Flying Kites

বিশ্বকর্মা পুজোর সকালে ‘ভোকাট্টা’ ঘুড়ি ওড়ানোই

প্রবীণেরাই জানাচ্ছেন, বিশ্বকর্মা পুজোর সপ্তাহ দুয়েক আগে থেকেই ঘুড়ি ওড়ানোর অভ্যাস ছিল পাড়ায় পাড়ায়।

Advertisement
সাগর হালদার  
তেহট্ট শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:২২
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

আকাশে শরতের নীল মেঘ। জলঙ্গি নদীর তীরে ঘন কাশবন। তার মধ্যে দিয়েই ভোকাট্টা ঘুড়ি ধরতে পড়িমরি দৌড় দেখা যেত দামাল কৈশোরের। মাত্র কয়েক বছর আগেও ওই ছবি ধরা পড়েছে গ্রাম-মফস্‌সলে, তেহট্ট শহরে। বিশ্বকর্মা পুজোর দিন সকাল থেকে ঘুড়ি ওড়ানোর ওই ঐতিহ্য যেন চিরকালীন এক শৈশবের সকাল। অথচ, ক্রমশ স্মৃতি তৈরির ভান্ডার ফিকে হয়ে আসছে। এই সময়ের বিশ্বকর্মা পুজোর সকালে আকাশে নজরে পড়ছে কতিপয় ঘুড়ি।

Advertisement

হলটা কী এলাকাবাসীর? বিশ্বকর্মা পুজোর সকাল থেকে ঘুড়ি ওড়ানোর চল কী একেবারেই উঠে গেল স্মার্টফোন আর ইন্টারনেটের চাপে? প্রবীণেরাও যেন আক্ষেপ করে বলছেন— ‘‘আমাদের গেছে যে দিন/একেবারেই কি গেছে,/কিছুই কি নেই বাকি?’’

প্রবীণেরাই জানাচ্ছেন, বিশ্বকর্মা পুজোর সপ্তাহ দুয়েক আগে থেকেই ঘুড়ি ওড়ানোর অভ্যাস ছিল পাড়ায় পাড়ায়। বাড়ির ছাদে বা মাঠে কিংবা নদীর ধারে সকাল-বিকাল ঘুড়ি ওড়াতে দেখা যেত খুদে থেকে তরুণ-তরুণী, মাঝবয়সী, বৃদ্ধ মহিলা-পুরুষ নির্বিশেষে। শুধু তাই নয়, পাড়ায় পাড়ায় বিশ্বকর্মা পুজোর দিন সকাল থেকে ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতাও চলত। এক পাড়ার ঘুড়ি কেটে দিয়ে অন্য পাড়ার ছাদ থেকে ‘ভোকাট্টা’ শব্দের উচ্ছ্বাস শোনা যেত। প্রবীণেরা আরও জানাচ্ছেন, এই পুজোর অনেক আগে থেকেই ঘুড়ির বিভিন্ন সরঞ্জাম তৈরি রাখতে হত। সুতোয় দেওয়া চলত মাঞ্জা। ধার বাড়াতে কাচের গুঁড়ো, গাব গাছের আঠা, ভাতের ফ্যান, সাবু-সহ আরও নানা কিছু মেশানো চলত ওই সুতোয়। গ্রামের দিকে সে ভাবে রেডিমেড লাটাই না পাওয়া গেলেও পাটকাঠি দিয়ে মজবুত লাটাই তৈরি করতেন কিশোর-তরুণ প্রজন্ম। এর পর ঘুড়িতে সুতো বেঁধে চলত মহড়া। সে সময়ে ঘুড়িতে সুতো বাঁধাও ছিল একটি শিল্প, যা কিনা সবার কম্ম ছিল না বলেই দাবি এক সময়ের বিখ্যাত ঘুড়ি-উড়িয়ে প্রবীণদের!

অথচ এখন যেন সবই অতীত। দোকানেই দেখতে পাওয়া যায় না রংবেরঙের ঘুড়ি। তেহট্টের সুমন বিশ্বাস, তনয় মণ্ডলেরা বলছেন, “ঘুড়ি কেউ আগের মতো ওড়ায় না। বিক্রি হয় না বলে তুলি না।” আরেক বিক্রেতা প্রদীপ পাল বলেন, “এখনকার তরুণদের মধ্যে মোবাইল গেমের যে আসক্তি বেড়েছে, তাতে আর ঘুড়ি ওড়াবে কে?” গ্রামীণ এলাকা তারানগরের এক বিক্রেতা সঞ্জয় বিশ্বাস বলেন, “গ্রামেও ঘুড়ির চাহিদা কমেছে। ৬ টাকা থেকে ৮ টাকা দরে বিক্রির জন্য এক সপ্তাহ আগে গুটিকয়েক ঘুড়ি এনেছিলাম। তা-ও বিক্রি নেই।” তেহট্টের এক ভাঙরির দোকানদার দেবাশিস মণ্ডল বলেন, “শুধুমাত্র মাঞ্জা দিতেই একটা সময়ে কত ছেলেরা এই দোকানে এসেছে। তাঁরা এখন নানা কাজে ব্যস্ত। তবে এই প্রজন্মের নতুন কেউ আর আসে না।”

স্কুল পড়ুয়া গৌরব বিশ্বাস, শুভঙ্কর ঘোষেরা বলছে, “এই সময়ে পড়ার চাপ রয়েছে। তা ছাড়া, আজকাল ফাঁকা সময়ে মোবাইল গেম খেলাতেই জড়িয়ে পড়ছে সবাই।” আর বিট্টু দেবনাথ, সন্তু সরকার বলেন, “ঘুড়ি ওড়ানো দেখেছি। তবে ওড়াতে পারি না।”

আরও পড়ুন
Advertisement