‘সারা দিন আমার হা-পিত্যেশ, কখন পুজো শেষ হবে। ভোগ খাব!’
জানবাজারে রানি রাসমণির বাড়িতে বেশ ধুমধাম। উপলক্ষ কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো। রাত জেগে, উপোস করে বাঙালির ঘরে ঘরে সমৃদ্ধির দেবীর আরাধনা। ছোট পর্দার দৌলতে সবার কাছে এখনও দিতিপ্রিয়া রায় ‘রানিমা’। ফলে, সবার কৌতূহল কী ভাবে লক্ষ্মী বন্দনা করি? এ বছর দু’দিন ধরে লক্ষ্মীপুজো। কেউ কেউ উদ্যাপন করবেন মঙ্গলবার। আমাদের বাড়িতে অর্থাৎ দিতিপ্রিয়ার বাড়িতে পুজো হবে বুধবারে। ছোট থেকে দেখে আসছি, মা খুব নিষ্ঠা ভরে ধনসম্পদের দেবীর আরাধনা করে আসছেন। যদিও আমাদের বাড়িতে বেশি ধুমধাম হয় গণেশ আর সরস্বতী পুজোয়। বেশি জাঁকজমক হত তখন, যখন আমরা যৌথ পরিবারে থাকতাম।
সেখানে আমাদের সঙ্গে কাকা-জ্যাঠা মিলিয়ে বিশাল বাহিনি। পুজো বাড়ি মানেই ছোটদের হইচই। বড়দের ব্যস্ততা। আমার বাবারা বাংলাদেশের। তাই দেবীর ভোগে ইলিশ মাছ থাকবেই। এ দিকে আমার মা খাঁটি ঘটি। তাই যখন নিজের সংসার হয়েছে মা বাকি সব নিয়ম মানলেও আমিষ ভোগের চল আস্তে আস্তে উঠিয়ে দিয়েছেন। এখন দেবীর ভোগে থাকে খিচুড়ি, লাবড়া, পোলাও, ফুলকপি বা নিরামিষ তরকারি, ভাজা, চাটনি পায়েস। ফল, মিষ্টি তো থাকবেই। মায়ের রান্না করা ভোগ অতুলনীয়। সারা দিন আমার হা-পিত্যেশ, কখন পুজো শেষ হবে। ভোগ খাব!
লক্ষ্মীপুজো আমার খুব প্রিয়। কেন জানেন? সারা দিনে আমার একটাই কাজ। আলপনা দেওয়া। আমি তো হাতে-পায়ে ভীষণ লক্ষ্মীমন্ত! মা তাই ভয়ে পুজোর কাজ, প্রতিমার ধারপাশে ঘেঁষতেই দেন না। যদি উল্টোপাল্টা কিছু করে দিই। তাই ঘর পরিষ্কার করে আলপনা দিয়েই ছুটি আমার। পুজো উপলক্ষে বাড়িতে আত্মীয়রা আসেন। বন্ধু-বান্ধবেরা আসে। চুটিয়ে সবার সঙ্গে আড্ডা দিই। এ বছর যদিও আমন্ত্রিতের সংখ্যা সীমিত। কারণ, অতিমারি। তবু কিছু জন তো আসবেনই। আমি সকাল থেকে মুখে হাসি নিয়ে সবার প্রতীক্ষায় থাকব। আপ্যায়ন জানাব। এ বছরের পুজোয় তেমন ভাবে কোথাও বেরনো হয়নি। ফলে, নতুন জামা পরা হয়নি। শাড়িও পরতে পারি। পরলে ধুতির ভঙ্গিতে পরব। সেটা সামলানো সহজ। নইলে, আমি যা! জানেন, দুর্গাপুজোর উদ্বোধনে গিয়ে ধপাস করে পড়ে গিয়েছি! ভাগ্যিস শাড়ি ছিল না সেদিন। মান-সম্মান নিয়ে ফিরতে পেরেছিলাম!
এত কিছুর পরেও একটাই আক্ষেপ, অভিনয়সূত্রে ‘আমার বাড়ি’ বলে চিহ্নিত জানবাজারের বাড়ির লক্ষ্মীপুজো আজও দেখা হল না। আসল ‘রানিমা’র বাড়ির দুর্গাপুজো আর দেবী জগদ্ধাত্রীর আরাধনা নিজের চোখে দেখেছি। ইদানীং আর শ্যুট করতে দেওয়া হয় না জমিদার বাড়িতে। ধারাবাহিকে অনেক দিন নেই। তবু আমার আবদারে এ বছরেও পুজোর আগে সেই বাড়িতে ক্যামেরা আর আমি দু’জনেই ছিলাম!