book review

Book Review: যত উঠেছেন, ততই তিনি একা, বহিরাগত

ইন্দ্রা নুয়ির সাফল্যের গল্প আসলে পুরুষতন্ত্রের গ্লাস সিলিং-কে চুরমার করা, শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যের বিরুদ্ধে এক ‘পার্সন অব কালার’-এর জয়ের গল্প।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২২ ০৯:১৭

মাই লাইফ ইন ফুল: ওয়ার্ক, ফ্যামিলি, অ্যান্ড আওয়ার ফিউচার
ইন্দ্রা নুয়ি
৬৯৯.০০
হ্যাশেট ইন্ডিয়া

ইন্দ্রা নুয়ির নাম সাধারণ জ্ঞানের বইয়ে ঢুকে পড়েছে। পেপসিকো-র সিইও হিসাবে। চেন্নাইয়ের মেয়ে, কলকাতার আইআইএম-এর ছাত্রীর এই শীর্ষ অভিযান কেমন ছিল, এই বইয়ের পাতায় পাতায় সে কথা বলছেন ইন্দ্রা। তিনি লিখেছেন, এই যাত্রাপথের প্রতিটি ধাপেই তিনি ছিলেন এক আউটসাইডার— বহিরাগত। কারণ, গত শতকের আশি-নব্বইয়ের দশকের আমেরিকায় কর্পোরেট-মইয়ে যত উঁচুতে উঠেছেন তিনি, তাঁর চারপাশে পেয়েছেন শুধু শ্বেতাঙ্গ পুরুষদের। যাঁরা ‘অনুজ্জ্বল রঙয়ের স্যুট পরেন, গল্‌ফ খেলেন, এক সঙ্গে মাছ ধরতে যান, হাইকিংয়ে যান, জগিং করেন’। পেপসিকো-তে তিনি যখন যোগ দেন, সংস্থার শীর্ষস্তরের পনেরোটি পদে ছিলেন এই রকম পনেরো জন পুরুষ। ইন্দ্রার করা অন্য চাকরিগুলোতেও তাই, গোটা দেশ জুড়েই তাই। ইন্দ্রা লিখেছেন, “আমার মতোই চাকরি করেন, এমন কোনও ঘনিষ্ঠ মহিলা সহকর্মী আমার কখনও ছিলেন না, এবং আমি চাকরিজীবনে আমার চেয়ে উচ্চপদস্থ কোনও মহিলাকে দেখিনি।” ইন্দ্রা নুয়ির সাফল্যের গল্প আসলে পুরুষতন্ত্রের গ্লাস সিলিং-কে চুরমার করা, শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যের বিরুদ্ধে এক ‘পার্সন অব কালার’-এর জয়ের গল্প। এবং, অবশ্যই পুঁজিবাদের তৈরি করে দেওয়া ‘আদর্শ কর্মী’র ছকটাকেও ভাঙার উপাখ্যান। তিনি উচ্চপদস্থ কর্মী, কিন্তু একই সঙ্গে মা, স্ত্রী, পরিবারের অঙ্গ। তাঁর অধীনে কাজ করতেন, এমন কর্মীদের পরিবারকে চিঠি লিখে ধন্যবাদ জানান ইন্দ্রা। কারণ তিনি জানেন, পরিবার না থাকলে কর্মীও নেই।

Advertisement

কবি কুসুমকুমারী দাশ: ফিরে পড়া অন্য চোখে
সম্পা: তপন গোস্বামী
২০০.০০
আশাদীপ

“আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে/ কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে?” পঙ্‌ক্তি দু’টি আজও সকলেরই মনের মণিকোঠায়। কিন্তু রচয়িত্রী কুসুমকুমারী দাশ অনেকাংশে বিস্মৃত। কেউ তাঁকে চিনেছেন জীবনানন্দ দাশের মায়ের পরিচয়ে। কিন্তু গত শতকের প্রথম দিকের কামিনী রায়, মানকুমারী বসু প্রমুখ নারী কবিদের ধারায় উজ্জ্বল নক্ষত্র চন্দ্রনাথ দাশের কন্যা কুসুমকুমারী। তাঁর কবিতা নিয়ে কমই চর্চা হয়েছে। কয়েক দশক আগে সুমিতা চক্রবর্তীর উদ্যোগে এই কাজ এগিয়েছিল। আলোচ্য বইটির নাম দেখে কৌতূহল জেগেছিল, এ বার হয়তো তাঁর রচনাকৌশল আলোচিত হবে; কিন্তু স্বল্প পরিসরে একটি গদ্য, নির্বাচিত কবিতা, কাব্যরীতি সম্পর্কে সম্পাদকের মুখ-নিবন্ধ, মা-বাবাকে নিয়ে জীবনানন্দের দু’টি শোকলিপি সঙ্কলিত হয়েছে মাত্র। পুত্রের কলমই বলে, এই স্বচ্ছন্দ-কবির কিছু কবিতায় মহত্ত্বের আভাস থাকলেও, সব ক্ষেত্রে সিদ্ধিলাভ হয়নি। সাংসারিক দায়দায়িত্ব ও সামাজিক কাজে ব্যস্ত থাকায় কাব্যসৃষ্টির নিশ্চিন্ত অবসরও মেলেনি। কিন্তু তাঁর প্রতিটি কবিতাতেই সেই হৃদয়বৃত্তির সাক্ষ্য, ‘নির্জনতা’য় যার উত্তরাধিকার বয়েছেন জীবনানন্দ। আশা করা যায়, অন্তত এই গ্রন্থের সূত্রে কুসুমকুমারীর হারানো কবিতা, লেখা, ব্রাহ্মসমাজের বক্তৃতা ইত্যাদি উদ্ধারের কাজে গতি আসবে।

সপ্তরতিকথা
বিশ্বজিৎ রায়
১৫০.০০
ধানসিড়ি

উনিশ শতকে গদ্যসাহিত্যের আবির্ভাবের পরে সে ধারা এতটাই প্রধান হয়ে উঠল যে, তার আগের শতকগুলির সমৃদ্ধ সাহিত্যের উত্তরাধিকারটি প্রায় ভুলতে বসল বাঙালি। শ্রীকৃষ্ণকীর্তন, চণ্ডীমঙ্গল, শিবায়ন, লোরচন্দ্রানী প্রভৃতি কাব্যের কথা বিস্মৃত না হলেও বাংলা সাহিত্য যে কেবলই বঙ্কিমচন্দ্র-রবীন্দ্রনাথের ঐতিহ্যে স্নাত নয়, তা যে একমাত্র পাশ্চাত্য থেকে আমদানি করা আধুনিকতার ধারণাতেই পুষ্ট নয়, সেই সত্যটি হয়তো তার খেয়ালে ততখানি রইল না। আলোচ্য বইটি জরুরি, কেননা তা বাংলার মধ্যযুগীয় ও প্রাগাধুনিক কথাকাব্যের বিপুল ভান্ডারটি খুলে দেয়। এই সময়কালের নানা কাব্যের টুকরোটাকরা তুলে এনে গড়ে তোলা হয়েছে সপ্তরতিকথা। যেমন, ‘মহেশ বাজিকর ও দুর্গাবাগদিনী’ শীর্ষক কথায় কালকেতু-ফুল্লরার গল্পের ছায়া আছে, যদিও তার মূল কাহিনি-ভাবনাও বহুলাংশে বদলে নেওয়া হয়েছে, বস্তুত তাকে অন্য ভাবে পড়তে চাওয়া হয়েছে। চতুর্দশ থেকে অষ্টাদশ শতকের সময় পেরিয়ে উনিশ-বিশ শতকে এসে বাঙালির যৌনতার ধারণা যে ভাবে ‘ভিক্টোরীয়’ হয়ে পড়েছে, এই রতিকথাগুলি আসলে সেই প্রেক্ষাপটে নরনারীর প্রাচীন সম্পর্কে পড়ে দেখার এক রকম চেষ্টা। বইয়ের ‘উত্তরভাষ’-এ লেখকই বলছেন, “...যদি বাংলা ভাষায় রচিত কথাকাব্য পড়া যায় তাহলে দেখা যাবে সেখানে রতি নিয়ে কতরকম প্রশ্ন ও বিলাস। এই প্রশ্নগুলিকে টেনে আনাই এই বইয়ের ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্য’।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement