দেবলীনা কুমারের জগদ্ধাত্রী পুজো
বাড়িতে আমি বরাবরই খুব আদুরে। ছোট থেকেই মাকে বাড়ির পুজোয় সবটা নিজে হাতে সামলাতে দেখে এসেছি। আমাকে কিছু করতে হয় না। আমাদের বাড়িতেই যেহেতু মন্দির, প্রতি বছর বেশ জাঁকজমক করে জগদ্ধাত্রীপুজো করা হয় বাড়িতে। যত দূর মনে পড়ে, এ বার কুড়ি বছরে পা দিল বাড়ির পুজো। আগামী কাল ষষ্ঠী, দেবীর আরাধনা শুরু। একেবারে দুর্গাপুজোর মতো সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী, দশমী– চার দিন হইহই করে আমাদের পুজো চলে। এর পুরো কৃতিত্বটাই আমার মায়ের। তবে ভোগের দায়িত্বে আমার মায়ের সঙ্গে হাত মেলান পাড়ার কাকিমারাও। বাড়ির মেয়ে বলে আমাকে তোলা তোলা করে রাখা হয় সত্যি বলতে!
নিষ্ঠাভরে ভোগ রান্না হয় দেবীর জন্য। মেনুতেও কিন্তু বেশ চমক। সপ্তমীতে দেবীর ভোগে পোনা মাছ, মাংস ইত্যাদি থাকে। ওই দিন পুরোটাই আমিষ। লুচি, তরকারি ছাড়া তো অষ্টমী অসম্পূর্ণ। সঙ্গে অন্যান্য নিরামিষ পদ। আর নবমীতে অবশ্যই খিচুড়ি ভোগ, সঙ্গে আলুর দম, ছ্যাঁচড়া, ফুলকপি, বাঁধাকপির হরেক পদ…শেষ পাতে ছানার জিলিপি থাকবেই। যা আমার দিদার হাতে তৈরি। দশমীতে খাবারের মেনু আলাদা ভাবে কিছু ঠিক করা হয় না। সিঁদুরখেলা শেষে মিষ্টিমুখ হয়। পুজোর চার দিনই জমজমাট থাকে আমাদের বাড়ি। কাজের জন্য অনেক সময়ে বাড়িতে থাকতে না পারলেও নবমীর দিনটা চেষ্টা করি ব্যস্ততা সরিয়ে রাখার।
আমার আজও মনে পড়ে প্রথম বছরের কথা, বিশেষ করে যেদিন আমাদের ফ্ল্যাটে দেবীকে বরণ করা হয়েছিল। এখনও আছে সেই পিতলের প্রতিমা। তাঁর হাত ধরেই আসলে জগদ্ধাত্রী পুজোর সূচনা আমাদের বাড়িতে। সেই প্রথম দিনটা যখন ফিরে দেখি, আজকের দিনে ২০০০-৩০০০ অতিথির সমাগম দেখে খুবই ভাল লাগে। কতটা পথ পেরিয়ে এসেছি!
এইরে! লিখতে লিখতে ভুলেই গিয়েছি এখনও পর্যন্ত সে ভাবে কাউকে আমন্ত্রণ জানানোই হয়ে ওঠেনি। আসলে আমি এ ক্ষেত্রে খুবই কুঁড়ে। আমার মা-ও আমাকে রোজ এই নিয়ে তাগাদা দিতে দিতে ক্লান্ত! যদিও এমনিতে আমার ইন্ডাস্ট্রিতে খুব একটা বন্ধু নেই। সবই আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের। তবু প্রতি বছর পুজোর দিনে ইন্ডাস্ট্রির অনেকেই আমাদের বাড়িতে আসেন। সত্যি বলতে, তাঁদেরকে আলাদা করে আমন্ত্রণ জানানোর প্রয়োজনই পড়ে না!
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।