Book review: মোদী ভারতকে যে পথে নিয়ে গেলেন

২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী যখন ক্ষমতায় আসেন, তাঁর অন্যতম প্রধান প্রতিশ্রুতি ছিল দুর্নীতি দূর করা।

Advertisement
অমিতাভ গুপ্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২২ ০৭:৫২

ইন্ডিয়ান পলিটি অ্যান্ড ইকনমি: আ মিরর টু ডিফিকাল্ট টাইমস
প্রণব বর্ধন
৪৯৫.০০

ফ্রন্টপেজ

Advertisement

অধ্যাপক প্রণব বর্ধন অর্থনীতিবিদ হিসাবে প্রথম সারির, কিন্তু তিনি গজদন্তমিনারনিবাসী নন। ভারতীয় রাজনীতি এবং তার অনুসারী হয়ে অর্থব্যবস্থা কোন পথে চলছে, সে বিষয়ে নিয়মিত মন্তব্য করেন তিনি, সংবাদপত্রের সম্পাদকীয় পাতায়, পত্রিকায়, সাক্ষাৎকারে, গবেষণাভিত্তিক প্রবন্ধেও। সেই মন্তব্যে ভারতের বর্তমান শাসকদের প্রতি কঠোর সমালোচনা থাকে— কিন্তু তা কেবল রাজনৈতিক মতাদর্শগত বিরোধপ্রসূত নয়, তাঁর সমালোচনা প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই দাঁড়িয়ে থাকে তথ্য-পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে। আলোচ্য গ্রন্থটিতে সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর বিবিধ প্রবন্ধ ও সাক্ষাৎকার সঙ্কলিত হয়েছে। সেই লেখাগুলির মধ্যে ভারতের বর্তমান শাসক-রাজনীতির সমালোচনা যেমন আছে, তেমনই আছে ভারতীয় গণতন্ত্র বিষয়ক দীর্ঘমেয়াদি ভাবনা, সর্বজনীন বনিয়াদি আয় নিয়ে সওয়াল।

২০২০ সালের মে মাসে লিখিত একটি নিবন্ধে প্রণববাবু কোভিড-এর আর্থিক মোকাবিলায় মোদী সরকারের চূড়ান্ত ব্যর্থতার কথা লিখেছেন। দেশজোড়া কঠোর লকডাউন আরোপ করার সিদ্ধান্তটিও যথেষ্ট আলোচনা এবং বিবেচনা ছাড়াই করায় যে বিপত্তি ঘটেছিল, আর্থিক প্যাকেজের নামে বিপন্ন দেশবাসীর সঙ্গে নিষ্ঠুর রসিকতায় সেই বিপত্তি যে গভীরতর হবে, প্রণববাবু তা স্পষ্ট লিখেছিলেন। দু’বছর পার করে সেই কথার যাথার্থ্য নিয়ে সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই।

তাঁর আলোচনায় স্বভাবতই ফিরে ফিরে এসেছে ভারতের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির প্রসঙ্গটি। ‘গুজরাত মডেল’ নামক সোনার হরিণটির অন্তঃসারশূন্যতা বিষয়ে একেবারে গোড়া থেকে যাঁরা কথা বলছিলেন, প্রণববাবু তাঁদের অন্যতম। এই বইয়ে সঙ্কলিত একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, গুজরাতে শিল্পক্ষেত্রে দ্রুত বৃদ্ধি হয়েছে ঠিকই, কিন্তু তা যেমন কর্মসংস্থানে বিশেষ সহায়ক হয়নি, তেমনই তাতে সামাজিক কল্যাণেরও উপকার হয়নি। রাজনীতি যখন কোনও একটি অলীক ধারণাকে তুমুল ভাবে বিপণন করতে চায়, তখন সেই ধারণাটির অন্তর্নিহিত খামতি এবং বিপদের দিকে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করাই এক জন পাবলিক ইন্টেলেকচুয়ালের কাজ। প্রণববাবু সেই কাজটি করেছেন। মনে করিয়ে দিয়েছেন, এই আমলে দেশে যে গুজরাত মডেলটি প্রতিষ্ঠিত হল, তা আসলে গুজরাতে যে ভঙ্গিতে সাম্প্রদায়িক ঘৃণার চাষ হয়, সেটাই। অন্য এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, কী ভাবে হিন্দুত্বের রাজনীতি আর রাষ্ট্রীয় অতিনিয়ন্ত্রণের প্রবণতা ভারতের প্রতিটি ক্ষেত্রকে দখল করতে চাইছে।

২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী যখন ক্ষমতায় আসেন, তাঁর অন্যতম প্রধান প্রতিশ্রুতি ছিল দুর্নীতি দূর করা। অধ্যাপক বর্ধন লিখেছেন, সাঙাততন্ত্রও যে এক প্রবল দুর্নীতি, সে কথাটি ভুলে গেলে চলবে না। দুর্নীতি প্রতিরোধে রাষ্ট্রের হাতে প্রধান যে অস্ত্র, সেই সিবিআই কী ভাবে রাজনীতির দ্বারা পরিচালিত হয়, সে কথা বহুআলোচিত। স্থানীয় স্তরের দুর্নীতির প্রশ্নে চিনের সঙ্গে তুলনা করে প্রণববাবু লিখেছেন, সে দেশে স্থানীয় প্রশাসকদের পদোন্নতি হয় স্থানীয় স্তরে তাঁদের অধীনে থাকা অর্থব্যবস্থার কুশলতার উপর ভিত্তি করে। কথাগুলো পড়তে গিয়ে মনে হতে বাধ্য, ভারতের পরিস্থিতিটি সম্পূর্ণ বিপরীত— কেউ বলতেই পারেন, এখানে উন্নতির রাস্তা হল দুর্নীতিতে মদত জোগানো।

গত কয়েক বছরে ভারতের রাজনৈতিক অর্থনীতি কোন পথে চলেছে, এই বইটি স্বল্পপরিসরে তার হদিস দেয়।

আরও পড়ুন
Advertisement