book review

আত্মজীবনীতে ধরা সমাজের রূপ

আলোচ্য সংখ্যাটির দু’টি লেখা পাশাপাশি দেখলে কথাটি হয়তো একটু সহজে বলা সম্ভব। একটি লেখা অপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়ের— তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা, অতি শিক্ষিত মা-বাবার সন্তান।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০২২ ১০:১০

প্রতীকী ছবি।

শতেক তত্ত্বকথাও যেখানে পৌঁছতে পারে না, অতি সাধারণ ভঙ্গিতে লেখা আত্মজীবনীর পক্ষে সহজে ছুঁয়ে ফেলা সম্ভব সেই বিন্দুগুলিকে। শুধু ব্যক্তিজীবনের অপ্রকাশ্য ঘটনাক্রম নয়, আত্মজীবনী স্বভাবতই আলো ফেলে সময়ের, সমাজের উপরেও। এবং, তার থেকেই বেরিয়ে আসতে পারে অতি অপ্রত্যাশিত কোনও সত্য। রাবণ পত্রিকা আটটি সংখ্যা ধরে শুধু আত্মজৈবনিক লেখাই ছেপেছে— এবং সেই সূত্রেই গড়ে তুলছে এক অমূল্য আর্কাইভস। আলোচ্য সংখ্যাটির দু’টি লেখা পাশাপাশি দেখলে কথাটি হয়তো একটু সহজে বলা সম্ভব। একটি লেখা অপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়ের— তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা, অতি শিক্ষিত মা-বাবার সন্তান। তাঁর লেখাটি পড়লে শিউরে উঠতে হয়— কী ভয়ানক পিতৃতান্ত্রিক শাসন এবং অবহেলা এমন ‘শিক্ষিত’ পরিবারের পরিসরে! কন্যাসন্তান হওয়ার কারণে অতি সাধারণ স্নেহ থেকেও বঞ্চিত তিনি, লিখেছেন অপর্ণা। অন্য দিকে, মলবাহক পরিবারের কন্যা রাঙা নায়েকের জবানিতে পরিচয় পাওয়া যায় তাঁর অকালমৃত মেথর স্বামীর— মদ্যপ, অথচ নিরক্ষর স্ত্রীকে লেখাপড়া শেখান তিনি, এই শ্রেণিতে যার কার্যত কোনও পূর্ব নজির নেই। রাঙা জানান, পুরসভার বড় অফিসারদের সামনে টেবিল চাপড়ে উত্তর দিতেন তিনি; তাঁদের সম্প্রদায়ের অতি প্রবল সব পুরুষ যখন মদ্যপ অবস্থায় নিজেদের মধ্যে মারামারি করত, লাঠি হাতে থামিয়ে দিতে পারতেন রাঙা। প্রথমে তাঁর পরিবার তাঁকে সেই জায়গাটা দিয়েছিল। মাত্র দু’টি লেখার ভিত্তিতে পরিবারের শিক্ষার স্তরের সঙ্গে নারীর ক্ষমতায়নের সম্পর্কের সাধারণ ধর্ম নিয়ে প্রশ্ন তোলা বোকামি, কিন্তু শুধু সাধারণ নিয়মের ভরসাতেই যে সমাজকে বোঝা যায় না, এটুকু বোধ হয় মনে রাখা যায়। প্রকাশচন্দ্র রায়ের ‘অঘোরকামিনী’ লেখাটির পুনর্মুদ্রণ একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন।

প্রথম খণ্ডে সাহিত্যিকদের, দ্বিতীয় খণ্ডে চিত্রকর সঙ্গীতকার ভাস্কর অভিনেতা চিত্রপরিচালক সমাজকর্মী রাজনীতিকদের আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথার আলোচনা। দুই খণ্ডে বাংলা, ভারত ও বিশ্বের বিচিত্র পরিসরে একদা-দীপ্যমান যে আলোকশিখাগুলির স্বজীবন-কথন তুলে ধরেছে পত্রিকার এই দু’টি সংখ্যা, তার ব্যাপ্তি ও গভীরতা নিয়ে ভাবতে গেলে অবাক হতে হয়— কবিতা, কথাসাহিত্য প্রবন্ধ আর পত্রসাহিত্যের ও-পারে আত্মকথন ও স্মৃতিকথনের ধারাটিও কেমন পুষ্ট ও বেগবতী, এই মানববিশ্বে। বাংলা সাহিত্যজগতের দিকপালদের পাশে কোটা শিবরাম করন্থ, লক্ষ্মণ গায়কোয়াড়, ফকিরমোহন সেনাপতি প্রমুখের জীবন-কথনের অবলোকন, আবার সার্ত্র কামু গোর্কি নেরুদা বার্ত রুসো-ও বিরাজিত সগৌরবে; দ্বিতীয় খণ্ডের বিস্তার ততোধিক সুবিপুল: বাবর থেকে চ্যাপলিন, সাবিত্রীবাই ফুলে থেকে গোদার বার্গম্যান সত্যজিৎ, ইলা মিত্র থেকে টি এন শেষন। দুই মলাটে শতাধিক আত্মকথার আলোচনা, তবু বাকি থেকে গেল আরও বেশ কিছু, যা নিয়ে কাজ হওয়া দরকার ভবিষ্যতে।

Advertisement

রাবণ (অষ্টম সংখ্যা)

সম্পা: সোমাইয়া আখতার

২২৫.০০

ছাপাখানার গলি আত্মজীবনী ১ ও ২

সম্পা: দেবাশিস সাহা

৮০০.০০ (একত্রে)

আরও পড়ুন
Advertisement