Book

Book Review: স্মৃতির ঝাঁপি উপুড় করে বাঙালি মনীষার তর্পণ

সংক্ষিপ্ত কাহিনিতে আবেগের মোচড়গুলি মোক্ষম, তবে পারিপার্শ্বিক চরিত্রেরা একটু আলগোছে আসে-যায়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২১ ০৫:৫৬

স্মৃতিরা ফেরারি
জগন্নাথ বসু
২৫০.০০
সপ্তর্ষি

বইয়ের নাম থেকেই পরিষ্কার, স্পষ্ট শুরুর কথাতেও, এ বই ‘নিজের সঙ্গে কথোপকথন’, ‘স্মৃতি হাতড়ে হাতড়ে আঁতের কথা টেনে বের করা’। আকাশবাণী তথা রেডিয়োর সঙ্গে বঙ্গমননে ওতপ্রোত নামজীবনটির নিজেকে ফিরে দেখা; লেখা হয়েছে লকডাউনে, বেআক্কেলে অবসরে। স্থান ও সময়ের পারম্পর্য সচরাচর রক্ষা করে না স্মৃতি, এ লেখাতেও রক্ষিত নয় তা, তবু কলমের আন্তরিকতায় ও প্রসাদগুণে হয়ে উঠেছে এক সুখপাঠ। কারণ, এই স্মৃতি ঘিরে আছে বাংলা ও বাঙালির এক কালের শ্রেষ্ঠ ও মননশীল ব্যক্তিত্ব-তর্পণ। টালা পার্কে তারাশঙ্কর, নিউ এম্পায়ারে শম্ভু মিত্র-অজিতেশ, আকাশবাণী কলকাতায় বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র-সত্যজিৎ রায়-মৃণাল সেন-হেমন্ত মুখোপাধ্যায়-উৎপল দত্ত-রবি ঘোষ-সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়’সহ কত না প্রতিভার সাক্ষাৎ, সঙ্গ, শিক্ষা। বেতার-নাটক, মঞ্চে শ্রুতিনাটককে শ্রোতৃধন্য এক শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার এই যাত্রায় মিশে আছে রোমাঞ্চ ও আক্ষেপ, সুখ ও অস্বস্তি। শুনিয়েছেন বেতারের প্রশাসনিক কাজে রায়পুরের মানা শরণার্থী ক্যাম্পে বা ভোটের আবহে সিকিমে কাজ করার অভিজ্ঞতা। আসলে সময়, সমাজ ও মানুষ, এই তিনের নিবিড় নিরীক্ষাই তো শিল্পীর কাজ, তা থেকেই বেরিয়ে আসে রবিবার নাটকের অভীক-বিভারা, দূরদর্শনের বিখ্যাত ধারাবাহিক বা এফএম রেডিয়োর ভোরের অনুষ্ঠানের জনপ্রিয়তার নেপথ্যগল্প। অল্প বয়সে অ্যাথলিট, পরে চিত্রপরিচালক হতে চাওয়া মানুষটি ক্রমে জড়িয়ে গিয়েছেন বেতার ও দূরদর্শনের বৃত্তে, ব্যক্তিগত ইচ্ছারা সমর্পিত হয়েছে সমষ্টির ইচ্ছাপূরণে। এ বই তারও কথকতা।

Advertisement

চন্দ্রাহত
তন্বী হালদার
১৪৯.০০
সৃষ্টিসুখ

‘নিটোল প্রেম’ বলে কিছু হয়? প্রেমের নিজস্ব অতৃপ্তি, অপূর্ণতা আছেই। তার উপর এমন সমাজে আমাদের বাস, যেখানে কিশোরমনে ভালবাসার রং না লাগতেই আলকাতরার পোঁচ লেপতে নেমে পড়ে কত লোক। কী এমন পাপ সে করল— হতচকিত ছেলেমেয়েরা তা বোঝার আগেই বিদ্রুপ-লাঞ্ছনায় ঘায়েল। রাতারাতি চেনা লোক অচেনা হয়, স্নেহ-প্রশ্রয় পাল্টায় কঠিন শাসনে। অনেকে ভূমিকম্পের তোলপাড় সামলে শক্ত মাটিতে পৌঁছয়। কিন্তু তন্বী হালদারের কাহিনির সোনামনের ফাটল লুকিয়ে গাঁথনি তোলে, বার বার ধ্বস্তও হয়। সোনামনের স্বামী তাকে ভালবাসেন, স্ত্রী কাজে গেলে সংসার-সন্তান সামলান। এই মৃদু, দাবিহীন প্রেম সোনামনকে আশ্বস্ত করার বদলে অস্থির করে, শিশুকন্যার সঙ্গে পিতার মধুর মুহূর্তগুলি তাকে ঈর্ষান্বিত করে। পরিণামহীন সম্পর্কে সে জড়ায়, যেন প্রথম প্রেমের তীব্রতার কশাঘাত তাকে ছুটিয়ে নিয়ে চলে। কাহিনি বৃত্তাকারে এসে দাঁড়ায় বাপের বাড়ির চিলেকোঠায়। পরিবার-জ্যেষ্ঠের দেহ শায়িত এক তলায়, উপরে কৈশোরের প্রেমিকের সামনে (অধুনা মধ্যবয়স্ক, পৃথুল) দাঁড়িয়ে তাকে নতুন প্রেমিকের নামে ডাকে সোনামন। ফের শুরু করতে চায় সেই খেলা, যাতে আচমকা ছেদ পড়েছিল। এমন খণ্ডিত সত্তার নারীপুরুষ চার দিকে। তাদের আত্মকেন্দ্রিক, খামখেয়ালি বা দুশ্চরিত্র ভাবতেই অভ্যস্ত। সাহিত্যিকের কলম তাদের অন্তর উন্মোচিত করে। কাহিনির আর একটি মাত্রা ভার্চুয়াল প্রেম— হাজার আকুতি-ভরা মেসেজের পিছনে লুকিয়ে থাকে প্রতারক, বহু মেয়ে অনেক মূল্য দিয়ে তা বোঝে। সংক্ষিপ্ত কাহিনিতে আবেগের মোচড়গুলি মোক্ষম, তবে পারিপার্শ্বিক চরিত্রেরা একটু আলগোছে আসে-যায়।

বৈপ্লবিক আন্দোলন ও মানবাধিকার
সীতানাথ হালদার
২০০.০০
পত্রাবলী

‘বিদ্রোহ’ আর ‘বিপ্লব’-এর পার্থক্য স্কুলপাঠ্যেই জানা যায়। প্রথমটির গর্ভে দ্বিতীয়টির জন্ম। লেখক দেখাচ্ছেন, ব্রিটিশ রাজ এবং তার বশংবদ জমিদার ও সামন্ত শ্রেণির বিরুদ্ধে বিদ্রোহের আগুন কী ভাবে আমূল পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষার জন্ম দিয়েছিল। শ্বেতাঙ্গদের থেকে আত্মনিয়ন্ত্রণের রাজনৈতিক অধিকার ছিনিয়ে নেয় ভারতীয়রা— লেখকের মতে, ‘বিপ্লব’। এ বইয়ের চরিত্রেরা স্বাধীনতা আন্দোলনের কিংবদন্তি, তাঁদের নিয়ে লিখতে গেলে তথ্যের দিকে যত্নবান হতে হয়, সে কাজে সতর্ক থেকেছেন লেখক। নতুন কথা বলাও জরুরি, আছে সে চেষ্টাও। গদর বিদ্রোহ ও মহারাজা নন্দকুমারকে নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা আছে, আনন্দমঠ উপন্যাসের সঙ্গে মিলিয়ে পড়া হয়েছে সন্ন্যাসী বিদ্রোহকে, ক্ষুদিরাম-সূর্য সেন-যতীন দাস’কে ঐতিহাসিক ও পারিবারিক প্রেক্ষাপটে স্থাপন করা হয়েছে। ‘আন্দোলন’ শব্দটিকে বড় করে বুঝতে চান লেখক। ভারতের ধর্মান্দোলনের প্রসঙ্গে এসেছে সন্ত সারমাদ ও স্বামী বিবেকানন্দের কথা। এতগুলি গম্ভীর বিষয়ের সমাবেশ সত্ত্বেও অতিসরল রচনাশৈলী ও আলোচনায় গভীরতার অভাব গ্রন্থটির ওজন ক্ষুণ্ণ করেছে।

আরও পড়ুন
Advertisement