Animal Sacrifice in Kali Puja

মা কি আদৌ বলি চান? পুজোয় পশুবলির কি কোনও ব্যাখ্যা রয়েছে? জানালেন নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী

মা কি তাঁর সন্তানের বলি চাইতে পারেন? তবে, মায়ের পায়ে কেন দেওয়া হয় পশুবলি? এর কি কোনও ব্যাখ্যা আছে? এ বিষয়ে সবিস্তার আলোচনা করলেন ভারতীয় মহাকাব্য ও পুরাণ বিশেষজ্ঞ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী।

Advertisement
আনন্দ উৎসব ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০২৪ ২৩:২০
প্রতীকী চিত্র (ইনসেটে: নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী)

প্রতীকী চিত্র (ইনসেটে: নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী)

কালীপুজোয় বলির রীতি চলে আসছে আজ কয়েকশো বছর ধরে। কিন্তু, পশুবলি কি সত্যিই হয় মায়ের ইচ্ছায়? মা কি তাঁর সন্তানের বলি কামনা করতে পারেন? এই প্রশ্ন উঠেছে বারবারই।

Advertisement

এই বিষয়ে ভারতীয় মহাকাব্য ও পুরাণ বিশেষজ্ঞ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ীর ব্যাখ্যা সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন রীতি সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিতে পারে। তাঁর মতে, পশুবলি বিষয়টিকে একেবারেই ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হবে। আগে, হিন্দু পরিবারে মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ ছিল। নিয়ম ছিল, একমাত্র বলির মাংসই খাদ্য হিসাবে গ্রহণযোগ্য হবে, অন্য মাংস নয়।

প্রবীণ পুরাণবিদের কথায়, “এখন আমরা নিয়ম করে বলিপ্রথা বন্ধ করেছি বটে, কিন্তু নিজেদের ভক্ষণ করার প্রয়োজনে নির্বিচারে পশুহত্যা করে চলেছি। এতে, নির্বিচারে পশুপ্রাণ ধ্বংস হয়ে চলেছে। পূর্ব প্রথা অনুযায়ী, বছরে এক বার বা দু’বার পুজো উপলক্ষে হত পশুবলি। তাতে কিছু পশুহত্যা হত ঠিকই। তবে কেবল মাত্র সেই মাংসই প্রসাদ হিসাবে ভক্ষণ করা হতো। তা ছাড়া, পশু মাংস ভক্ষণের নিয়ম ছিল না। এখন সেই পশুবলি নিয়ম করে বন্ধ করা হয়েছে বটে, কিন্তু অপর দিকে সারা বছর চলছে নির্বিচারে চলছে পশুহত্যা এবং পশুমাংস ভক্ষণ।“

অর্থাৎ, পশুহত্যার জন্য নয়, পশুহত্যা রোধের জন্যই বলিপ্রথার প্রচলন। নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ীর মতে, যথেচ্ছ নারীসঙ্গ আটকানোর জন্য যেমন বিবাহপ্রথার প্রচলন, যথেচ্ছ পশুহত্যা এবং পশুর মাংস ভক্ষণ আটকাতেই বলির প্রচলন ছিল। এমনকি, যথেচ্ছ মাদক সেবন রোধের উদ্দেশ্যেই ছিল কেবল শিবরাত্রির দিন ভাং খাওয়ার রীতি।

যা কিছু নিষিদ্ধ, তার প্রতি আকর্ষণই মানব চরিত্রের স্বাভাবিক গতি। তাই, হিন্দু ধর্মে মানুষকে কঠোর ভাবে বঞ্চিত করা হয়নি কোনও স্বাদ থেকেই। কিন্তু, তার ব্যবহারে টানা হয়েছে সীমা। মাংস খাওয়া হোক অথবা মাদক সেবন, তা আকর্ষণীয় বটে। তাই এগুলি নিষিদ্ধ করলে তার প্রতি তৈরি হবে দুর্বার আকর্ষণ। সে জন্যই নিয়ম করে এগুলির ব্যবহার সীমিত করা হয়েছিল। তাই নিয়ম বলে- বছরের বিশেষ দিনে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে অর্পণ করে তবেই গ্রহণ করতে হবে এই তথাকথিত নিষিদ্ধ বস্তুগুলি, কেবল বছরের নির্দিষ্ট দিনে। সারা বছর অপর্যাপ্ত ভাবে নয়।

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

আরও পড়ুন
Advertisement