Advertisement

Associate Partner

Style Partner

Associate Partner

Weddings Partner

Food Partner

Durga Puja Holiday Destination

নাড়াজোলের এই বাড়িতে এসেছিলেন গান্ধীজি, বাংলার এই রাজবাড়ি ছিল বিপ্লবীদের ঘাঁটি

নাড়াজোলের রাজবাড়ি। গান্ধীজি এসেছিলেন এখানে। এ বাড়ির ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে ক্ষুদিরাম বসু, সুভাষ বসু, থেকে রবি ঠাকুর, কবি নজরুলের নাম!

অনিরুদ্ধ সরকার
শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২৩ ১২:৩৯
Share: Save:
০১ ১৫
পশ্চিম মেদিনীপুর শহর ছেড়ে সড়ক পথে প্রায় চল্লিশ মিনিট দূরে গ্রাম নাড়াজোল। মেদিনীপুর থেকে গাড়ি নিয়ে যেতে পারেন। অথবা ট্রেনে পাঁশকুড়া স্টেশন থেকে গাড়ি করে যেতে পারেন।

পশ্চিম মেদিনীপুর শহর ছেড়ে সড়ক পথে প্রায় চল্লিশ মিনিট দূরে গ্রাম নাড়াজোল। মেদিনীপুর থেকে গাড়ি নিয়ে যেতে পারেন। অথবা ট্রেনে পাঁশকুড়া স্টেশন থেকে গাড়ি করে যেতে পারেন।

০২ ১৫
এলাকার এক পাশে বইছে কংসাবতী,  অন্য পাশে শিলাবতী। ‘নাড়াজোল’  কথাটি এসেছে ‘নাড়াজোট’  থেকে। ‘নাড়া’  শব্দের অর্থ ‘খড়’  আর ‘জোট’  শব্দের অর্থ ক্ষুদ্র নদী। এলাকার উত্তরে শীলাবতী,  দক্ষিণে কংসাবতী, পূর্বে কাঁকি এবং পশ্চিমে পারাং নামের চারটি বৃষ্টির জলে পুষ্ট ছোট নদী দ্বারা পরিবেষ্টিত। অতএব বুঝতেই পারছেন নাড়াজোল নামের উৎপত্তির কারণ।

এলাকার এক পাশে বইছে কংসাবতী, অন্য পাশে শিলাবতী। ‘নাড়াজোল’ কথাটি এসেছে ‘নাড়াজোট’ থেকে। ‘নাড়া’ শব্দের অর্থ ‘খড়’ আর ‘জোট’ শব্দের অর্থ ক্ষুদ্র নদী। এলাকার উত্তরে শীলাবতী, দক্ষিণে কংসাবতী, পূর্বে কাঁকি এবং পশ্চিমে পারাং নামের চারটি বৃষ্টির জলে পুষ্ট ছোট নদী দ্বারা পরিবেষ্টিত। অতএব বুঝতেই পারছেন নাড়াজোল নামের উৎপত্তির কারণ।

০৩ ১৫
নাড়াজোল রাজবাড়ির ইতিহাস ছশো বছরেরও প্রাচীন। বাংলার অন্যতম প্রাচীন এই রাজবাড়ির অজানা ইতিহাসের সন্ধান দিলেন রাজবাড়ির বংশধর সন্দীপ খান। আসুন একে একে জেনে নেওয়া যাক এই রাজবাড়ির ইতিহাস।

নাড়াজোল রাজবাড়ির ইতিহাস ছশো বছরেরও প্রাচীন। বাংলার অন্যতম প্রাচীন এই রাজবাড়ির অজানা ইতিহাসের সন্ধান দিলেন রাজবাড়ির বংশধর সন্দীপ খান। আসুন একে একে জেনে নেওয়া যাক এই রাজবাড়ির ইতিহাস।

০৪ ১৫
ভাবলেও অবাক হতে হয় দিল্লির মসনদে যখন সৈয়দ বংশের দ্বিতীয় শাসক সিকন্দর শাহ রাজত্ব করছেন,  সেই সময়ে নাড়াজোল রাজপরিবারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন ‘ধর্মমঙ্গল’  খ্যাত ইছাই ঘোষের বংশধর উদয়নারায়ণ ঘোষ।

ভাবলেও অবাক হতে হয় দিল্লির মসনদে যখন সৈয়দ বংশের দ্বিতীয় শাসক সিকন্দর শাহ রাজত্ব করছেন, সেই সময়ে নাড়াজোল রাজপরিবারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন ‘ধর্মমঙ্গল’ খ্যাত ইছাই ঘোষের বংশধর উদয়নারায়ণ ঘোষ।

০৫ ১৫
পরবর্তীকালে বংশানুক্রমে প্রতাপনারায়ণ,  যোগেন্দ্রনারায়ণ, ভরতনারায়ণ, কার্তিকরাম প্রমুখ নাড়াজোলের অধিপতি হন। প্রসঙ্গত, কার্তিকরাম ঘোষ তখনকার বাংলার অধীশ্বর সোলেমান করবানির কাছ থেকে ‘রায়’  উপাধিতে ভূষিত হন। সম্রাট আকবরের আমলে নাড়াজোলের জমিদার বলবন্ত সিংহ রায় ‘খান’  উপাধি লাভ করেন। সেই থেকে ‘রায়’  উপাধি ত্যাগ করে জমিদারবংশ ‘খান’ উপাধিই গ্রহণ করেন।

পরবর্তীকালে বংশানুক্রমে প্রতাপনারায়ণ, যোগেন্দ্রনারায়ণ, ভরতনারায়ণ, কার্তিকরাম প্রমুখ নাড়াজোলের অধিপতি হন। প্রসঙ্গত, কার্তিকরাম ঘোষ তখনকার বাংলার অধীশ্বর সোলেমান করবানির কাছ থেকে ‘রায়’ উপাধিতে ভূষিত হন। সম্রাট আকবরের আমলে নাড়াজোলের জমিদার বলবন্ত সিংহ রায় ‘খান’ উপাধি লাভ করেন। সেই থেকে ‘রায়’ উপাধি ত্যাগ করে জমিদারবংশ ‘খান’ উপাধিই গ্রহণ করেন।

০৬ ১৫
 জমিদার মোহনলাল খানের আমলই ছিল নাড়াজোলের স্বর্ণযুগ। তাঁর আমলে ৩৬০ বিঘা জায়গা জুড়ে ‘বহির্গড়’ ও ‘অন্তর্গড়’ হিসেবে বিরাট বসতবাড়ি তৈরি হয়। এই রাজবাড়ি পরিদর্শনে আসনে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। দেবী জয়দুর্গার নাটমন্দিরের অলঙ্করণ তাঁর এতটাই মনে ধরে যে, শান্তিনিকেতন আশ্রমের উপাসনা কক্ষটি নির্মাণের সময়ে কারিগরদের তিনি এখানকার শিল্পরীতিকে অনুসরণ করতে বলেছিলেন।

জমিদার মোহনলাল খানের আমলই ছিল নাড়াজোলের স্বর্ণযুগ। তাঁর আমলে ৩৬০ বিঘা জায়গা জুড়ে ‘বহির্গড়’ ও ‘অন্তর্গড়’ হিসেবে বিরাট বসতবাড়ি তৈরি হয়। এই রাজবাড়ি পরিদর্শনে আসনে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। দেবী জয়দুর্গার নাটমন্দিরের অলঙ্করণ তাঁর এতটাই মনে ধরে যে, শান্তিনিকেতন আশ্রমের উপাসনা কক্ষটি নির্মাণের সময়ে কারিগরদের তিনি এখানকার শিল্পরীতিকে অনুসরণ করতে বলেছিলেন।

০৭ ১৫
মেদিনীপুরের “গুপ্ত সমিতি”-র কার্যকলাপ একটা সময় সারা বাংলায় সাড়া ফেলে দেয়। সে সময়ের বিপ্লবী জ্ঞানেন্দ্রনাথ বসু,  হেমচন্দ্র কানুনগোর পাশাপাশি আরেক জন বিপ্লবীর নাম পাওয়া যায়,  তিনি হলেন নাড়াজোল রাজবাড়ির মহারাজ নগেন্দ্রলাল খান।

মেদিনীপুরের “গুপ্ত সমিতি”-র কার্যকলাপ একটা সময় সারা বাংলায় সাড়া ফেলে দেয়। সে সময়ের বিপ্লবী জ্ঞানেন্দ্রনাথ বসু, হেমচন্দ্র কানুনগোর পাশাপাশি আরেক জন বিপ্লবীর নাম পাওয়া যায়, তিনি হলেন নাড়াজোল রাজবাড়ির মহারাজ নগেন্দ্রলাল খান।

০৮ ১৫
১৯০৮ সালের আগস্ট মাসে মেদিনীপুর বোমা মামলায় অভিযুক্ত নরেন্দ্রলাল খান ১৮ দিনের জন্য গ্রেফতার হন এই বাড়ি থেকেই। উপযুক্ত সাক্ষী এবং প্রমাণের অভাবে শেষপর্যন্ত নগেন্দ্রলাল ছাড়া পান কিন্তু ব্রিটিশ পুলিশ তাঁকে সর্বদা চোখে চোখে রেখেছিল।

১৯০৮ সালের আগস্ট মাসে মেদিনীপুর বোমা মামলায় অভিযুক্ত নরেন্দ্রলাল খান ১৮ দিনের জন্য গ্রেফতার হন এই বাড়ি থেকেই। উপযুক্ত সাক্ষী এবং প্রমাণের অভাবে শেষপর্যন্ত নগেন্দ্রলাল ছাড়া পান কিন্তু ব্রিটিশ পুলিশ তাঁকে সর্বদা চোখে চোখে রেখেছিল।

০৯ ১৫
ইতিহাস বলছে, নাড়াজোল রাজপরিবারের তহসিলদারের ভূমিকায় এক সময়ে কাজ করতেন ত্রৈলোক্যনাথ বসু। যিনি ছিলেন বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুর পিতা। সেই সূত্রে অল্পবয়সি ক্ষুদিরামের অবাধ যাতায়াত ছিল এই রাজবাড়িতে।

ইতিহাস বলছে, নাড়াজোল রাজপরিবারের তহসিলদারের ভূমিকায় এক সময়ে কাজ করতেন ত্রৈলোক্যনাথ বসু। যিনি ছিলেন বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুর পিতা। সেই সূত্রে অল্পবয়সি ক্ষুদিরামের অবাধ যাতায়াত ছিল এই রাজবাড়িতে।

১০ ১৫
নাড়াজোল রাজবাড়ির অন্দরে দীর্ঘদিন ধরে চলত বিপ্লবীদের অস্ত্রপ্রশিক্ষণ ও বোমা বাঁধার কাজ। এই কাজ পরিচালনায় হেমচন্দ্র কানুনগো যেমন আসতেন তেমনি আসতেন বিপ্লবী অরবিন্দ ঘোষ এবং তাঁর ভাই বারীন ঘোষ।

নাড়াজোল রাজবাড়ির অন্দরে দীর্ঘদিন ধরে চলত বিপ্লবীদের অস্ত্রপ্রশিক্ষণ ও বোমা বাঁধার কাজ। এই কাজ পরিচালনায় হেমচন্দ্র কানুনগো যেমন আসতেন তেমনি আসতেন বিপ্লবী অরবিন্দ ঘোষ এবং তাঁর ভাই বারীন ঘোষ।

১১ ১৫
১৯২২ সালের ২৮ জুলাই এ বাড়িতে আসেন মহাত্মা গান্ধী। ১৯২৮ সালে জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশন হয়েছিল কলকাতায়। যার সভাপতি ছিলেন মতিলাল নেহেরু।

১৯২২ সালের ২৮ জুলাই এ বাড়িতে আসেন মহাত্মা গান্ধী। ১৯২৮ সালে জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশন হয়েছিল কলকাতায়। যার সভাপতি ছিলেন মতিলাল নেহেরু।

১২ ১৫
ইতিহাস বলছে,  মতিলাল নেহেরু এই নাড়াজোল রাজবাড়ি থেকেই সেই অধিবেশনে যোগ দিয়েছিলেন। সেসময় এই রাজবাড়ির রাজপুরুষ ছিলেন দেবেন্দ্রলাল খান। এই বাড়িতে এসেছেন মতিলাল পুত্র জওহরলালও।

ইতিহাস বলছে, মতিলাল নেহেরু এই নাড়াজোল রাজবাড়ি থেকেই সেই অধিবেশনে যোগ দিয়েছিলেন। সেসময় এই রাজবাড়ির রাজপুরুষ ছিলেন দেবেন্দ্রলাল খান। এই বাড়িতে এসেছেন মতিলাল পুত্র জওহরলালও।

১৩ ১৫
কবি নজরুল ইসলামও বহুবার এসেছেন এবাড়িতে। দেবেন্দ্রলালের সঙ্গে রবি ঠাকুরের অন্তরঙ্গ সম্পর্ক ছিল। তিনিও এসেছেন এবাড়িতে। রবি ঠাকুরের ‘ভবঘুরে’ কবিতাতেও এসেছে নাড়াজোলের প্রসঙ্গ। কবি লিখছেন, ‘নাড়াজোলে বড়বাবু তখুনি/শুরু করে বংশুকে বকুনি।’

কবি নজরুল ইসলামও বহুবার এসেছেন এবাড়িতে। দেবেন্দ্রলালের সঙ্গে রবি ঠাকুরের অন্তরঙ্গ সম্পর্ক ছিল। তিনিও এসেছেন এবাড়িতে। রবি ঠাকুরের ‘ভবঘুরে’ কবিতাতেও এসেছে নাড়াজোলের প্রসঙ্গ। কবি লিখছেন, ‘নাড়াজোলে বড়বাবু তখুনি/শুরু করে বংশুকে বকুনি।’

১৪ ১৫
১৯৩০-এর ২৬ জানুয়ারি সারা দেশের সঙ্গে নাড়াজোল রাজবাড়িতেও ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলিত হয়। ১৯৩৮ সালে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কমিটির কার্যসমিতি গঠিত হলে সুভাসচন্দ্র বসু মেদিনীপুর বোর্ডের সভাপতি নির্বাচিত হ’ন কিন্তু তার বহু আগে থেকে  সুভাষ বসুর এই বাড়িতে যাতায়াত ছিল। ১৯৩৮ সালে সুভাষ বসুর নেতৃত্বে একটি অভ্যন্তরীণ কর্মীসভা হয়েছিল এই রাজবাড়িতে।

১৯৩০-এর ২৬ জানুয়ারি সারা দেশের সঙ্গে নাড়াজোল রাজবাড়িতেও ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলিত হয়। ১৯৩৮ সালে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কমিটির কার্যসমিতি গঠিত হলে সুভাসচন্দ্র বসু মেদিনীপুর বোর্ডের সভাপতি নির্বাচিত হ’ন কিন্তু তার বহু আগে থেকে সুভাষ বসুর এই বাড়িতে যাতায়াত ছিল। ১৯৩৮ সালে সুভাষ বসুর নেতৃত্বে একটি অভ্যন্তরীণ কর্মীসভা হয়েছিল এই রাজবাড়িতে।

১৫ ১৫
এই বাড়ির শেষ রাজা অমরেন্দ্রলাল খানের স্ত্রী অঞ্জলী খান মেদিনীপুর থেকে জাতীয় কংগ্রেসের হয়ে পাঁচবার বিধায়ক হন। অঞ্জলী খান ছিলে শান্তিনিকেতনে ইন্দিরা গাঁধীর সহপাঠী। রাজবাড়ির উত্তরসূরী সন্দীপ খান ব্যক্তি উদ্যোগে রাজবাড়িতে গড়ে তুলতে চাইছেন ৫ কামরার একটি হোমস্টে। জোর কদমে যার কাজ চলছে। এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

এই বাড়ির শেষ রাজা অমরেন্দ্রলাল খানের স্ত্রী অঞ্জলী খান মেদিনীপুর থেকে জাতীয় কংগ্রেসের হয়ে পাঁচবার বিধায়ক হন। অঞ্জলী খান ছিলে শান্তিনিকেতনে ইন্দিরা গাঁধীর সহপাঠী। রাজবাড়ির উত্তরসূরী সন্দীপ খান ব্যক্তি উদ্যোগে রাজবাড়িতে গড়ে তুলতে চাইছেন ৫ কামরার একটি হোমস্টে। জোর কদমে যার কাজ চলছে। এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE