সারা দেশ তাকিয়ে রয়েছে শনিবার জিএসটি পরিষদের বৈঠকের দিকে। —প্রতীকী চিত্র।
জীবন এবং স্বাস্থ্য বিমার প্রিমিয়ামে কর কমার হাত ধরে সাধারণ মানুষ কোনও সুরাহা পান কি না, তার জন্য সারা দেশ তাকিয়ে রয়েছে শনিবার জিএসটি পরিষদের বৈঠকের দিকে। তাদের সেই ৫৫তম বৈঠকে নেওয়া হতে পারে আরও একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত। যার মধ্যে রয়েছে প্রায় ১৪৮টি পণ্যে করের হার বদল, বিমান জ্বালানিকে (এটিএফ) জিএসটি-র অধীনে আনা এবং ‘ক্ষতিকর পণ্যে’ ৩৫% হারে কর চাপানো। সেই সঙ্গে সুইগি, জ়োম্যাটোর মতো খাবার পরিবেশনকারী অ্যাপের ক্ষেত্রে পরিষেবায় জিএসটি ১৮% থেকে কমিয়ে ৫% করা ইত্যাদি।
দেশের সকলকে বিমার আওতায় আনার কথা কেন্দ্র দীর্ঘদিন ধরে বলছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, সেই বিমাতেই যদি সাধারণ মানুষকে ১৮% কর গুনতে হয়, তা হলে লক্ষ্যপূরণ কী ভাবে সম্ভব? পাশাপাশি আবার জিনিসপত্রের চড়া হারের সঙ্গে যুঝতে থাকা আমজতাকে সুরাহা দেওয়ার কথাও বলছে বিভিন্ন মহল। ফলে সে দিক দিয়েও বিমার খরচ কমানোর যুক্তিতে প্রিমিয়ামে জিএসটি ছাঁটার দাবি উঠছিল।
এই অবস্থায় জিএসটি পরিষদের তৈরি মন্ত্রিগোষ্ঠী বিমায় কর হ্রাস নিয়ে মত জমা দিয়েছে। যা অনুসারে, জীবন বিমার টার্ম ইনশিয়োরেন্স (যেগুলিতে মেয়াদ শেষে হাতে টাকা মেলে না) ও প্রবীণদের স্বাস্থ্য বিমায় জিএসটি শূন্যে নামানোর কথা বলা হয়েছে। বাকিদের ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিমায় শূন্য করের কথাও বলা হয়েছে। তবে বিমামূল্য ৫ লক্ষের বেশি হলে এখনকার মতোই ১৮% জিএসটি বসার কথা। জিএসটি পরিষদের বৈঠকে সেই প্রস্তাব গৃহীত হলে নতুন করের হার চালু হবে।
শনিবারের বৈঠকের দিকে তাকিয়ে রয়েছে দেশের শিল্প মহলও। কারণ, ইতমধ্যে ১৪৮টি পণ্যে জিএসটি বদলের সুপারিশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ১৫০০ টাকা পর্যন্ত দামের পোশাকে ৫%, ১৫০০-১০,০০০ টাকা পর্যন্ত হলে ১৮% ও তার বেশি দামে ২৮% কর বসানোর কথা। সেই সঙ্গে ২০ লিটারের জারবন্দি জলে জিএসটি ১৮% থেকে ৫% করা, ১০,০০০ টাকার কম দামি সাইকেল ও খাতায় তা ১২% থেকে ৫% করার কথাও উঠেছে। ১৫,০০০ টাকার বেশি দামি জুতো ও ২৫,০০০ টাকার বেশি দামি ঘড়ির কর ১৮% থেকে ২৮% করার প্রস্তাব
করেছে মন্ত্রিগোষ্ঠী। এক সরকারি কর্তার দাবি ছিল, এই বদলের হাত ধরে রাজকোষে আসতে পারে বাড়তি অর্থ।
তার উপরে ওয়াশিং মেশিন-গাড়ির
মতো দামি পণ্য, ঠান্ডা পানীয়, সিগারেটের মতো ক্ষতিকর পণ্যে এত দিন ২৮% জিএসটির উপরে চাপানো হত বাড়তি সেস। তা উঠে গিয়ে ওই সমস্ত পণ্যে করের হারই ৩৫% করার প্রস্তাব দিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রিগোষ্ঠী। সে ক্ষেত্রে জিএসটির পাঁচটি স্তরের (শূন্য, ৫%, ১২%, ১৮%, ২৮%) সঙ্গে যুক্ত হবে আরও একটি (সোনা, রুপোর মতো পণ্যে ৩% জিএসটি বসে)। সেই সঙ্গে পুরনো হাতফেরতা গাড়ির কর বৃদ্ধির সুপারিশও দেওয়া হয়েছে। এই সমস্ত প্রস্তাব কার্যকর হলে সেগুলির দাম বৃদ্ধির সম্ভাবনাও থাকছে।
এর মধ্যেই অবশ্য কিছুটা কমতে পারে বাড়ি বসে খাবার অর্ডারের খরচ। কারণ, সুইগি-জ়োম্যটোয় পরিষেবা জিএসটি ১৮% (আগে মেটানো কর বা আইটিসি-সহ) থেকে কমিয়ে ৫% (আইটিসি ছাড়া) করার কথা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, সাধারণ মানুষ থেকে শিল্প— শনিবারের সিদ্ধান্তের প্রত্যক্ষ প্রভাব সকলের উপরে পড়বে। তাই এই বৈঠক যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।