book review

আমাদের মাপে ছেঁটে নিচ্ছি

তরুণ মুখোপাধ্যায় আগেই লিখেছেন ইয়েট্‌স্: কবি ও কাব্য নামের একটি বই, এই বইটিকে তারই প্রসারিত রূপ বলা যেতে পারে। এই বইটিতে সহ-লেখক ঋতম্ মুখোপাধ্যায়ও লিখেছেন চারটি প্রবন্ধ।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২৩ ০৯:৪৫
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

“মৃত্যুর কঠিন স্পর্শে ইয়েটসের স্মৃতি বিলুপ্ত হইবে না।... জীবনের শেষদিন পর্যন্ত আমি ইহাই স্মরণ করিব যে, আমার জীবনের সহিত বর্তমান ইউরোপের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবির স্মৃতি বিজড়িত রহিয়াছে,” লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ব্যক্তি ও স্রষ্টা উইলিয়াম বাটলার ইয়েটসকে নিয়ে বাঙালির চর্চা ও ভাল লাগা স্রেফ রবীন্দ্রনাথেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং, বিষ্ণু দে থেকে অলোকরঞ্জন দাশগুপ্তের মতো কবি-লেখকরাও ইয়েটসে মোহিত হয়েছেন, তা বলেছেনও বার বার। আলোচ্য বইটির আঠারোটি নিবন্ধে বাঙালির প্রবন্ধ কবিতা-সহ বৌদ্ধিক চর্চার অলিগলি থেকে রাজপথ কী ভাবে জুড়ে রয়েছেন ইয়েটস, তা অনুসন্ধানেরই চেষ্টা করা হয়েছে। সঙ্গে, বিশ্বসাহিত্যের চর্চিত বিষয়— ভারতীয় ঐতিহ্য, গৌতম বুদ্ধ, তন্ত্রের ছায়া কী ভাবে ইয়েটসের সৃষ্টিধর্মিতায় বার বার আদৃত হয়েছে, তা-ও ধরা রয়েছে দু’মলাটে। বাংলা অনুবাদে কী ভাবে ঘরের লোক হয়ে উঠেছেন এই আইরিশ কবি, রয়েছে সে হদিসও।

Advertisement

ইয়েট্‌স্: কবি ও কাব্যনাট্যকার

তরুণ মুখোপাধ্যায়, ঋতম্ মুখোপাধ্যায়

২০০.০০ টাকা

পুনশ্চ

বিশেষ ভাবে আগ্রহ তৈরি করে জীবনানন্দের কাব্য-দর্শনে ও ভাবনায় ইয়েটসের চলনটি কেমন, তার অনুসন্ধান প্রয়াসী অধ্যায়টি। তরুণ মুখোপাধ্যায় আগেই লিখেছেন ইয়েট্‌স্: কবি ও কাব্য নামের একটি বই, এই বইটিকে তারই প্রসারিত রূপ বলা যেতে পারে। এই বইটিতে সহ-লেখক ঋতম্ মুখোপাধ্যায়ও লিখেছেন চারটি প্রবন্ধ। পাঠকের বিশেষ প্রাপ্তি অধ্যাপক উজ্জ্বলকুমার মজুমদারের তথ্যপূর্ণ ভূমিকাটি— বাঙালির ইয়েটস-পাঠ ও চর্চার অভিমুখটি তিনি বুঝিয়ে দেন আলোচ্য বইটির পরিপ্রেক্ষিতে।

সারস্বতকুঞ্জ

চন্দ্রশেখর মুখোপাধ্যায়

ভূমিকা ও সম্পা: অরুণাংশু ভট্টাচার্য

৩৫০.০০ টাকা

আলো পৃথিবী

চন্দ্রশেখর মুখোপাধ্যায় বর্তমান বৌদ্ধিক সমাজে হয়তো অপরিচিত। কিন্তু তাঁর সময়ে উদ্‌ভ্রান্ত প্রেম শীর্ষক ‘গদ্য কাব্য’-এর জন্য যথেষ্ট পরিচিত ছিলেন। মুর্শিদাবাদের মানুষটির খ্যাতি ছিল প্রাবন্ধিক হিসেবেও। বঙ্কিমচন্দ্র ও সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত বঙ্গদর্শন, এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পাদিত নবপর্যায়ের বঙ্গদর্শন-সহ নানা পত্রিকায় লিখেছেন চন্দ্রশেখর। ১৮৮৫-তে তাঁর দশটি প্রবন্ধ নিয়ে প্রকাশিত হয় সঙ্কলন সারস্বতকুঞ্জ। সেটিরই ফ্যাক্সিমিলি সংস্করণ প্রকাশিত হল এ বার। ‘রাম বসুর বিরহ’, ‘সতীদাহ’, ‘যৌননির্ব্বাচন’, ‘বঙ্গে ধর্ম্মভাব’ ইত্যাদি প্রবন্ধ থেকে লেখকের সংস্কারমুক্ত মনের সন্ধান মেলে। সেই সঙ্গে বোঝা যায় তাঁর গভীর যুক্তিবোধ ও দর্শন-ভাবনাও। ‘কেবল ভালবাসার জন্য সতীরা পুড়িত না’, এমন মূল্যায়নে প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তনী এই লেখক তৎকালীন সমাজে নারীর অবস্থানটিও ফুটিয়ে তুলেছেন। সেই সঙ্গে, ‘যৌননির্ব্বাচন’ প্রবন্ধে নারী সম্পর্কে সমাজের যে স্ববিরোধী অবস্থান, তা-ও বোঝা যায়। মনস্বী, বিস্মৃতপ্রায় এক লেখককে নতুন করে চেনাতে বইটি সহায়ক হবে। ‘প্রসঙ্গকথা: সারস্বতকুঞ্জ’ অংশে বইটি ও লেখক সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেছেন সম্পাদক। তবে প্রবন্ধ ধরে ধরে সেগুলির নির্দিষ্ট প্রকাশকাল, টীকাটিপ্পনী ইত্যাদি খুঁটিনাটি বিষয়গুলি এখানে অনুপস্থিত।

দেবতারা, নগ্নপদে: সময়ের নিষিদ্ধ সংলাপে

হিরণ মিত্র, সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়

৪০০.০০ টাকা

কপোতাক্ষ

এক জন শিল্পী, অন্য জন লেখক। দুই সংস্কৃতি-ব্যক্তিত্বই তাঁদের সৃষ্টির মধ্য দিয়ে তৈরি করেন কথার প্রতিমা। হিরণ মিত্র আর সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়। তাঁদের কথোপকথনে উঠে আসে সময়ের নিষিদ্ধ সংলাপ, অন্তর্ঘাতের ইতিহাস আর কল্পনার হিস্টিরিয়া। যাঁর সঞ্চালনায় এই আলোচনা নির্ভার নিজস্ব ছন্দে এগিয়ে চলে, সেই দেবর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “হিরণ মিত্র আর সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়ের সাথে আমার এই সংলাপ আসলে দুটো ভিন্ন প্রজন্মের সংলাপ। সময়ের প্রয়োজনেই মুখোমুখি আমরা... ।” হিরণ মিত্র চিহ্নিত করেন আমাদের আইকন তৈরি করার অদ্ভুত ইতিহাস... যখন গৌতম চট্টোপাধ্যায় বেঁচে, তত দিন তাঁকে কিংবা তাঁর গানকে আইকন করে তোলার চেষ্টা হয়নি, বরং ঢিল মারার চেষ্টা হয়েছে, আর তাঁর মৃত্যুর পরে তাঁকে নিয়ে যখন ‘হায় হায়’ করা শুরু হল, তখনই তাঁকে আইকন বানানো আমাদের জন্য অনেক সহজ হয়ে গেল। বিষাদক্লিষ্ট ইতিহাসে ভর করেই এগোতে থাকেন সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়ও। দেবর্ষি যখন খেয়াল করিয়ে দেন সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক বা মৃণাল সেনের শতবর্ষে তাঁদের জীবন ঘিরে ‘পপুলার’ চলচ্চিত্র বানানোর প্রবণতার কথা, তখন সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় বলেন: “দানবীয় সত্যজিতের আধুনিকতা কোথায়?... তাঁর ছবি থেকে কেটেছেঁটে আজ টি-টুয়েন্টি বিপ্লব বানানো হচ্ছে।... আমরা আমাদের মত করে সুবিধেমত ঋত্বিককেও বানিয়ে নিয়েছি, তেমনি... আমরা আমাদের সুবিধেমত একটা বেঁটে মৃণাল বানিয়ে নেব...” এ এমন এক কথোপকথন— যার প্রতিটি মুহূর্তে মিশে রয়েছে রীতিমতো তর্ক উস্কে দেওয়া এক রকম চিন্তার ঝোঁক কিংবা প্রবাহ। এ বই পাঠককে আকর্ষণ করার তো বটেই, সেই সঙ্গে উত্তেজিত করার মতোও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement