Aindrila Sharma

Durga Puja 2021: পুজোর চার দিন আগে কেমো থেরাপি! তাতে কী? আসছে বছর সব হবে

এত সাজতাম, হুল্লোড়ে মাততাম অথচ একটা পুজো-প্রেম নেই আমার জীবনে!

Advertisement
ঐন্দ্রিলা শর্মা
ঐন্দ্রিলা শর্মা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৩:০৭
‘‘সবাই বলেন, লাল রং নাকি আমায় মানায় ভাল।’’

‘‘সবাই বলেন, লাল রং নাকি আমায় মানায় ভাল।’’

ভিজে ভিজে হাওয়াতেও কী ভীষণ পুজো পুজো গন্ধ! চারিদিকে উৎসবের আমেজ। অতিমারি এখনও ঠিক মতো বিদায় নেয়নি। তবু বচ্ছরান্তে সবার মুখগুলো বেশ ঝলমলে। দেখলেই মন ভাল হয়ে যাচ্ছে। সবাই নিজের মতো করে কেনাকাটা সারছেন। পুজোর আয়োজন গুছোচ্ছেন। অনেকে বেড়াতে যাবেন বলে ঠিক করেছেন। আমি? আমার মতো করে আনন্দ করব। ১১ অক্টোবর থেকে পুজো। ৬ অক্টোবর আমার কেমো থেরাপি। মনটা একটু খারাপ। বুকটা ধুকপুক করছে। যদি সুস্থ না থাকি?

এ সব ভয় আমার বেশিক্ষণের নয়। শরীর যদি তাজা না থাকে, মজা তোলা থাকবে পরের বছরের জন্য। আর যদি সুস্থ থাকি? জমিয়ে উপভোগ। বেশ কয়েকটি পোশাক কেনা হয়ে গিয়েছে পুজো উপলক্ষে। সব্যসাচী (চৌধুরী) হলুদ রঙের একটি কুর্তি দিয়েছে। সারা বছর ও ব্যস্ত। পুজোর ক’টা দিন আমরা সারাক্ষণ একসঙ্গে। আর ছোট পিসি, মাসি পুজোর জামা দিয়েছেন। ছোট পিসির কাছ থেকে একটা টুকটুকে লাল রঙের পা ছোঁয়া ড্রেস নিয়েছি। সবাই বলেন, লাল রং নাকি আমায় মানায় ভাল।

Advertisement
‘‘৬ অক্টোবর আমার কেমো থেরাপি। বুকটা ধুকপুক করছে। যদি সুস্থ না থাকি?’’

‘‘৬ অক্টোবর আমার কেমো থেরাপি। বুকটা ধুকপুক করছে। যদি সুস্থ না থাকি?’’

গত বছরের মতো এ বারের পুজোও বাড়িতেই কাটবে। গত বছর ছিল অতিমারি। এ বছর আমার অসুস্থতা। মা-বাবা, সব্যসাচী, দিদি, বন্ধু-বান্ধব মিলে বাড়িতেই প্রচুর লোকজন। সবাইকে নিয়ে আড্ডা মারা হয়ে ওঠে না। এ বারের পুজো সেই আনন্দ উপহার দেবে। আর আছে খাওয়াদাওয়া। আমার দিদি দুর্দান্ত রাঁধতে পারে। বিরিয়ানি, পোলাও থেকে ভোগের খিচুড়ি-- সব নিজের হাতে রেঁধে খাওয়াবে আমায়। আগাম বলে রেখেছে। শরীর ভাল থাকলে একটা দিন খাসির মাংস হবে। আমার সব থেকে পছন্দের পদ। ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে চিকিৎসকের কড়া নিষেধে ইচ্ছে করলেও খেতে পারি না।

জানেন, এই আমিই অতিমারির আগে পর্যন্ত পুজোয় একটা দিন বাড়িতে বসতাম না। আমাদের দেশের বাড়ি মুর্শিদাবাদে। পুজো উপলক্ষে সেখানে চলে যেতাম। তার পর বন্ধুদের নিয়ে সারা দিন টো টো কোম্পানি। একটা পোশাক পরে সকালে বেরিয়ে যেতাম। বাইরেই খাওয়া। বিকেলে এক বার ফিরতাম সাজ বদলাতে। আবার রাতে বাড়ি ঢুকতাম। কোনও দিন পশ্চিমী পোশাক, তো কোনও সকালে শাড়ি। একটা দিন মুর্শিদাবাদ সিল্ক শাড়ির জন্য বরাদ্দ থাকত। এত সাজতাম, হুল্লোড়ে মাততাম অথচ একটা পুজো-প্রেম নেই আমার জীবনে! হবে কী করে? প্রচণ্ড ডানপিটে গোছের ছিলাম। ভাল লাগলেও ভয়ে কেউ বলতেই পারেনি! তাই আমার প্রথম প্রেম সব্যসাচী। আমাদের প্রথম ধারাবাহিক ‘ঝুমুর’-এর সেটে আলাপ। সব্যসাচী আসার পর থেকেই প্রতি পুজো যেন আরও রঙিন। আর ছিল দশমীর বিসর্জনের নাচ। গঙ্গার ঘাট পর্যন্ত পাড়ার সবাই নাচতে নাচতে যেতাম। তার পর বাড়ি ফিরে প্রণাম সেরে নাড়ু খাওয়া।

অসুস্থতার কারণে এ বছর হুল্লোড়, ঠাকুর দেখা বন্ধ। যদি সুস্থ থাকি, একটা রাত ফাঁকায় ফাঁকায় কয়েকটি প্রতিমা দর্শন সারব। বায়না করে রেখেছি সব্যসাচীর কাছে। ও আমার থেকেও ভীতু। সারাক্ষণ সিঁটিয়ে থাকে, যদি আমার কিছু হয়! একান্তই যদি বেরোতে না-ই পারি, কুছ পরোয়া নেই। আসছে বছর সব হবে।

Advertisement
আরও পড়ুন