খোলা পিঠ ছুঁয়ে এক ঢাল কালো চুল। জমকালো সিল্ক, ভারী গয়নায় লাস্যময়ী। নাকে নথ, কপালে ছোট্ট টিপে উৎসবের আমেজে মজলেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত।
সাজছেন, আয়নায় পরখ করে নিচ্ছেন নিজেকে। ফোটোশ্যুটের ব্যস্ততার মাঝেই আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে উপুড় করে দিলেন পুজো নিয়ে আবেগ, স্মৃতির ঝুলি। পুজোর কটা দিন কী করবেন? “সিঙ্গাপুরে গেলেই ১৫ দিনের নিভৃতবাস। পুজোটা মোটেই সে ভাবে কাটাতে চাই না,” খোলাখুলি বলছেন কন্যে।
তাঁর পায়ের তলায় সর্ষে। কখনও সিঙ্গাপুরে, কখনও বা কলকাতায়। এ বছর পুজোর সময়টায় উড়ে যেতে হতে পারে আরব সাগরের তীরে। কিন্তু ওই চারটে দিন ঢাকের আওয়াজ, ধুপ-ধুনোর গন্ধ ছেড়ে দূরে? নৈব নৈব চ!
ঋতুপর্ণার নিজের কথায়, “মুম্বইয়ে একটা শ্যুটিংয়ের কথা হয়ে আছে। সেটাও একটু বদলানোর চেষ্টা করছি। যাতে পুজোর ক’টা দিন একটু আমার মতো করে, আমাদের বাঙালিয়ানার চেনা স্বাদে কাটাতে পারি। চেষ্টা করব পুজোর সময়টায় কলকাতাতেই থাকতে।”
বাঙালিয়ানার কথা বলছিলেন। নিমেষে সেই ছোঁয়াই উঠে এল সাজেও। কপালে বড় লাল টিপ, সিঁথি ভরা সিঁদুর আর টকটকে লাল বেনারসি। যত্ন করে গলায় পরে নিলেন জমকালো হার, হাতে মানতাসা। একেবারে খাঁটি বঙ্গনারী। এবার পুজোয় এ সাজেই যে নিজেকে দেখতে চান ঋতুপর্ণা।
টকটকে লাল শাড়ি। গায়ে জড়াতেই উচ্ছ্বাস স্পষ্ট নায়িকার চোখে-মুখে। নানা ভঙ্গিতে ক্যামেরার সামনে মেলে ধরলেন নিজেকে। নিজেই বলছেন, “এবার আমি অনেক বেশি জোর দিচ্ছি একটু অন্য রকম, অভিনব, সাবেকি সাজের উপরেই।”
একের পর এক ছবিতে দাপটে কাজ করছেন। ছুটে বেড়াচ্ছেন টলিউড থেকে বলিউড। একাধিক ছবি, একাধিক চরিত্র। নিজেকে মানিয়ে নিচ্ছেন। পাচ্ছেন প্রশংসাও।
সে তো হল! কিন্তু বরাবর এমন ছিপছিপে চেহারার রহস্য কী? প্রশ্ন শুনেই হেসে কুটিপাটি ঋতুপর্ণা। শাড়ির কুঁচি ঠিক করতে করতেই জবাব এল- “ডায়েট আমি একদমই করি না। আমি খেতে ভীষণ ভালবাসি।”
ফোন বাজছে। খানিক থামলেন ঋতুপর্ণা। ওপারে সিঙ্গাপুর থেকে মেয়ে রিশোনা। খানিক কথা সেরেই ফিরলেন খাওয়াদাওয়ার গল্পে। বললেন, “কোনও দিনই খুব একটা জিমেও যাই না। তবে হ্যাঁ, চেষ্টা করি পরিমাণ মতো খেতে, এবং একটু হলেও শরীরচর্চা করতে।”
ফোটোশ্যুটের মাঝেই কাজের তাড়া। ছবির পরিচালক এসে বসে রয়েছেন। হালকা ক্রিম রঙা জমিতে চওড়া সোনালি পাড়ের শাড়ি। ঋতুপর্ণা, নাকি অনন্যা? হালকা ঢেউ খেলানো চুল জড়ো হল খোঁপায়। সঙ্গে কানে মানানসই দুল, গলায় লম্বা হার।
ক্রিম ছেড়ে এবার হালকা হলুদ শাড়ি। সঙ্গে সাদা ব্লাউজ। ঠোঁটে গাঢ় লাল লিপস্টিক, চোখে ধূসর রঙের পরত। গাঢ় হল চোখের ভাষা। শাড়ির হলুদ ততক্ষণে মিলেমিশে গিয়েছে সোনারং ত্বকে।
পুজোর সকালে এমন রঙের শাড়িই তাঁর পছন্দের। বারবার আয়নায় দেখে নিচ্ছিলেন নিজেকে। মুখে লেগে এক টুকরো হাসি লেগে।
আর পুজোর প্রেম? প্রশ্ন ছুড়ে দিতেই খানিক থেমেছেন। একটু যেন ভেবে বললেন, “আমাদের ছোটবেলায় পুজোর প্রেম ছিল প্যান্ডেলের প্রেম। মানে প্যান্ডেল বাঁধা থেকে শুরু। আর দশমী কাটলে শেষ। তার পরে যে যার জীবনে ফের ব্যস্ত হয়ে পড়া।
ফোটোশ্যুট নাকি উৎসব? সবটাই যেন মিলেমিশে এক ঋতুপর্ণার মনে। শাড়ি, গয়না, রূপটানের মধ্যেই খুঁজে নিচ্ছেন পুজোর গন্ধ!
পোশাক, রূপটান, সাজ: প্রিয়াঙ্কা সুরানা। স্থান: পারমিতা।