book review

Review: অতিমানবিক রূপটি বাদ দিয়েই বুদ্ধের জীবনী

সেখানে বৌদ্ধশাস্ত্র থেকে আহৃত নানা প্রসঙ্গও স্বাভাবিক ভাবেই গুরুত্ব সহকারে উল্লিখিত রয়েছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২১ ০৯:৩৩
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

গৌতম বুদ্ধকে ‘অন্তরের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ মানব’ হিসাবে দেখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (‘বুদ্ধদেব’)। বাংলা ভাষায় বৌদ্ধদর্শন ও বুদ্ধ-জীবন নিয়ে একটি ধারাবাহিক চর্চার পরিসর গড়ে উঠেছে দীর্ঘ দিন ধরেই। রবীন্দ্রনাথ ছাড়াও দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিধুশেখর শাস্ত্রী, সতীশচন্দ্র বিদ্যাভূষণ-সহ আরও বহু বিশিষ্ট ব্যক্তির হাতে এই ধারাটি পুষ্ট হয়েছে। এই ধারাতেই জরুরি ছিল বুদ্ধের এমন একটি জীবনী গ্রন্থের, যে জীবনী তাঁর অতিমানবিক রূপটি বাদে, যথাসম্ভব বৌদ্ধ শাস্ত্রের বাণীর প্রতি নিষ্ঠা রেখেই তাঁর মানবসত্তাটির কথা বলবে। এই বিষয়টি নিয়ে কার্যত শিরোনাম থেকেই চর্চা করেছে আলোচ্য বইটি। এটির সঙ্কলন ও সম্পাদনায় বিশেষ ভাবে সাহায্য করেছে কে ডি পি বিক্রমসিংহের দ্য বায়োগ্রাফি অব দ্য বুদ্ধ বইটি। সিদ্ধার্থের ‘দেশ-কাল ও মাতাপিতা’ থেকে ‘বুদ্ধের মহাপরিনির্বাণ’ পর্যন্ত ত্রিশটি অধ্যায়ে বিন্যস্ত এই বইটি। সেখানে বৌদ্ধশাস্ত্র থেকে আহৃত নানা প্রসঙ্গও স্বাভাবিক ভাবেই গুরুত্ব সহকারে উল্লিখিত রয়েছে।

বুদ্ধ: মানবপুত্র গৌতম
সঙ্কলন ও সম্পা: সুমনপাল ভিক্ষু
১৭০.০০

Advertisement

সোপান

সিদ্ধার্থের গৃহত্যাগের আগের ‘মানসিক প্রস্তুতি’, তাঁর বুদ্ধত্ব লাভ, ধর্মপ্রচার, কপিলবাস্তু নগরে পুনরাগমন প্রভৃতি নানা প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা করেছে এই বইটি। এটি পড়লে গৌতমবুদ্ধ ও তাঁর ধর্ম মতের আবির্ভাব যে এই ইতিহাস এবং সমাজের পটভূমিতেই অবশ্যম্ভাবী ছিল, তা অনুধাবন করা যেতে পারে। পাশাপাশি এই বইটির এক উপরি পাওনা হল বুদ্ধের পিতৃ ও মাতৃ বংশের দু’টি তালিকা।

উনিশ শতকে আধুনিক বাংলা ভাষা গঠনে খ্রিস্টান মিশনারিদের ভূমিকা বিপুল। বাঙালি পণ্ডিত-মুনশিদের হাতে সে কাজ সম্পন্ন হলেও প্রকল্পের এক-এক জন মস্তিষ্ক ছিলেন উইলিয়াম কেরি বা হেনরি টমাস কোলব্রুকের মতো সাহেব। তাঁরা গদ্যভাষাকে প্রণালীবদ্ধ করার কাজই শুধু করেননি, গদ্যে সাহিত্যরচনাতেও ছাপ রেখেছিলেন, যা অদ্যাবধি সে ভাবে সঙ্কলিত নয়। আলোচ্য বইয়ে কাজটি করেছেন সুরঞ্জন মিদ্দে। জরুরি— কেননা, বিগত একশো বছরে দুই বঙ্গ মিলিয়ে বাইবেল নাটকের সংখ্যা প্রায় দু’শো। বড়দিন, গুড ফ্রাইডে, ইস্টার, গির্জা ও মিশন স্কুলের প্রতিষ্ঠা দিবসে তা মঞ্চস্থও হয়। খ্রিস্টধর্মগ্রন্থ ‘বাইবেল’-এর প্রভূত প্রভাব বিশ্বসাহিত্যে, তার আধারে বারাব্বাস উপন্যাস লিখে নোবেল পুরস্কারে পান সুইডিশ সাহিত্যিক পার লাগের্কভিস্ট। অসম থেকে চট্টগ্রাম, খুলনা থেকে সিউড়ি— বাংলাও সেই ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ। প্রোটেস্ট্যান্ট ও রোমান ক্যাথলিক, দুই ধারাতেই। দীর্ঘ সময়কাল সেঁচে তেমনই ৩২টি নাটক মুদ্রিত হয়েছে এ গ্রন্থে। সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের ‘শিশুতীর্থ’ কবিতা, যা জার্মানির ওবেরআমেরগাউ গ্রামে জিশু খ্রিস্টের মৃত্যুবিষয়ক প্যাশন প্লে দেখে রচিত ‘দ্য চাইল্ড’ কবিতার অনুবাদ। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে নানা ধর্মের প্রভাবের কথা বহু মনীষী বলেছেন, আকর সন্ধানের কাজ করেছেন হরপ্রসাদ শাস্ত্রী বা সুকুমার সেনের মতো বিদগ্ধ গবেষক। সেই বহুত্ববাদের সূত্রে উল্লেখযোগ্য এমন কাজ।

বাইবেল নাট্য-সঞ্চয়
সম্পা: সুরঞ্জন মিদ্দে
৪৯০.০০

নান্দনিক

প্রাচীন বিশ্বাসে প্রতি ক্রোশে বাতাস আর বুলি পাল্টায়। সমাজভাষাতত্ত্বেও সে বিশ্বাস হিসাবে রেখেই নানা কথ্যরূপ নিয়ে চর্চা হয়। নিজের অঞ্চলের ভাষাবৈচিত্র খুঁজতে গিয়েও এই মূল নীতি মাথায় রেখেই এগোন বাণেশ্বর দাস। তিনি লেখেন, “হয়তো কয়েকটা গ্রামের এদিক-ওদিক বা একটা খালের এপাশ-ওপাশ অথচ তাদের ভাষা রীতি, শব্দ প্রকরণ, ভাষার ঝোঁক টান, শব্দ ভাণ্ডার প্রভৃতির মধ্যে কত পার্থক্য!” সমুদ্র-উপকূলবর্তী অঞ্চল বলতে তিনি বেছে নিয়েছেন অখণ্ড কাঁথি মহকুমাকে। পটাশপুর, ভগবানপুর, মুগবেড়িয়া, এগরা, রামনগর, খেজুরি, রসুলপুরের উপভাষার ধ্বনিতাত্ত্বিক, রূপতাত্ত্বিক ও অন্বয়তাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য আলোচনা করেছেন; বিশেষ শব্দভান্ডার, প্রবাদ-প্রবচন, সঙ্কেত শব্দ, অনুকার শব্দ, কথ্য শব্দের তালিকা বানিয়েছেন। বইটি তাঁর এম ফিল গবেষণার গ্রন্থরূপ, তথ্যঋদ্ধ ও যথাযথ সজ্জিত, যদিও দুটো বড় সমস্যা রয়ে গিয়েছে। প্রথমত, তথ্য সমাবেশের শেষে বিশ্লেষণের অনুপস্থিতি বিস্মিত করে। দ্বিতীয়ত, বিদ্যায়তনিক গবেষণাও ‘পপুলার’ লেখালিখিতে সাধারণ পাঠকের কাছে পৌঁছয়, তা মাথায় রেখে কি বইটিকে একটু প্রাঞ্জল করা যেত না?

দক্ষিণবঙ্গের সমুদ্রউপকূলবর্তী বাংলা ভাষার রূপভেদ
বাণেশ্বর দাস
৩০০.০০

দিঘলপত্র

আরও পড়ুন
Advertisement