লক্ষ্মীপুজোর গল্প ভাগ করে নিলেন তনুশ্রী
লক্ষ্মীপুজো নিয়ে অনেক স্মৃতি। অনেক মজার মজার ঘটনা। আমাদের বাড়ির পুজো বলতে দু'টি। লক্ষ্মী আর সরস্বতী পুজো। ছোটবেলায় যৌথ পরিবার। দেখতাম, পুজোর দু'দিন আগে থেকে ঠাকুমা বসে গিয়েছেন নাড়ু বানাতে। তিলের নাড়ু, নারকেলের নাড়ু হচ্ছে। কখনও গুড়ের পাক, কখনও চিনির। এক জন বসে মুড়কিতে পাক দিচ্ছে। এ সব আজও আমাদের বাড়িতে তৈরি হয়। আর রান্না হত ভোগ। খিচুড়ি, লাবড়া, তরকারি, পায়েস, মিষ্টি আর ইলিশ মাছ। হ্যাঁ, আমরা বাংলাদেশের। আমাদের বাড়িতে কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর দিন দেবী প্রতিমা আসে। তাকে সাজিয়ে গুছিয়ে পুজো করি। কলাগাছকে শাড়ি পরিয়ে পুজো হয় না। ওই দিনই বাড়িতে অলক্ষ্মী বিদায়ও হতে দেখেছি।
যৌথ পরিবারে আমি প্রথম সন্তান। বাড়ির বড় মেয়ে। আমার পরে আমার বোন আর কাকার দুই মেয়ে পিঠোপিঠি। আমার উপরে সারা বাড়িতে আলপনা দেওয়ার দায়িত্ব ছিল। অত বড় বাড়ি। প্রতি ঘরে ঘরে আলপনা দেওয়া চাট্টিখানি কথা! তার উপরে তিন বোনের দৌরাত্ম্য। আমি একটি ঘরে আলপনা এঁকে বেরোচ্ছি। পরের ঘরের লক্ষ্মীর পা আঁকতে আঁকতে আগের আলপনা মুছে দিচ্ছে বোনেরা। দেখে মাথায় হাত আমার। যাঃ! ঘরের সামনে আঁকা দেবীর পা মুছে গেল, লক্ষ্মী আসবেন তো? রাগের চোটে প্রায় কেঁদে ফেলার জোগাড়। মা-কাকীমারা তখন বোঝাতে বসতেন, ওরা ছোট বোন। না বুঝে মুছে দিয়েছে। কিচ্ছু হবে না।
আমার লক্ষ্মীপুজো মানে আমার দাদুর হাতে লেখা বাজারের ফর্দ। প্রতি বছর পুজোর পরে সেটা যত্ন করে তুলে রাখা থাকে আলমারির লকারে। জিনিসের দামগুলো বছরে বছরে বদলেছে। কিন্তু আজও পুজোর উপকরণ আসে দাদুর লেখা ফর্দ দেখেই। এত বছরের পুরনো সেই কাগজের ভাঁজ খুললেই যেন দাদুকে দেখতে পাই। আর আছে মায়ের ঘট ভাঙা পয়সা। সেটা আবার ঠাকুমার তৈরি করা রীতি। পরে মা সেই নিয়ম মেনে আসছেন। মায়ের একটা লক্ষ্মীর ভান্ডার থাকে। সেখানে সারা বছর টাকা-পয়সা জমানো হয়। লক্ষ্মী পুজোর আগে সেই ঘট ভাঙা হয়। সেই পয়সা দিয়ে হয় পুজো। সেটা যদিও ঠাকুমার আমলের গপ্পো। এখন মায়ের লক্ষ্মীর ভান্ডারের সঙ্গে মিশে যাই আমরা, জ্যান্ত লক্ষ্মীরাও। আমাদের হাত দিয়ে দেবী মা তাঁর ভান্ডার সমৃদ্ধ করেন। খরচ বাড়ায় তাতে যোগ হয় আমাদের দেওয়া টাকাও।