণ বিবরণ এক নজরে পর পর ছক-আকারে তুলে ধরা হয়েছে।

আরও পড়ুন
Advertisement