Book

ভারতের ধারণাটি বিপন্ন কেন

কপিল কমিরেড্ডি ভারতীয় গণতন্ত্রের নাট্যশালায় এই হিসেব রাখার কাজটি করেছেন অতি যত্নের সঙ্গে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২০ ০০:০১

মালেভোলেন্ট রিপাবলিক

কপিল কমিরেড্ডি

Advertisement

৫৯৯.০০, কনটেক্সট

সাংবাদিকদের কাজ পদ্মপাতায় জলের মতো— সকালে যে খবরে দুনিয়া তোলপাড় হয়ে যায়, বিকেলেই সেই খবরের কাগজের পাতা চলে যায় ঠোঙা শিল্পের কাঁচামাল হতে। তবুও, তাৎক্ষণিকতার বাইরেও সাংবাদিকদের একটা মস্ত ভূমিকা আছে— সাক্ষীর ভূমিকা। রাজনীতির নাট্যশালায় তাঁরা কুশীলব নন, দর্শক। কিন্তু সেই নাটকে তাঁদের গুরুত্ব অসীম— তাঁরাই হিসেব রাখেন, দৃশ্য থেকে দৃশ্যান্তরে, বিরতির আগে ও পরে রক্ষিত হল কি না নাটকের ধারাবাহিকতা, গল্পে নতুন কোনও মোচড় এল কি না।

কপিল কমিরেড্ডি ভারতীয় গণতন্ত্রের নাট্যশালায় এই হিসেব রাখার কাজটি করেছেন অতি যত্নের সঙ্গে। ভারত নামক বহু ভাষা, ধর্ম ও পরিচিতির বিভিন্নতায় বিভক্ত এই দেশকে যে কয়েকটা ঐক্যের সুতোয় বেঁধেছিলেন রাষ্ট্রের রূপকারেরা, নরেন্দ্র মোদীর আমলে এসে কী ভাবে ছিন্ন হল সেগুলো, কমিরেড্ডি বিশ্লেষণ করেছেন। শুধু মোদীই নয়, ভারতীয় গণতন্ত্রকে যে আপসগুলো মেনে নিতে হয়েছে স্বাধীনতার সাত দশক ধরে— নেহরুর ভুল, ইন্দিরা বা রাজীবের গণতন্ত্রের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা, নরসিংহ রাও বা মনমোহন সিংহদের চরিত্রগত অগণতান্ত্রিকতা, যন্ত্রের উপরে অতি-নির্ভরশীলতা— সেই কথাগুলিও এসেছে। কমিরেড্ডির যুক্তি, প্রতিটি ভুলই এক এক করে পথ তৈরি করে দিয়েছে উগ্র হিন্দুত্ববাদের— মোদীর— উত্থানের।

বইটির বড় অংশ জুড়ে আছে মোদীযুগে ভারতের আত্মার ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার উপাখ্যান। পাশাপাশি আছে একটি আশাবাদও। তমসাঘন দুঃসময়ে দাঁড়িয়ে অনেকে নতুন করে বুঝতে পারছেন, ভারত নামক ধারণাটি কী অসাধারণ ছিল। এই উপলব্ধিই অনেককে বাধ্য করছে সেই ধারণাটিতে ফেরার চেষ্টা করতে। সেটুকুই ভরসা।

স্মৃতিকথার এ-ও এক চলন

রুশতী সেন

১২০.০০, সেরিবান

‘ঘরে-বাইরে’ ছবি প্রসঙ্গে সত্যজিৎ রায়ের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন রুশতী সেন। ছবির শেষ দৃশ্যে টোড়ি ব্যবহারের যৌক্তিকতা নিয়ে সত্যজিৎ বলেন, “আসলে সুরের ব্যাপারটা তো ঠিক মুখের কথায় বলে বোঝানো যায় না, তবে সকালের উদাস ভাবটা ছাড়াও টোড়িতে এমন একটা কিছু আমি পাই...।” সঙ্গীতবোধের নৈর্ব্যক্তিকে এই যে অনেকখানি জুড়ে-থাকা ব্যক্তি-পরিসর, যথার্থ সুররসিক যেখানে খোঁজেন যুক্তির অতীত কোনও উদ্বৃত্ত।

তেমনই এক বোধ থেকে রুশতী তাঁর গানশোনা-র স্মৃতি বা অনুভবের গল্প শুনিয়েছেন বইটি জুড়ে। রবীন্দ্রনাথের ‘চিত্ত আমার হারালো’ গানটির ‘বুকের মাঝে বজ্র বাজে’ অংশটিতে বজ্রনিনাদের জোর শৈলেন দাসের গায়নে, “বিজলির দেওয়া অবিরাম আঘাতের যন্ত্রণা।” অন্য দিকে দেবব্রত বিশ্বাসের গায়নে তা “আহত বীণার তারে বেজে-ওঠা যন্ত্রণা, আর সেই যন্ত্রণায় মিশেছিল বজ্রের শক্তিগাথা।” এ ভাবেই আলি আকবর, নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়, সত্যকিংকর ও অমিয়রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়, কৃষ্ণচন্দ্র দে, কুন্দনলাল সায়গল, শচীন দেববর্মণ, জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, সুচিত্রা মিত্র থেকে বারী সিদ্দিকী, কৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায়, গৌতম চট্টোপাধ্যায়, কবীর সুমন প্রমুখের প্রকাশ থেকে অনির্বচনীয়-কে খুঁজে আনেন রুশতী।

শ্রীরামপুর মিশনের পুঁথি সংগ্রহের ইতিহাস

প্রণব দেব

২৫০.০০, অনুষ্টুপ

উনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণ নিয়ে গবেষণা ও আলোচনা কম হয়নি। তা সত্ত্বেও এই বিষয়ে এখনও বহু তথ্যই অনুদ্ঘাটিত। তেমনই এক স্বল্প-আলোচিত ব্যক্তিত্ব শ্রীরামপুর মিশন প্রেসের নেতা উইলিয়াম কেরির সহযোগী রেভারেন্ড উইলিয়াম ওয়ার্ড। মিশন গড়ে তোলা এবং তার নানা উদ্যোগে ওয়ার্ডের বড় ভূমিকা অনস্বীকার্য। তিনি ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ ধর্মপ্রচারক, বহু যত্নে বাংলা বলা আয়ত্ত করেছিলেন, জনসমাবেশে চিত্ত আকর্ষণ করার ক্ষমতা ছিল তাঁর। তাঁর কর্মকাণ্ডের মূল্যায়ন এখনও সে ভাবে হয়নি। কাজটি করলেন শ্রীরামপুর কলেজ লাইব্রেরির প্রাক্তন গ্রন্থাগারিক প্রণব দেব। ওয়ার্ড সাহেবের বিখ্যাত জার্নালের বিষয়বস্তুর কিছু নিদর্শন উদ্ধৃত করেছেন লেখক। ‘শ্রীরামপুর মিশনের পুঁথি সংগ্রহের ইতিহাস’ শীর্ষক প্রবন্ধটিতে আলোচনা করেছেন মিশন সংগৃহীত হিন্দুর ধর্মদর্শন ও শাস্ত্রপুঁথিগুলির খুঁটিনাটি নিয়ে। বাংলা গদ্যসাহিত্যের ইতিহাসেও ওয়ার্ডের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। উনিশ শতকের সমাজ, বাংলা গদ্যসাহিত্য এবং শ্রীরামপুর মিশনের ইতিহাস নিয়ে এমন কিছু তথ্য তুলে ধরেছেন লেখক, যা নতুন করে ভাবায়।

আরও পড়ুন
Advertisement