ক্রেতা সুরক্ষার দ্বারস্থ হয়ে টাকা আদায় ছাত্রের

হরেক কিসিমের পণ্য ও পরিষেবা নিয়ে অভিযোগ যাচাই করে টাকা ফেরত বা ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করে ক্রেতা সুরক্ষা আদালত। এ বার এক ফেল করা ছাত্রের পরবর্তী পড়াশোনার জন্য আগাম জমা দেওয়া টাকা কলেজের কাছ থেকে আদায় করে দিল ক্রেতা সুরক্ষা দফতরই।

Advertisement
অনুপ চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৪ ১৭:৪০

হরেক কিসিমের পণ্য ও পরিষেবা নিয়ে অভিযোগ যাচাই করে টাকা ফেরত বা ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করে ক্রেতা সুরক্ষা আদালত। এ বার এক ফেল করা ছাত্রের পরবর্তী পড়াশোনার জন্য আগাম জমা দেওয়া টাকা কলেজের কাছ থেকে আদায় করে দিল ক্রেতা সুরক্ষা দফতরই।

প্রথম সেমেস্টারের ফলাফল বেরোনোর আগেই ওই ছাত্রের কাছ থেকে দ্বিতীয় সেমেস্টারের টাকা নিয়েছিল সল্টলেকের একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। ফল বেরোলে দেখা যায়, ছাত্রটি পাশ করতে পারেননি। তিনি কলেজ ছেড়ে দেন। তার পরে দ্বিতীয় সেমেস্টারের জন্য জমা দেওয়া টাকা ফেরত চেয়ে আবেদন জানান। অভিযোগ, কলেজ ছেড়ে যাওয়ার পরেও তাঁর সেই টাকা ফেরত দেওয়া হয়নি। সাত মাস ধরে ছাত্রটি বারবার টাকা ফেরতের আবেদন জানানো সত্ত্বেও কলেজ-কর্তৃপক্ষ সাড়া দেননি। কলেজের তরফে স্রেফ জানিয়ে দেওয়া হয়, সেই টাকা আর ফেরত পাওয়া যাবে না।

Advertisement

আর কোনও উপায় না-দেখে মাস তিনেক আগে রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের শরণাপন্ন হয় ওই ছাত্রের পরিবার। ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে বুধবার নিজেই জানান, তাঁদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে কলেজ-কর্তৃপক্ষ ওই ছাত্রের কাছ থেকে নেওয়া এক লক্ষ ৩৩ হাজার টাকা ফেরত দিয়েছেন।

ক্রেতা সুরক্ষা দফতর সূত্রের খবর, গড়িয়া-ব্রহ্মপুরের বাসিন্দা ওই ছাত্রের নাম অভিরূপ সেন। ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি সল্টলেকের ওই ইঞ্জিনিয়ারিং ও ম্যানেজমেন্ট কলেজে ম্যানেজমেন্টের ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি হন। প্রথম সেমেস্টারের জন্য তাঁকে দিতে হয় এক লক্ষ ৩৩ হাজার টাকা। ওই ছাত্রের বাবা পৃথ্বীশ সেন বলেন, “ব্যাঙ্ক থেকে শিক্ষা-ঋণ নিয়ে ছেলের প্রথম সেমেস্টারের টাকা দিয়েছিলাম। অক্টোবরের মাঝামাঝি ক্লাসে ঢোকার সুযোগ পায় অভিরূপ।” পৃথ্বীশবাবু জানান, ডিসেম্বরে প্রথম সেমেস্টারের পরীক্ষা হয়। টাকা দিতে দেরি হওয়ায় কলেজের ক্লাসে তাঁর ছেলের উপস্থিতির হার কিছু কম ছিল।

ছাত্রটির বাবা জানান, প্রথম সেমেস্টারের ফল বেরোনোর আগেই কলেজের তরফে দ্বিতীয় সেমেস্টারের জন্য এক লক্ষ ৩৩ হাজার টাকা জমা দিতে বলা হয়। প্রথম পরীক্ষার ফল না-দেখে পরবর্তী সেমেস্টারের জন্য টাকা দিতে হবে কেন, কলেজের কাছে তাঁরা তা জানতে চান। তার জবাবে কড়া চিঠি দিয়ে কলেজ-কর্তৃপক্ষ জানান, নির্দিষ্ট সময়ে টাকা জমা না-দিলে প্রতিদিন ৫০ টাকা জরিমানা দিতে হবে। টাকা দিতে দেরি হওয়ায় ৩০০০ টাকা জরিমানা দিতেও হয়। কিন্তু পরে দেখা যায়, অভিরূপ প্রথম সেমেস্টারে পাশ করতে পারেননি। অর্থাৎ দ্বিতীয় সেমেস্টারের পরীক্ষায় বসার সুযোগ পাবেন না তিনি। তাই গত জুনে ওই কলেজ ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে ওই টাকা ফেরত চান ছাত্রটি। অভিযোগ কলেজ-কর্তৃপক্ষ তাতে সাড়া দেননি।

অভিরূপ তার পরেই রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষা দফতরে অভিযোগ জানান। ক্রেতা সুরক্ষা দফতর কলেজ-কর্তৃপক্ষকে ডেকে পাঠান। পরে টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে কলেজে চিঠি পাঠানো হয়। ওই কলেজের ম্যানেজমেন্ট ফ্যাকাল্টির অধিকর্তা প্রদীপকুমার মিশ্র বলেন, “আমাদের প্রতিষ্ঠানের অর্থ সংক্রান্ত বিষয় দেখে অ্যাকাউন্টস দফতর। ওই ছাত্র যে আগে আবেদন করেছিল, তা জানতাম না। ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের চিঠি আসতেই ওই টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়টি অনুমোদন করা হয়।” সেই অনুসারে কলেজ-কর্তৃপক্ষ এক লক্ষ ৩৩ হাজার টাকার চেক পাঠান ওই ছাত্রের নামে। বুধবার সেই টাকা হাতে পেয়ে খুশি ছাত্রের পরিবার।

ক্রেতা সুরক্ষা মন্ত্রী সাধনবাবু জানান, রাজ্য জুড়ে এ ভাবে টাকা নিয়ে ফেরত না-দেওয়ার অনেক অভিযোগ আসছে তাঁর দফতরে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই গুরুত্ব দিয়ে সেগুলো বিবেচনা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন
Advertisement