চিত্রকলা ও ভাস্কর্য ১

স্বাভাবিকতাও যেখানে অলৌকিক হয়ে ওঠে

নন্দনে অনুষ্ঠিত ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব ফোটোগ্রাফি-র প্রদর্শনীটি দেখলেন মৃণাল ঘোষসংগঠন ভিত্তিক আলোকচিত্রের চর্চা সারা দেশের সঙ্গে কলকাতাতেও ক্রমশ প্রসারিত হচ্ছে। ‘ন্যাশানাল অ্যাকাডেমি অব ফোটোগ্রাফি’ (ন্যাপ) কলকাতা সে রকমই একটি সংস্থা। এই সংগঠনের অন্যতম কর্ণধার বিশিষ্ট আলোকচিত্রী মধু সরকারের উদ্যোগে তাঁদের দ্বাদশ আন্তর্জাতিক আলোকচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হল সম্প্রতি নন্দন-এর অলিন্দে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৬ ০০:০০
শিল্পী: হংওয়াই ভিক্টর চেং

শিল্পী: হংওয়াই ভিক্টর চেং

সংগঠন ভিত্তিক আলোকচিত্রের চর্চা সারা দেশের সঙ্গে কলকাতাতেও ক্রমশ প্রসারিত হচ্ছে। ‘ন্যাশানাল অ্যাকাডেমি অব ফোটোগ্রাফি’ (ন্যাপ) কলকাতা সে রকমই একটি সংস্থা। এই সংগঠনের অন্যতম কর্ণধার বিশিষ্ট আলোকচিত্রী মধু সরকারের উদ্যোগে তাঁদের দ্বাদশ আন্তর্জাতিক আলোকচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হল সম্প্রতি নন্দন-এর অলিন্দে। বিশ্বের ১৪টি দেশের ১৭৩ জন শিল্পী ছাড়াও অংশ গ্রহণ করেছেন এই সংস্থায় প্রশিক্ষিত ৭২-জন শিল্পী।

আলোকচিত্রের প্রকরণ উদ্ভাবিত হয়েছিল আজ থেকে ১৭৭ বছর আগে ১৮৩৯ সালে ফ্রান্সে। ভারতে এর চর্চা পৌঁছতে খুব বেশি দেরি হয়নি। গোড়ার দিকে আলোকচিত্র ব্যবহৃত হত প্রাকৃতিক তথ্যকে নথিবদ্ধ করার জন্য। স্বাভাবিকতাই ছিল এই রূপায়ণের প্রধান অভিমুখ। শুরুর পর থেকেই আলেকচিত্র হয়ে উঠেছিল চিত্রকলার প্রধান এক প্রতিদ্বন্দ্বী। চিত্রকলা মানুষের সভ্যতারই প্রায় সমান বয়সি। তার কাজ ছিল প্রকৃতির অন্তর্নিহিত সত্যকে রূপবদ্ধ করা। গ্রিস ও রোমের সভ্যতার বিকাশের পর থেকে চিত্রকলা প্রকৃতির স্বাভাবিকতাকে রূপ দেওয়ার কাজে দক্ষ হয়ে উঠল।

Advertisement

আলোকচিত্র উদ্ভাবনের পর চিত্রকলার এই দায়টি আর তত গুরুত্বপূর্ণ রইল না। ১৮৫০-এর দশকের পর থেকে চিত্রকলা নিজেকে রূপান্তরিত করতে শুরু করল। সেই রূপান্তর প্রভাবিত করল আলোকচিত্রকেও। চিত্রকলা আলোকচিত্রকে আত্মস্থ করল। আর আলোকচিত্রও চিত্রকলার ব্যাপ্তি ও গভীরতায় পৌঁছতে চাইল। ১৯৬০-এর দশকের পর থেকে এই আদান-প্রদান ক্রমশ প্রসারিত হচ্ছে।

আলোচ্য প্রদর্শনীতে আমরা আলোকচিত্রের চিত্রীয় বৈভবে সমৃদ্ধ হওয়ার অজস্র দৃষ্টান্ত দেখতে পাই। যেমন বিদেশের কয়েকটি ছবি আমরা আগে দেখব। হংকং-এর একজন শিল্পী হংওয়াই ভিক্টর চেং-এর একটি ছবির শিরোনাম ‘হার্ড লাইফ’। ছবিটি সাদা-কালো।

আলোকচিত্র ও চিত্রকলা উভয় ক্ষেত্রেই সাদা-কালোর তাৎপর্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ধূসরের নানা স্তরের ভিতর প্রকাশের যে ব্যঞ্জনা থাকে তা বহু বর্ণের প্রগলভতার তুলনায় কখনও কখনও অনেক গভীর হয়ে উঠতে পারে। আলোচ্য ছবিটিকে বলা যেতে পারে শিল্পকে শিল্পিত করে তোলার একটি আলেখ্য। একটি ‘কিউরিও শপ’-এর ভিতর বসে দুই বৃদ্ধ কারিগর একটি পাত্রের অঙ্গসজ্জা সমাপ্ত করছেন। প্রজ্ঞাদীপ্ত হাসি ছড়িয়ে আছে তাঁদের চোখে মুখে ঝলক রোদের মতো। পরিপূর্ণ স্বাভাবিকতাকে কত অলৌকিক করে তোলা যায় এ ছবি তার এক অনবদ্য দৃষ্টান্ত।

আর একটি সাদা-কালো ছবি রোমানিয়া-র টিবর জাকব-এর। শিরোনাম ‘মিউজিক্যাল বডিস্কেপ’। পরিপূর্ণ বিমূর্ত ছবি এটি। এক নারীর শরীরের একটি প্রান্তরেখা ছবিটির বিষয়। পরিপূর্ণ তমসাময় প্রেক্ষাপটে আলো ও বিন্দুমাত্রিক বুনোটে গড়া রৈখিক ছন্দের এই শরীরাংশ চিত্রের সমস্ত অভিজ্ঞানকে আত্মস্থ করে নিতে পেরেছে।

ফ্রান্সের জ্যাকি মার্টিন-এর স্বাভাবিকতা-আশ্রিত একটি রঙিন ছবির শিরোনাম ‘পেইন্টার’। এক যুবক শিল্পী রঙের টেবিলের সামনে বসে তুলি দিয়ে কিছু আঁকছেন। শিল্পীর মুখে আঁটা রয়েছে একটি কুকুরের মুখোশ। বাস্তব ও কল্পরূপের অসামান্য সমন্বয় ছবিটিতে। অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, বাংলাদেশ, সাইপ্রাস, মালয়েশিয়া ইত্যাদি বহু দেশের ছবি ছিল প্রদর্শনীতে।

‘ন্যাপ’-এর শিল্পীদের মধ্যে অরুণাভ দাসের ‘উওম্যান ইন ব্ল্যাক’ শীর্ষক ছবিটি বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করে। পরিপূর্ণ তমসাবৃত প্রেক্ষাপট। একটি মেয়ের মুখ ও বাহুর উপর শুধু আলো পড়েছে। আলোর এই রহস্যময়তা ছবিটিকে অসামান্য করেছে।

বিদ্যুৎ গোস্বামী সিল্যুটে পিছন থেকে যে নগ্নিকার ছবি তুলেছেন তাতে যেন একটু অতিকথনের ঝোঁক রয়েছে। প্রলয় বণিক তাঁর ‘বুদ্ধ’ শীর্ষক ছবিতে আলোকচিত্রকে চিত্রকলার বৈভবে অভিষিক্ত করেছেন।

পশ্চাৎপটে হিমালয়ের আবহ। সম্মুখপটে দণ্ডায়মান বুদ্ধমূর্তি। বুদ্ধের মুখমণ্ডলের ছায়াময় করুণা ছবিটিকে গভীর মাত্রায় উন্নীত করেছে।

নিসর্গের ছবি তুলেছেন অক্ষয় দালাল, বিবেক প্রসাদ, অন্তরা প্রমুখ শিল্পী।

আরও পড়ুন
Advertisement