book review

আরাবল্লী অথবা পেখম তুলে ময়ূর

এ বইয়ের লক্ষ্য অন্য— জয়পুর-সংলগ্ন শিল্পকলার রক্ষা ও সম্প্রসারণ। বন্দনা ফ্যাশন ডিজ়াইনার, গ্রামীণ কারিগরদের সেতুবন্ধনে উদ্যোগী।

Advertisement
চিরশ্রী মজুমদার 
শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৫:১৩

টেক্সটাইলস অব রাজস্থান: অ্যাট দ্য জয়পুর কোর্ট
বন্দনা ভান্ডারি
১৪৯৫.০০
নিয়োগী বুকস

নাকে নথ, পরনে ঘাগরার লহর তুলে নৃত্যের ছন্দে গ্রামবালারা, পেখম তুলেছে ময়ূর। উট বসা পথে আরাবল্লী, তার পর জঙ্গলদৃশ্য। হাতির পিঠে পার্ষদ পরিবৃত রাজপুরুষ, সে দিকে তাকিয়ে ডোরাকাটা। রাজপুতানার রূপকথা মেলে ধরে রাত্রিনীল বাঁধনি ওড়না, যার শরীরে হলদে লাল সাদা ছবির ছাপ। সে দেশের জমি যত ঊষর, তত রঙিন তার মানবের বেশ। জয়পুর সিটি প্যালেসে মহারাজা দ্বিতীয় সোয়াই মান সিংহ জাদুঘরের ‘কাপড় দ্বারা’ ঘরে, ৩০০ বছর ধরে মরুজীবনে ব্যবহৃত পোশাক, উড়ানি, পাগড়ি, শীতবস্ত্র, তাঁবু, আসবাবের ঢাকনির প্রায় ২,৫০০ নিদর্শন মজুত। জাদুঘরের সংগ্রহের খবর পৌঁছে দিতে বই প্রকাশ করছেন কর্তৃপক্ষ। বস্ত্রসঙ্কলন বিষয়ক দ্বিতীয় বইটি লিখেছেন বন্দনা ভান্ডারি।

Advertisement

অভিজ্ঞ লেখক তিনি। ফ্যাশন শিক্ষাকেন্দ্রে পড়ান ত্রিশ বছরেরও বেশি। হয়তো সে কারণে তাঁর উপস্থাপনা প্রকরণ মেনে এগোয়। ব্লক প্রিন্টিং, বাঁধনি, লহেরিয়া, ডোরি কা কাম, কুইল্টিং, খাদি, গোটা, জ়ারদৌসি— প্রতিটি অধ্যায়ে বিশেষ ধারাটির রাজস্থানে আগমন বা উৎপত্তির ইতিহাস, রং রসায়ন ও বুনন কৌশলের ব্যাখ্যা, শেষে নজর কাপড়ের নকশা, মোটিফে। জয়পুরের পুরনো তালুকে রংরেজ়দের রাস্তা, মহল্লা নীল গরন, বয়নশিল্পীর কড়ে আঙুলের লম্বা নখের রহস্য, নামগানের ছন্দে নামাবলি ছাপানোর প্রথা, ফুল রাঙ্গাই বা পোকার রস চোঁয়ানো রং পাকানোর ৫,০০০ বছরের প্রাকৃতিক ডাই-কৌশল— প্রভূত তথ্যসমাবেশ। সময়, জীবনচক্র, ঐশ্বর্য-প্রতিপত্তি, সম্মান, উৎসব, ধর্মের প্রতীক হয়ে ওঠে পোশাক— ছুঁয়ে যান বন্দনা।

আঞ্চলিক পরিচিতি হিসাবে পরিচ্ছদ নিয়ে অনুসন্ধান আগে হয়েছে। তবে, লেখকেরা পরিধানের আয়নায় সমাজ ও তার বিবর্তনের প্রসঙ্গ এনেছেন, এসেছে ইতিহাসও। শিল্প-ইতিহাসবিদ জসলিন ধামিজার লেখালিখি কাহিনিগুণেই আকর্ষণীয়। জুডি ফ্রেটার তাঁর লেখনীতে শিল্পীদের জীবনযাপন বুনে দিতে প্রত্যন্ত ভারতীয় এলাকার হাতের কাজে নজর দেয় পৃথিবী, বিপ্লব আসে ফ্যাশন বাণিজ্যে। এ বইয়ের লক্ষ্য অন্য— জয়পুর-সংলগ্ন শিল্পকলার রক্ষা ও সম্প্রসারণ। বন্দনা ফ্যাশন ডিজ়াইনার, গ্রামীণ কারিগরদের সেতুবন্ধনে উদ্যোগী।

মোগল প্রভাব সম্বলিত সোনার বুটি, জড়োয়া-মিনাকারিতে সাজানো, হাত দিয়ে চেপে তারা বসানোর কারিকুরি, কুন্দনের মতো আলো ছেটানো এমব্রয়ডারি, নর্তকী-টোপি, ভেলভেটের থালপোশ, চোগা-র জ়ারদৌসি বা চওড়া গোটার অধ্যায়গুলির জাঁক বেশি। উজ্জ্বলতম দেশের ৭০ কিসিমের লেপ-কাঁথা-রেজাই-তোশকের গল্পে ‘কুইল্টিং’ বিভাগ। পুরনো পোশাক না ফেলে সুচের ফোঁড়ে নবীকরণের ঘরোয়া পদ্ধতি জানান লেখক। কাপড় জুড়ে তার খোলে তুলো ঢেলে তৈরি হচ্ছে গায়ের ঢাকা, শৌখিন ওয়েস্টকোট, মোজা! পুনর্ব্যবহারযোগ্য পোশাকেই এখন ঝোঁক, এই অংশের গুরুত্ব ও কার্যকারিতা সর্বাধিক। বইয়ে একমাত্র এখানেই সাধারণ পরিবারের পোশাক, ব্যবহার্যের কথা আছে। বাকি অংশে দরবারি বা অভিজাত বর্গের পরিধেয় প্রসঙ্গের রাজপাট। পাতাজোড়া ছবি, প্রতিলিপি খুবই উঁচু মানের।

পরিচ্ছদের অলঙ্কারশাস্ত্রের গ্রন্থতালিকায় এটি জরুরি সংযোজন। পোশাক শিল্পের ছাত্র, ফ্যাশন ডিজ়াইনার, পিরিয়ড সিনেমার কস্টিউম বিভাগের কাছে সুসজ্জিত, রাজকীয় বইটি সমাদৃত হবে। পাদটীকা, শব্দকোষ, গ্রন্থঋণ গবেষকদের সুবিধা করে দেবে। সংগ্রহ করলে বাড়িতেই থাকবে জয়পুরের সিটি প্যালেসের মিউজ়িয়ামের একটি বনসাই-ঘর!

আরও পড়ুন
Advertisement