Book

সেই ছেলেটির স্বপ্ন, রাত্রিবেলায় ঘুমোতে পারা

এহেন গুণী মানুষের আত্মজৈবনিক এই টুকরো টুকরো স্মৃতিকথা পড়তে কার না ভাল লাগবে!

Advertisement
সুশীল সাহা
শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৬:১৪

রান্নায় নুন-মরিচের ব্যবহার সম্পর্কে আমরা কমবেশি অবহিত। যার সুষম প্রয়োগে খাবার হয় সুস্বাদু, আবার তারই একটু কম বা বেশি হলেই তা হয়ে যায় বিস্বাদময়। এই বইয়ের পাতায় সেই নিখুঁত ভারসাম্য।

সৌমিত্র বসু এক জন সফল অভিনেতা, দীর্ঘ কাল ‘বহুরূপী’তে ছিলেন, পরে নিজের দল গড়েছেন। নাটক লেখেন, পরিচালনা করেন। পেশায় একদা অধ্যাপক— যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য পড়িয়েছেন, আর রবীন্দ্রভারতীতে পড়িয়েছেন নাট্যকলা। পাশাপাশি, কাজের ফাঁকে ফাঁকে রেডিয়োতে করেছেন নানা রকম অনুষ্ঠান। এক জন সফল বাচিক শিল্পী হিসেবে তাঁর খ্যাতি সুবিদিত।

Advertisement

এহেন গুণী মানুষের আত্মজৈবনিক এই টুকরো টুকরো স্মৃতিকথা পড়তে কার না ভাল লাগবে! বস্তুত বড়ই মনোগ্রাহী ও সুখপাঠ্য তাঁর লেখা। বিশেষ করে অল্প কথায় বিশাল অর্থের দ্যোতনার আভাস দিতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। নাটকের চোখা চোখা সংলাপ যাঁর কলম থেকে অনায়াসে বেরিয়ে আসে, সন্দেহ নেই, তিনি বিলক্ষণ জানেন পাঠককে কী ভাবে টানতে হয়, কী ভাবে ছোট ছোট বর্ণনার মধ্যে ফুটিয়ে তুলতে হয় জীবনের বহুবর্ণ জলছবি।

নুন মরিচ

সৌমিত্র বসু

১৫০.০০

ঋত প্রকাশন

মাত্র কুড়িটি ছোট ছোট পর্বে বিভক্ত এই গ্রন্থের প্রতিটি লেখাই সুলিখিত। তাঁর দেখার চোখটাও বড্ড তীক্ষ্ণ ও মর্মভেদী। আসা যাওয়ার পথের ধার থেকেই তিনি কুড়িয়ে নিতে জানেন লেখার নানা উপাত্ত। তাঁর লেখা থেকেই দু’-একটি উদাহরণ যে না দিলে নয়! এক বার গিয়েছিলেন বঞ্চিত পথশিশুদের এক অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠানে নাটক হল ওদেরই বাছাই করা বিষয় নিয়ে। একটা ব্রিজের তলায় বসবাসরত কিছু পরিবারকে সরিয়ে জায়গাটা পরিষ্কার করতে এসেছে পুলিশ, ওই জায়গা দিয়ে মান্যগণ্য কেউ যাবেন বলে। সৌমিত্র লিখেছেন, “সে যে কী যে সত্য হয়ে উঠেছে ওদের অভিনয়, কি মরিয়া সত্য, শুধু লেখার ভাষায় আমি আপনাদের বোঝাতেই পারব না।”

নাটক শেষে ওই শিশুদের আঁকা ছবির প্রদর্শনী দেখতে গিয়ে এক জায়গায় তাঁর চোখ আটকে গেল। সবাই ছবি এঁকে তার নীচে লিখেছে তার স্বপ্নের কথা। কেননা ওদের বলে দেওয়া হয়েছিল, বিষয় হবে ‘তোমার জীবনের স্বপ্ন’। দেখা গেল, এক জন তার ছবির নীচে লিখেছে: ‘আমি রাত্তিরবেলা ঘুমোতে চাই।’ চমকে যাওযার মতোই কথা। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ছেলেটি শ্মশানে একটি চায়ের দোকানে কাজ করে। রাত দশটায় মালিক বাড়ি চলে গেলে ওর কাজ, ওই শ্মশানে ঘুরে ঘুরে সারা রাত ধরে চা বিক্রি করা। এ-ও এক ধরনের যাপনই বটে!

টেলিভিশনের একটা জনপ্রিয় মেগা সিরিয়ালে এক সময় তিনি সুপ্রিয়া দেবীর ছেলের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। দীর্ঘ দিনের এই কাজে, নানা অবকাশের গল্পে ভরা তাঁর ওই অভিজ্ঞতা। তার একটির কথা বলেই এই লেখার ইতি টানব। সৌমিত্র বসু লিখেছেন, “ফোটোগ্রাফার এসেছে ছবি তুলতে, খবরের কাগজ-টাগজের জন্যে। আমি বললাম, ও বেণুদি, আপনাতে আমাতে একটা হবে না? দুষ্টু হাসি হেসে বললেন, সুপ্রিয়া দেবীর সঙ্গে ছবি? এসো। তারপর আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। আমিও জড়িয়ে ধরলাম তাঁকে। ফোটোগ্রাফারের ক্লিক। দেবী টেবী নয়, মা আর ছেলের ছবি। সেটা কোথাও ছাপা হয়নি, আমার কাছেও নেই। ভুল বললাম, আছে। এই যে এইমাত্র আপনাদের দেখালাম।”

এমনই স্বাদু গদ্যের অপরূপ ঝলক এই ছোট্ট বইয়ের পাতায় পাতায়।

আরও পড়ুন
Advertisement