book review

Book Review: হিন্দুত্বের রাজনীতিতে সন্তদের ভূমিকার সন্ধান

দেশ তখন ব্রিটিশ শাসনের অধীনে। দিকে দিকে প্রতিবাদের ঝড়— প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক আন্দোলনে, কিংবা শিল্পে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০২২ ০৭:১৫

হিন্দুত্ব ও হিন্দুধর্মকে আলাদা করে দেখা যায় না— লেখকের মত। তবে সেটা বড় কথা নয়। বড় কথা হল হিন্দুত্বের একটা গ্রহণযোগ্য, ইতিবাচক ও অনুকরণীয় রূপ আছে, বর্তমান সাভারকরবাদী হিন্দুত্বের গ্রাস থেকে সেই কল্যাণকামী হিন্দুত্বকে উদ্ধার করতে হবে। সাভারকরবাদী হিন্দুত্বের ধারণাই হিন্দুত্বের একমাত্র বা সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ধারণা নয়। হিন্দুত্বের ধারণা গত একশো পঁচিশ-ত্রিশ বছরে অন্তত তিন বার আমূল বদলেছে। বর্তমানে হিন্দুত্বের ধারণারও অন্তত তিন-চারটি আলাদা রূপ দেখা ও চেনা যায়। এই বহুত্ববাদী হিন্দুত্বের একটা ঐতিহাসিক ব্যাখ্যানের রূপরেখা তৈরি করেছেন লেখক। দেখিয়েছেন, উনিশ শতকের শেষ দিকে বঙ্কিমচন্দ্র এবং পরে বিবেকানন্দ ও অরবিন্দের নেতৃত্বে সাংস্কৃতিক হিন্দুত্বের যে ধারণার উত্তরণ, তা জাতীয়তাবাদী তথা উপনিবেশবাদ-বিরোধী গণআন্দোলনের প্রেরণা হলেও তাতে আলোকপ্রাপ্ত উদারবাদ ও অভ্যন্তরীণ বহুত্ববাদী কথোপকথনের যথেষ্ট পরিসর ছিল। পরে সাভারকরবাদী হিন্দুত্ব সেই পরিসর প্রায় সর্বতো ভাবে খর্ব করে হিন্দুত্বের ধারণাকে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের সঙ্কীর্ণ ও সমসত্ত্ব রাজনৈতিক তত্ত্ব হিসেবে প্রচার করতে শুরু করে। হিন্দুত্ববাদের এই দুই যুযুধান রূপের যোগসূত্র হল রাজনীতিকে জনসেবা হিসেবে অনুশীলনের আদর্শ। এই পরিপ্রেক্ষিতে চারটি অধ্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে বিভিন্ন সন্ত সম্প্রদায়ের রাজনীতিতে অংশগ্রহণের একটা ব্যাখ্যান গঠন করেছেন লেখক। তাঁর যুক্তি, হিন্দু সন্তরা বর্তমান ভারতে বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবারের নেতৃত্বে হিন্দুত্বের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করলেও সঙ্ঘ এঁদের স্বতন্ত্র সত্তাকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করতে পেরে ওঠে না। এর কারণ সন্তরা মোটের উপর রাষ্ট্রক্ষমতা দখল বা নির্বাচনে জেতাকে চূড়ান্ত লক্ষ্য হিসেবে দেখেন না, ওঁদের উদ্দেশ্য জনসেবা, মানবতার উত্তরণ।

সাধুজ় ইন ইন্ডিয়ান পলিটিক্স: ডায়নামিক্স অব হিন্দুত্ব

Advertisement

কৌশিকী দাশগুপ্ত

৫২.০০ ইউএস ডলার

সেজ পাবলিকেশনস

দেশে যাঁরা বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবার-বিরোধী শক্তপোক্ত একটা রাজনৈতিক মতবাদ গড়ে তোলার চেষ্টা করেন, সন্তদের সঙ্গে হয়তো তাঁদের একটা বোঝাপড়ায় আসতেই হবে। সেই বোঝাপড়ার গোড়ার কথা হল, সন্তরা সঙ্ঘ পরিবারের আজ্ঞাবহ নন। কৌশিকী দাশগুপ্তের বইখানির গুরুত্ব এই বিশেষ অন্তর্দৃষ্টির সবিস্তার আলোচনায়। বইটি সমকালীন রাজনীতি, ইতিহাস ও বর্তমান সমাজমানসের বিবর্তনে আগ্রহী সকল পাঠকের কাজে লাগবে।

নোবেল বক্তৃতা ১

ভাষান্তর ও সম্পা: অগ্নি রায়

৩৫০.০০

তবুও প্রয়াস

নোবেলপ্রাপ্তির খবর পেয়ে রবীন্দ্রনাথের ‘প্রায় অবিশ্বাস্য’ মনে হয়েছিল। প্রথমে ভেবেছিলেন, তারবার্তার ভাষায় হয়তো কিছু বিভ্রান্তি ঘটেছে, বা তিনিই ভুল পড়ছেন। ক্রমশ তারের বক্তব্য নিয়ে নিশ্চিত হন। পুরস্কার পাওয়ার দিনটিকে বারংবার এক ‘যাত্রা’ বলে চিহ্নিত করেছিলেন পাবলো নেরুদা, “সুদূর প্রদেশ এবং পরস্পর বিপরীত মেরুতে অবস্থিত বহু স্থান-কাল-পাত্রকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে এগিয়েছে।” বব ডিলান সাহিত্যে নোবেল পাওয়ার পর ভাবেন, তাঁর গানগুলো কী ভাবে সাহিত্যপদবাচ্য হয়! একশো কুড়ি বছর পেরিয়েও নোবেল এমন এক বিস্ময়, যাকে ঘিরে যুগ-যুগ ধরে মানুষের উচ্ছলতা একই রকম, পৃথিবীর সব প্রান্তেই। এ বইয়ের ভূমিকায় শিবাজী বন্দ্যোপাধ্যায় কূটপ্রশ্ন তোলেন: “পারিতোষিকে-পারিতোষিকে থিকথিকে আবহে কোন-সে ‘বিরলতা’ যার গুণটানে বর্তালে ‘নোবেল’-এ পণ্যমোহ/fetish-তুল্য সম্মোহ?” এক কথায় এর উত্তর সম্ভবত নেই, কিন্তু বিরলতা যে বিরলেই অর্পিত হয়, সে তো নিঃসংশয়। বিরল ব্যক্তিত্বকুলের বিরলতম প্রজ্ঞাপ্রকাশ মুহূর্ত সেচে সেরার সম্ভার অনুবাদক-সম্পাদক তুলে দিয়েছেন পাঠকের হাতে।

আনটোল্ড স্টোরিজ় অব আইপিটিএ অ্যান্ড নিরঞ্জন সেন

সম্পা: মিত্রা সেন মজুমদার, দিলীপ চক্রবর্তী

৩০০.০০

ভাষামুখ

দেশ তখন ব্রিটিশ শাসনের অধীনে। দিকে দিকে প্রতিবাদের ঝড়— প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক আন্দোলনে, কিংবা শিল্পে। তার কণ্ঠরোধ করতে মরিয়া সরকার। এমনই গণআন্দোলনের মাঝে তৈরি হল ‘ইন্ডিয়ান পিপল’স থিয়েটার অ্যাসোসিয়েশন’ (আইপিটিএ) বা ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘ। প্রধান লক্ষ্য ছিল জনসাধারণের মধ্যে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে চেতনা জাগিয়ে তোলা। বইটির চারটি অধ্যায় পড়লে বোঝা যায়, শিল্প, থিয়েটারের মাধ্যমে কী ভাবে বৈপ্লবিক বার্তা দিচ্ছিলেন নাট্য-ব্যক্তিত্বরা। যে শিল্পী একজোট হন শাসকের বিরুদ্ধে, তাঁদেরই এক জন নিরঞ্জন সেন। তাঁর কন্যা মিত্রা সেন মজুমদারের লিখেছেন, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ যখন জরুরি হয়ে পড়ল, তখন অতি সাধারণ জীবনযাপনরত মানুষটি শিক্ষকতার চাকরি ছেড়ে গণআন্দোলনে ঝাঁপ দিতে দ্বিধা করেননি। দিলীপ চক্রবর্তীর লেখা থেকে জানা যায়, নিরঞ্জন সেন ও তাঁর কমরেডদের অক্লান্ত পরিশ্রমে থিয়েটার-সহ অন্য শিল্পের মধ্য দিয়ে জনমানসে কোন ঐক্যবোধ তৈরি হয়েছিল। আমাদের অজানা এমন অনেক মানুষের কাজ, যাঁদের ছাড়া এই কৃতি ছিল অসম্ভব। নিরঞ্জন সেনের নিজের লেখায় রয়েছে আড়ালে থাকা এমনই কিছু কথা।

আরও পড়ুন
Advertisement