Book

এক আঙুলে ঝুলে থাকাই জীবন

২০১৭ সালের জুন মাসে ক্যালিফর্নিয়ার ইয়োসেমাইট ন্যাশনাল পার্কের এল ক্যাপিটান বা এল ক্যাপ পর্বতশৃঙ্গ জয় করেন অ্যালেক্স।

Advertisement
শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২০ ০০:০১

তুমি এল ক্যাপিটান-এর চুড়োয় উঠতে চাও কেন? সাংবাদিক বন্ধুর প্রশ্নের উত্তরে অ্যালেক্স হ্যানল্ড বলেছিলেন, “কারণ কাজটা করতে পারলে আনন্দ পাব।” অ্যালেক্সের গলায় অনেকটা প্রবাদপ্রতিম পর্বতারোহী জর্জ ম্যালোরির সুর। ম্যালোরির মতো অ্যালেক্স অবশ্য পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু বরফে ঢাকা পর্বতশৃঙ্গগুলোয় চড়েন না। তিনি জয় করেন শুকনো, পাথুরে পাহাড়। তাঁর পর্বতারোহণের ঘরানা ভিন্ন। পাহাড় চড়তে পেশাদার পর্বতারোহীরা যে সমস্ত সেফটি গিয়ার ব্যবহার করেন, সেগুলির কোনওটিই ব্যবহার করেন না অ্যালেক্স, এমনকি দড়িও নয়। তিনি পাহাড় চড়েন একা, খালি হাতে। একে বলা হয় ‘ফ্রি সোলো’। অ্যালেক্স বর্তমানে এই ঘরানার শ্রেষ্ঠ পর্বতারোহী।

২০১৭ সালের জুন মাসে ক্যালিফর্নিয়ার ইয়োসেমাইট ন্যাশনাল পার্কের এল ক্যাপিটান বা এল ক্যাপ পর্বতশৃঙ্গ জয় করেন অ্যালেক্স। একা, খালি হাতে। পুরো ঘটনা ক্যামেরাবন্দি করেছিলেন বন্ধু জিমি চিন। নিজে পর্বতারোহী হওয়ার পাশাপাশি জিমি এক জন পেশাদার তথ্যচিত্র নির্মাতা। অ্যালেক্সের কীর্তি নিয়ে তৈরি তথ্যচিত্র মুক্তি পায় ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে। পরের বছর অস্কারের মঞ্চে সেরা তথ্যচিত্রেরও সম্মান পায় এটি। জিমি ছাড়াও বন্ধু মার্ক সিনট অ্যালেক্সের এল ক্যাপ জয়ের পুরো ঘটনা ও তাঁর পূর্ববর্তী প্রস্তুতির সাক্ষী ছিলেন। এল ক্যাপ জয়ের সময় অ্যালেক্সের বয়স ছিল ৩১। তবে ২৪ বছর বয়স থেকেই ক্যালিফর্নিয়ার দৈত্যের চূড়ায় পা রাখার পরিকল্পনা করছেন তিনি। বার বার ট্রায়াল ক্লাইম্ব করে নোটবইয়ে লিখে রেখেছেন প্রতিটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। একের পর এক ব্যর্থতাই তাঁকে তৈরি করেছে। জয়ের পরে এক সাক্ষাৎকারে অ্যালেক্স জানিয়েছিলেন, ২৪ বছর বয়সে এল ক্যাপকে পরাস্ত করার মতো মানসিক অবস্থা থাকলেও, আমার শরীর ততটা পাকাপোক্ত ছিল না। এল ক্যাপ ২১০০ ফুট উঁচু একটি খাড়া গ্রানাইটের দেওয়াল। খালি হাতে ওঠা অসম্ভব। সিনটের ভাষায়, এল ক্যাপে চড়ার সময় মনে হয় কাচের উপর দিয়ে হাঁটছি। তিনি অ্যালেক্সের এই অসম্ভবকে সম্ভব করার ঘটনা নিয়ে বই লিখেছেন, দ্য ইমপসিবল ক্লাইম্ব: অ্যালেক্স হ্যানল্ড, এল ক্যাপিটান, অ্যান্ড দ্য ক্লাইম্বিং লাইফ।

Advertisement

বইয়ে এল ক্যাপ জয়ের গল্পের মধ্য দিয়ে সিনট বলতে চেয়েছেন ফ্রি সোলো পদ্ধতিকে আপন করে নেওয়া পর্বতারোহীদের জীবনদর্শন। সিনটের মতে, অ্যালেক্সের মতো আরোহীদের কাছে মাটি থেকে হাজার ফুট উপরে একটি আঙুলের অবলম্বনে পাথরে ঝুলে থাকাই জীবন। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার সঙ্গে তা মেলানো যাবে না। মানুষ হিসেবে প্রাকৃতিক বাধা জয় করার সমস্ত সম্ভাবনাকে পরীক্ষা করে দেখাতেই অ্যালেক্সদের আনন্দ। অনেকটা যেমন হেনরি ডেভিড থরু লিখেছিলেন, “ডিপ লিভ অ্যান্ড সাক আউট অল দ্য ম্যারো অব লাইফ।”

দ্য ইমপসিবল ক্লাইম্ব: অ্যালেক্স হ্যানল্ড, এল ক্যাপিটান, অ্যান্ড দ্য ক্লাইম্বিং লাইফ
মার্ক সিনট
২২০.০০ (কিন্ড্‌ল সংস্করণ)
অ্যালেন অ্যান্ড আনউইন

বইয়ে অ্যালেক্সের এল ক্যাপ জয়ের ঘটনার সঙ্গে রয়েছে অ্যালেক্সের জীবনের নানা দিক। বন্ধুমহলে অ্যালেক্সকে ‘সন্ন্যাসী’ বলা হয়, তিনি জীবনে কখনও নেশার দ্রব্য সেবন করেননি। তিনি এক জন সমাজ ও পরিবেশকর্মী। বইয়ে আছে অ্যালেক্সের স্বীকারোক্তি, তিনি অটিস্টিক। তাই হয়তো এমন একরোখা।

মালতীপুথির একচল্লিশ পৃষ্ঠা
ও অন্যান্য
পশুপতি শাশমল
৩০০.০০
সপ্তর্ষি প্রকাশন

রবীন্দ্রনাথের যে সব পাণ্ডুলিপি পাওয়া গিয়েছে, তার মধ্যে ‘মালতীপুথি’ নামে পরিচিত খাতাটিই সবচেয়ে পুরনো। বিশ্বভারতীর রবীন্দ্রভবন সংগ্রহশালায় এটি রাখা আছে। আনুমানিক ১৮৭৪ থেকে ১৮৮২ পর্যন্ত কবির কৈশোর ও প্রথম যৌবনের প্রচুর রচনা এই পাণ্ডুলিপিতে। তাঁর সেই সময়ের ভাবনা ও তার বিচিত্র-জটিল প্রকাশ। বিজনবিহারী ভট্টাচার্য সম্পাদিত রবীন্দ্র-জিজ্ঞাসা-র প্রথম খণ্ডে পাণ্ডুলিপির দু’-একটি পৃষ্ঠার পুরোপুরি ঠাঁই হয়নি, যার অন্যতম একচল্লিশ পৃষ্ঠা। সেই পৃষ্ঠার লেখাজোকা নিয়েই ‘মালতীপুথির একচল্লিশ পৃষ্ঠা’ প্রবন্ধে আলোচনা করেছিলেন বিশ্বভারতীর বাংলা বিভাগের অধ্যাপক পশুপতি শাশমল। মালতীপুথি রবীন্দ্রনাথের আদিপর্বের সংস্কৃতচর্চার আকর উপাদান। তা পশুপতিবাবুর রবীন্দ্র-গবেষণার অনেকখানি জুড়ে ছিল। অনেকগুলি প্রবন্ধ লিখেছিলেন তিনি, যা তাঁর জীবদ্দশায় গ্রন্থরূপ পায়নি। সে অপূর্ণ কাজ পুত্র অতনুর হাত ধরে বাস্তবায়িত হল মালতীপুথির একচল্লিশ পৃষ্ঠা ও অন্যান্য বইয়ে। পারিবারিক খাতায় রবীন্দ্ররচনা ও রবীন্দ্রপ্রসঙ্গ এবং শেষের কবিতার কবিতা পাণ্ডুলিপি-র পরে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে লেখকের এটি তৃতীয় বই।

আরও পড়ুন
Advertisement