Book Review

একটি গান পরিণত হল বিদ্রোহের মন্ত্রে

হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সুরে আনন্দমঠ ছবির জন্য ‘বন্দে মাতরম্’ গেয়েছিলেন লতা মঙ্গেশকর। অন্য দিকে, ‘বন্দে মাতরম্’ বিদ্রোহের মন্ত্রে পরিণত হওয়ার পরে অগণিত গানে কবিতায় ওই শব্দবন্ধ ব্যবহৃত হল।

Advertisement
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২৩ ০৯:৩৩
An image of Books

—ফাইল চিত্র।

আনন্দমঠ উপন্যাস যখন সবে প্রকাশিত হয়েছে, সেই ১৮৮২ সালেই বঙ্কিমচন্দ্রকে বন্ধু নবীনচন্দ্র সেন বলেছিলেন, ‘বন্দে মাতরম্’ এক দিন ভারতের জাতীয় সঙ্গীত হবে। তাই বাংলা কথাগুলি বাদ দিয়ে সম্পূর্ণ গানটি সরল সংস্কৃতে লিখলে, আর ‘সপ্ত কোটি’-র জায়গায় ‘ত্রিংশ কোটি’ করে দিলে ভাল হয়। শুনে বঙ্কিম নিরুত্তর থেকে হুঁকো টেনেছিলেন, লিখেছেন নবীনচন্দ্র তাঁর আত্মজীবনীতে। সরলা দেবী চৌধুরানী কিন্তু ১৯০৫ সালের কংগ্রেসের অধিবেশনে ‘ত্রিংশ কোটি’ গেয়েছিলেন। সুরও বার বার বদলেছে। বঙ্কিমচন্দ্র নিজে গানটি কখনও মল্লার, কখনও মেঘমল্লার রাগে গাওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন উপন্যাসে। ১৮৮৩ সালে ন্যাশনাল থিয়েটারে আনন্দমঠ নাটকে গীত হয় তিলককামোদ রাগে, দেবকণ্ঠ বাগচির সুরে। দেশ রাগ, কাওয়ালি তালে রবীন্দ্রনাথ গানটির প্রথম দু’টি স্তবকে সুর দিয়ে শোনালে বঙ্কিম নাকি খুশি হয়েছিলেন। ১৮৯৩ সালে সেই স্বরলিপি প্রকাশিত হয়েছিল ভারতী পত্রিকায়। তবে গানের প্রথম রেকর্ডে (১৯০৫) গাওয়া হয় মল্লারে। লেখক দেখিয়েছেন, শতাধিক সুরকার সুরারোপ করেছেন বঙ্কিমের ‘বন্দে মাতরম্’ গানে। গয়াতে ১৯২২-এর কংগ্রেস অধিবেশনে বিষ্ণু দিগম্বর পালুস্কর গেয়েছিলেন কাফি রাগে। চল্লিশের দশকেও পঙ্কজ মল্লিক, দিলীপকুমার রায়, তিমিরবরণ নিজেদের মতো সুর দিয়েছেন। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সুরে আনন্দমঠ (১৯৫২) ছবির জন্য ‘বন্দে মাতরম্’ গেয়েছিলেন লতা মঙ্গেশকর। অন্য দিকে, ‘বন্দে মাতরম্’ বিদ্রোহের মন্ত্রে পরিণত হওয়ার পরে অগণিত গানে কবিতায় ওই শব্দবন্ধ ব্যবহৃত হল। গানটির সঙ্গে মানুষের আবেগ এমনই জড়িয়ে গিয়েছিল। এ বইয়ে রয়েছে মজার তথ্যও। যেমন, এইচএমভি ‘বন্দে মাতরম্’ গানের রেকর্ডে তাদের ট্রেডমার্ক কুকুরের ছবি না ছেপে, ছাপত তেরঙা পতাকা অথবা চরকার ছবি।

ভারতবর্ষে রেল চালুর পিছনে কি সত্যিই উদ্দেশ্য ছিল আধুনিক শিল্পের বিকাশ? না কি আসল উদ্দেশ্য ছিল অন্য? ঔপনিবেশিক ভারতে রেলপথ প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট, এবং কী ভাবে তা পরবর্তী কালে ঔপনিবেশিক শোষণের অন্যতম হাতিয়ার হয়ে ওঠে— তা নিয়েই এই বই। শুধু রেল চালুর অব্যবহিত পূর্বের ইতিহাসটিকেই তুলে ধরেনি, বরং ১৬৩৩ সাল নাগাদ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃক ওড়িশার বালেশ্বরে প্রথম আস্তানা তৈরি থেকে এ দেশে তাদের ‘সাম্রাজ্য’ বিস্তার এবং রেলপথের প্রতিষ্ঠা— ধাপে ধাপে প্রতিটি পর্বের আলোচনা রয়েছে। ভারতে রেলপথ নির্মাণের প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি আনা হত ব্রিটেন থেকে। এমনকি ১৮৭০ সাল অবধি ভারতে রেল চালানোর মতো উপযুক্ত কয়লা আবিষ্কৃত না হওয়ায় ব্রিটেনের নিউ কাসল থেকে কয়লাও আমদানি করা হত। তাই ভারতীয় রেলের খরচ তুলনামূলক ভাবে অনেক বেশি ছিল। তা ছাড়া রেলপথ নির্মাণে নির্বিচারে ধ্বংস করা হয়েছিল বিপুল পরিমাণ অরণ্যভূমি। এত কাণ্ড করে যে প্রকল্প নির্মিত হল, তা ভারতীয়দের কল্যাণের কাজে যত না ব্যবহৃত হয়েছিল, তার চেয়ে ঢের বেশি রক্ষা করেছিল ঔপনিবেশিক শাসকের স্বার্থ। সমগ্র ঔপনিবেশিক পর্বে ভারত জুড়ে যে লুট চলেছিল, রেল যোগাযোগ তাকে কয়েক কদম বাড়িয়ে দেয়। সামরিক ও প্রশাসনিক ভাবে ভারতকে কব্জায় রাখতেও এর কোনও বিকল্প ছিল না। তথ্য সহযোগে সেই ইতিহাসকেই তুলে ধরা হয়েছে বইটিতে।

Advertisement

ভারতে মেয়েদের কাজে যোগদানের হার দ্রুত কমছে, মজুরিও কমছে নানা পেশায়। দু’ক্ষেত্রেই জাতীয় হারের চাইতে পিছিয়ে বাংলার মেয়েরা। কাজ হারানো যেমন সঙ্কট, তেমনই উদয়াস্ত পরিশ্রম করে ‘কর্মী’ বলে গণ্য না হওয়াও বিপত্তি। মেয়েদের কাজ নিয়ে যে সমস্যাগুলো আজ সামনে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে, তার অনেকগুলিরই রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস। সেই তত্ত্ব ও তথ্য, অতীতের সেই সব বিতর্ক এক জায়গায় গুছিয়ে আনার জরুরি কাজটি করেছেন লেখিকা। সমকালীন পরিস্থিতির আলোচনার রসদ তাঁর লেখনী বরাবরই আহরণ করেছে অর্থনীতি ও মানবীবিদ্যা চর্চার ধারা থেকে। প্রাঞ্জল, প্রাণবন্ত ভাষা ও বাস্তববোধ সুখপাঠ্য করেছে সারণি-সমৃদ্ধ প্রবন্ধকেও। কৃষক, চটকল মজুর, যৌনকর্মী, গৃহপরিচারিকা, পরিযায়ী মেয়ে শ্রমিক— নারীশ্রমের নিবিড় পাঠ ছুঁয়েছে নানা দিক।

আরও পড়ুন
Advertisement