মা দুর্গার আগমনবার্তা আমাদের শক্তি দিচ্ছে এগিয়ে যাওয়ার।
প্রতিটি প্রবাসি বাঙালির কাছে শারোদোৎসব আনন্দে-আত্মহারা হওয়ার সময়। সারা পৃথিবী জুড়ে উৎসব-প্রাণ বাঙালিরা এই কয়েক দিনের অফুরান আনন্দের জন্য বছর-ভর উন্মুখ হয়ে থাকেন।
১৯৮৭ সালে তৎকালীন লস এঞ্জেলস শহরের সান ফার্নান্দো ভ্যালি অঞ্চলের মুষ্টিমেয় কিছু যুবক-যুবতীর অসীম উৎসাহে, উদ্যোগে গড়ে ওঠে ভ্যালি বেঙ্গলি কমিউনিটি (ভিবিসি)। প্রায় তিন-দশক পর, আরো একঝাঁক তরুণ-তরুণীর অদম্য উদ্দীপনা ও নিরলস পরিশ্রমে ২০১৬ সালে ভিবিসি-তে প্রথম দুর্গাপূজার সূচনা হয়। সে এক রোমাঞ্চকর আর অবিশ্বাস্য উত্তেজনার মুহূর্ত। একদম শূন্য থেকে মা দুর্গার পূজার আয়োজনের, সেই বিশাল কর্মযজ্ঞের অভিজ্ঞতার কথা লিখতে গিয়ে আজও গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। মনে পড়ছে, প্রথম যে দিন সুদূর কুমোরটুলি থেকে লস এঞ্জেলস শহরে বাক্সবন্দি হয়ে মা দুর্গা এলেন বা প্রথম বার প্রতিমার মুখ দর্শন করলাম, সে কী বাঁধন-ছাড়া উচ্ছ্বাস, আর অনাবিল আনন্দ সবার মধ্যে! ২০১৬-২০১৯, চার বছর অত্যন্ত সুষ্ঠু ও সফলভাবে ভিবিসি-তে দুর্গাপূজা উদ্যাপিত হয়। কলকাতা শহরের অনেক প্রখ্যাত শিল্পীর অনুষ্ঠান ভিবিসি-র পুজো-প্রাঙ্গণকে আলোকোজ্জ্বল করে তুলেছে।
২০২০ সালে অতিমারি প্রতাপে, কোভিড নিয়মাবলি মেনে মূলত ভার্চুয়াল-দুর্গাপুজো ঘরোয়া-ভাবে ও নিষ্ঠা-সহকারে সম্পন্ন করা হয়।
এসে গেছে শারোদৎসব ২০২১। শরতের আকাশে পেঁজা তুলোর মতো মেঘ, কিন্তু সেই সঙ্গে কোভিডের দুশ্চিন্তার মেঘও যে কিছুতেই পিছু ছাড়ে না। তবুও, মনে আশা, বুকে সাহস, আর কোভিড-টিকা নিয়ে আবার আমরা মেতে উঠেছি দেবী দুর্গার আবাহনে। কোভিড স্বাস্থ্যবিধি ও সব রকম সাবধানতা বজায় রেখে, তাই তিন দিন থেকে এ বারের দুর্গোৎসব দু’দিনের, ৯-১০ অক্টোবর।
আবার জমজমাট হয়ে উঠবে ভিবিসি-র পূজামণ্ডপ ঢাকের শব্দে, শঙ্খধ্বনিতে, নতুন জামাকাপড়ের গন্ধে, অঞ্জলি দেওয়ার হুড়োহুড়িতে, ধুনুচি নাচে, সন্ধ্যারতি, সন্ধিপুজো ও সিঁদুর খেলায়। আমাদের পাড়ার পুজোকে আবার কল্লোলিত করে তুলবে ভিবিসি-র বৃহত্তর বাঙালি পরিবারের প্রতিটি সদস্যের হাসিমুখ ভরা গল্প, নির্মল আড্ডা আর আমোদ। পুজো-প্যান্ডেল গমগম করে উঠবে জাঁকজমক-পূর্ণ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনে। রসনা তৃপ্তির জন্য থাকবেই ভুরিভোজে ষোলো-আনা বাঙালিয়ানার স্পর্শ।
মা দুর্গার আগমনবার্তা আমাদের শক্তি দিচ্ছে এগিয়ে যাওয়ার। এই অনিশ্চিত সময়ে, আজ সারা বিশ্বের মানুষের বড় বেশি প্রয়োজন দেবী দুর্গার আশীর্বাদের। অপেক্ষায় আছি এই উৎসবের মরসুমে কখন গেয়ে উঠব, ‘মাতলো রে ভুবন’।
ছবি সৌজন্য - ভ্যালি বেঙ্গলি কমিউনিটি (ভিবিসি)