book review

এক শিল্পীর মুখচ্ছবি

বিশ শতকের চল্লিশের দশকটি ভারতীয় কলা ইতিহাসের ‘আধুনিকতাবাদী যুগ’। এই যুগকে যাঁরা নিজেদের সৃষ্টির মধ্য দিয়ে স্বাগত জানিয়েছিলেন, তাঁদের অন্যতম পরিতোষ সেন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০২১ ০৬:০৩

শিল্পী পরিতোষ সেন: সৃষ্টির রূপরেখা
মনসিজ মজুমদার
৩৫০.০০
কারিগর

বিশ শতকের চল্লিশের দশকটি ভারতীয় কলা ইতিহাসের ‘আধুনিকতাবাদী যুগ’। এই যুগকে যাঁরা নিজেদের সৃষ্টির মধ্য দিয়ে স্বাগত জানিয়েছিলেন, তাঁদের অন্যতম পরিতোষ সেন। তবে, শুধু সেই দশকের আলোয় নয়, বরং শিল্প-ইতিহাসে এই শিল্পীর বিশিষ্ট স্থানটি সন্ধানের চেষ্টা করেছে বইটি। ছ’টি প্রবন্ধে পরিতোষবাবুর শিল্পীজীবন ও তাঁর সৃষ্টিসূত্রের একটি পূর্ণাঙ্গ ধারণা দেওয়ার লক্ষ্য রয়েছে এখানে। পরিবারের আপত্তি সত্ত্বেও শিল্পী হওয়া, ১৯৪১-এ প্রথম ছবি এঁকে ২৫ টাকা রোজগার ইত্যাদি নানা গল্প, এমনকি ৮৮ বছর বয়সে এক বছরে ৮৮টি ছবি আঁকার মতো চমকপ্রদ তথ্যের সন্নিবেশ হয়েছে ‘ব্যক্তি ও ব্যক্তিত্ব’ শীর্ষক প্রবন্ধে। পাশাপাশি, পরিতোষবাবুর ছবি আদর্শ কোন খাতে বয়েছে, তারও সন্ধান রয়েছে। প্রথম পর্বে স্বদেশিয়ানা, ‘বেঙ্গল স্কুল’ আঙ্গিকে ছবি আঁকা, তার পর বিলিতি ঐতিহ্যকে নিংড়ে দেখা এবং ১৯৪৩-এ সহশিল্পীদের সঙ্গে ভারতের প্রথম শিল্পীগোষ্ঠী ‘ক্যালকাটা গ্রুপ’ প্রতিষ্ঠা, বেঙ্গল স্কুলের সঙ্গে ‘পোস্ট-ইমপ্রেশনিজ়ম’ আঙ্গিকের মেলবন্ধন ঘটানো— পরিতোষবাবুর ছবির বিবিধ বিবর্তনের চলনটি গ্রন্থলেখক ধরতে চান। প্যারিসে গিয়ে সমসময়ের শিল্প-শিক্ষায় শিক্ষিত এই শিল্পীর সাক্ষাৎ হয়েছিল পাবলো পিকাসো, কনস্টানটিন ব্রঙ্কুশ-এর সঙ্গে। পরিতোষবাবুর ছবির মূল সূত্র আঙ্গিকের সঙ্গে যে জনজীবনও, তা-ও পরিষ্কার হয় বইটি থেকে। আসে তাঁর ছবির নাগরিক চেতনার প্রসঙ্গও। ছবির জগতের সঙ্গে লেখালিখির ক্ষেত্রে পরিতোষবাবুর ভূমিকাটিরও খোঁজ করা হয়েছে এই বইয়ে। গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন পরিতোষবাবুর নিজের লেখা এবং তাঁকে নিয়ে লেখাপত্রের তালিকাটি।

Advertisement

বন্ধ দরজার টান
মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস
১০০.০০
কমলিনী

“প্রলয় পয়োধিতে দাঁড়ানো নৌকাটা কতবার ডুবুডুবু/ উল্লাস বসন্ত পেরোল এখুনি।” এমন কাব্যকথার পরে আবার ‘হাত ধরে থেকো’ শীর্ষক কবিতায় লিখেছেন, “তোমার শরীরের অংশ হয়ে বেঁচে থাকি আমি আদি অনন্ত সময়/ হাত ধরে থেকো।” মানুষের অস্তিত্বের নিরানব্বই শতাংশ সময়ই কেটেছে শিকার-জীবনকে সম্বল করে। তবু এই এক শতাংশ সময়েই মানুষ নিজেকে সর্বশক্তিমান ভেবেছে। কিন্তু মানুষ এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে নগণ্য এক প্রাণী, যা প্রমাণ হয়েছে বার বার— সেই তুষারযুগ থেকে। মণিদীপা নন্দী বিশ্বাসের কাব্যভাবনায় অতীত, বর্তমান, আগামী এক সঙ্গে মিশেছে অনুভূতি, উপলব্ধি আর বোধে। ‘চৌচির মাটির পুতুল’, ‘অন্বেষণে’, ‘কোন জন্মদিনে’, ‘শব্দবিরহ’— এমন ত্রিশটি কবিতায় আলো-আঁধারির ছোঁয়া। কবিতাগুলি পাশাপাশি ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন মধুমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়, আর রঙিন অলঙ্করণে সাজিয়েছেন সৌমিয়া দেবনাথ। ‘এ উঠোন সে উঠোন পেরোতে পেরোতে/ মায়ের ঘরের সামনে আবার দাঁড়িয়েছি/ সে বেড়ার দরজা বন্ধ এখন’ কবিতার অনুভূতিমালা মিলেমিশে ধরা দেয় মানুষের কাছে, জগতের সমীপে।

লন্ডা ডান্সার: অন্য হিজড়ের ভিন্ন ভুবন
নিলয় বসু
৫০০.০০
অনুষ্টুপ

‘লন্ডা ডান্স’ হল রূপান্তরকামীদের লাস্যময়, যৌন-উত্তেজক নাচ। পুরুষদেহধারী যে ব্যক্তিরা মেয়ে হতে চায়, মেয়েলি ভাবে বাঁচে, কিন্তু লিঙ্গ-অণ্ডকোষ ছেদন করে হিজড়ে হয়নি, চলতি বাংলায় তাদের বলা হয় ‘কোতি’। এরাই লন্ডা ডান্সার। নাচের আসর বসে প্রধানত পশ্চিম বিহার, পূর্ব উত্তরপ্রদেশ আর নেপালের তরাইয়ের এক অংশে। নিলয় বসু তাঁর বইতে দেখাচ্ছেন লন্ডা ডান্সারদের নিষ্করুণ, কদর্য জীবন। অনেক চরিত্রের মুখের কথায়, জীবনের বিবরণে সেই ছবিগুলি ফুটেছে এই বইতে। একে বলা চলে রূপান্তরকামীদের জীবনের এক অন্তরঙ্গ আখ্যানধর্মী বিবরণ। এই স্বল্প-পরিচিত, নিয়ত-অপমানিত মানুষগুলি নিজেদের সমাজ, আচার, পরিচিতি যে ভাবে ভাগ করতে অভ্যস্ত, তাকেই অনুসরণ করেছেন লেখক। সমীক্ষাধর্মী বিশ্লেষণের কোনও পরিচিত ছাঁচ কাজে লাগাননি। তাতে বইটির গঠন-কাঠামো কিছু দুর্বল হয়েছে, কিন্তু সাহিত্যধর্মী হওয়ায় সহমর্মিতা তৈরিতে অনেকটাই সার্থক হয়েছে। বইটি বহু গবেষণার রসদ জোগাবে, অনেক মানুষকে ভিন্ন যৌনতার বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনায় উৎসাহ জোগাবে, তাতে সন্দেহ নেই।

আরও পড়ুন
Advertisement