কালীপুজো শেষে এ বার ভাইফোঁটার প্রস্তুতির পালা। তবে এ শুধু বাঙালির উৎসব নয়, অবাঙালিরাও পালন করেন ভাই দুজ। ভাইয়ের জন্য নানারকম পদ রান্না, ভাইয়ের প্রিয় মিষ্টির ব্যবস্থা করা, তার জন্য মনের মতন উপহার কেনা, আরও কত আয়োজন!
শুধু কি তাই! এ এমন এক দিন যেদিন সব ব্যস্ততা ভুলে ভাই-বোন একে ওপরের সঙ্গে সময় কাটায়।
ভাইকে ফোঁটা দিতে দিতে বাঙালির অতি প্রচলিত কবিতা, ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা/যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা/যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা/আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা— এটি প্রায় সব বাঙালি পরিবারেই বোনেরা ভাইয়ের জন্য বলে থাকে।
ভাইফোঁটার পৌরাণিক কারণ হিসাবে যম এবং যমুনার এই গল্প প্রায় সকলেই জানেন। কিন্তু জানেন কি এই ভাইফোঁটার প্রচলন নিয়ে আরও অনেক কাহিনি রয়েছে?
কিংবদন্তি অনুসারে, ভগবান কৃষ্ণ, নরকাসুর রাক্ষসকে বধ করার পর, তার বোন সুভদ্রার কাছে যান।
ভাইয়ের নিরাপদ প্রত্যাবর্তনে আনন্দিত হয়ে সুভদ্রা তাঁকে তেলের প্রদীপ, ফুলের মালা, মিষ্টি এবং কপালে সিঁদুরের তিলক দিয়ে স্বাগত জানান। এই কিংবদন্তি অনুসরণ করে ভাইয়ের সুরক্ষার জন্য ভাইফোঁটার প্রচলন হয়েছে বলেও মনে করা হয়।
শোনা যায়, ভগবান বামদেব যখন বালি মহারাজের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে বিষ্ণুরূপে আবির্ভূত হন, তখন বালি বর চেয়েছিলেন যে ভগবান বিষ্ণু যেন পাতাললোকের প্রতিটি দরজায় থাকেন। বিষ্ণু সম্মত হয়ে বালির দ্বারপালক হন।
নারদ এই সংবাদ দেবী লক্ষ্মীকে দেন, যা শুনে তিনি অত্যন্ত দুঃখিত হন। লক্ষ্মী তখন এক কৌশল ভাবেন যাতে তিনি তাঁর স্বামীকে ফিরিয়ে আনতে পারেন।
দেবী লক্ষ্মী এক দরিদ্র মহিলার রূপ নিয়ে বালির কাছে যান। তিনি গিয়ে বলেন যে তাঁর কোন ভাই নেই এবং যদি বালি তাঁর ভাই হন তাহলে তিনি খুব খুশি হবেন। এর পর বালি তাঁকে বোন হিসেবে গ্রহণ করেন এবং বলেন যে উপহারস্বরূপ তিনি যা চান তাই বালি তাঁকে দেবেন।
লক্ষ্মী তখন উত্তর দেন যে বালির সেবায় তাঁর সব কিছুই নিয়োজিত রয়েছে। দয়া করে তিনি যেন ভগবান বিষ্ণুকে মুক্তি দেন। এই ভাবে, ভগবান বিষ্ণু বালির সেবা থেকে মুক্তি পান।
আরও একটি পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী, জৈন ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা মহাবীর যখন মহানির্বাণ লাভ করেছিলেন, তখন তাঁর ভাই রাজা নন্দীবর্ধন খুব কষ্ট পেয়েছিলেন কারণ তিনি তাঁর ভাইয়ের কথা ভীষণভাবে মনে করছিলেন।
সেই সময় তাঁদের বোন সুদর্শনা রাজা নন্দীবর্ধনকে সান্ত্বনা দেন এবং এই পরিস্থিতি থেকে তাঁকে উদ্ধার করেন। মনে করা হয়, সেইসময় থেকেই ভাইফোঁটা অথবা ভাই দুজের সময়ে বোনেরা পূজনীয়। এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ