(বাঁ দিকে) রঘুরাম রাজন। ডি সুব্বারাও (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
চাহিদার খরা এখন শুধুমাত্র নিম্নবিত্ত কিংবা সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারগুলিও তার কবলে পড়তে শুরু করেছে, দাবি প্রাক্তন রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক গভর্নর রঘুরাম রাজনের। জানালেন, দেশের অর্থনীতিকে স্থায়ী ভাবে ঘুরিয়ে দাঁড় করাতে হলে তাই আমজনতার হাতে বাড়তি পুঁজি চাই। তখন বাড়বে চাহিদা। অন্য দিকে, স্থায়ী ভাবে দেশের উন্নতি নিশ্চিত করার কথা বলে আর এক প্রাক্তন আরবিআই গভর্নর ডি সুব্বারাও-ও জোর দিয়েছেন সাধারণ মানুষের রোজগার বৃদ্ধির উপরে। আর দুই প্রাক্তনের বক্তব্যই শেষ পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছে একটি জায়গায়, যার সার কথা হল— কর্মসংস্থান বাড়ানো ছাড়া কোনও উপায় নেই। বাজেটে তাই কেন্দ্রকে সেই পদক্ষেপ করার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।
সুব্বারাও মনে করেন, মোদী সরকারের পিছনে যে বিপুল জনসমর্থন রয়েছে, তাকে কাজে লাগিয়ে অর্থনীতিকে ধারাবাহিক ভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো পরিবর্তনগুলি আনা হোক। যার অন্যতম কাঠামোগত সংস্কার। তিনি বলেন, ‘‘জনপ্রিয়তা বাড়াতে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারগুলির মধ্যে দান খয়রাতিতে জোর দেওয়ার যে প্রতিযোগিতা চলছে, তা অর্থনীতির উন্নতির পথে বাধা। এক সময়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এর বিরোধী ছিলেন। কিন্তু পরে চুপ করে যান।’’ বিরোধী দলগুলির সঙ্গে বৈঠক করে কেন্দ্রকে এ ব্যাপারে একটি নীতি তৈরির পরামর্শ দিয়েছেন সুব্বারাও।
অন্য দিকে, বাজেট নিয়ে তাঁর প্রত্যাশার ব্যাপারে রাজন বলেন, ‘‘সাম্প্রতিক কালে অর্থনীতিতে যে ঝিমুনি এসেছে তা নিয়ে উদ্বেগের কারণ রয়েছে। এটা ঠিক যে, একটি ত্রৈমাসিকের ফল দেখে (জুলাই-সেপ্টেম্বরে আর্থিক বৃদ্ধি নেমেছে ৫.৪ শতাংশে) চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসা কঠিন। তবে মনে রাখতে হবে, অতিমারির আগে থেকেই অর্থনীতিতে ঝিমুনি ছিল। কোভিডের সময় তা আরও গভীর হয়। তার পরে সেখান থেকে গা ঝাড়া দিয়ে এগিয়েছে দেশ। কিন্তু সেটা ছিল হারানো জমি ফিরে পাওয়ার প্রক্রিয়া। এ বার দরকার ধারাবাহিক ভাবে উন্নতি নিশ্চিত করা। কিন্তু লগ্নির খরা এবং চাহিদার ঘাটতি সমস্যা তৈরি করছে। ফলে অর্থনীতির স্থায়ী উন্নতি করতে হলে চাহিদা বৃদ্ধির পাশাপাশি লগ্নি বৃদ্ধির জমি তৈরি করা জরুরি।’’
রাজন এবং সুব্বারাও দু’জনেই মনে করেন, মানুষ তখনই খরচ করবেন, যখন তা করতে স্বচ্ছন্দ বোধ করবেন। আর সেটা আসবে চাকরির সুযোগ এবং আয় বাড়লে। অনেক ক্ষেত্রে চাকরি পেলেও যে বেতন হাতে আসে, তা দিয়ে খরচ সামলানো কঠিন হয় বলে মত তাঁদের। সে ক্ষেত্রে চাহিদা বাড়লে তা মেটাতে বাড়বে বেসরকারি লগ্নিও। আগামী বাজেটে ওই লক্ষেই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের পদক্ষেপ করা উচিত বলে মনে করছেন ওই দুই অর্থনীতিবিদ।