কাঞ্চনজঙ্ঘা জাতীয় উদ্যান, সিকিম: ইউনেস্কো-র বিশ্ব হেরিটেজ স্থান হিসেবে স্বীকৃত। গোটা সিকিমের ৩০ শতাংশ জমি জুড়ে এই ন্যাশনাল পার্ক। বিশাল অভয়ারণ্য, তা সত্ত্বেও পুরোটাই পরিবেশবান্ধব অঞ্চল। নদী, হ্রদ, উপত্যকা, সমতল, হিমবাহ, গুহায় ছড়াছড়ি অতুলনীয় প্রাকৃতিক পরিবেশে স্নো লেপার্ড থেকে করে লাল পান্ডা, মাস্ক ডিয়ার, হিমালয়ের নীল গাই-এর মতো বিরল বন্যপ্রাণীর রোমাঞ্চ থাকছে আপনার অপেক্ষায়।
লাহুল-স্পিতি হিমাচল প্রদেশ: গোটা ভারতের মধ্যে ন্যূনতম জনবহুল জেলা। শেষ জনগণনায় মাত্র ৬৪০ জনের বাস ছিল হিমাচল প্রদেশের এই ছবির মতো সুন্দর পরিবেশ-বান্ধব জেলায়। এই জোড়া গ্রামের প্রবেশ পথ কুঞ্জুম পাস, যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৫ হাজার ফুট উপরে। শীতকালে এখানে মাইনাস ৩০ (-৩০) ডিগ্রিতে পর্যন্ত নেমে যায় তাপমাত্রা। এমন হাড় কাঁপানো ঠান্ডার কারণেই কাজকর্মের সুযোগ কম স্থানীয় মানুষের। তাই এগিয়ে এসেছে অনেক এনজিও সংস্থা। ট্রেকিং ও আধ্যাত্মিকতা যাঁরা পছন্দ করেন, তাদের জন্য আদৰ্শ এই পরিবেশ-বান্ধব গন্তব্য।
খনমা গ্রাম, নাগাল্যান্ড: কোহিমা থেকে ২০ কিলোমিটার দূরত্বে, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫৩১৮ উঁচুতে খনমা গ্রাম প্রাকৃতিক সংরক্ষণ, ট্রাগোপান্ অভয়ারণ্যের জন্য জগদ্বিখ্যাত। পরিবেশ-বান্ধব এই জায়গাটির অন্যতম সেরা আকর্ষণ ৭০০ বছরের 'হর্নবিল উৎসব। নাগা জনজাতির সাংস্কৃতিক ও লোক সাহিত্যের ঐতিহ্যের সঙ্গে এই উৎসবের তাৎপর্য গভীর ভাবে জড়িয়ে। নাগাল্যান্ডের জাতীয় পাখি, ধূসর রঙের ধনেশ পাখির নামের সঙ্গে মিলিয়ে নাগা জনজাতির এই মহোৎসবকে উল্লেখ করা হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে। তাতে পরম্পরাগত ভাবে নাগারা বিভিন্ন নাচের মাধ্যমে তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে তুলে ধরে। বাৎসরিক এই উৎসব হয় ১-১০ ডিসেম্বর।
মাওলাইনং গ্রাম, মেঘালয়: গোটা ভারতের তো বটেই, গোটা এশিয়ার সবচেয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন গ্রাম হিসেবে স্বীকৃত। জগদ্বিখ্যাত ভ্রমণ বিষয়ক ম্যাগাজিন মাওলাইনং পরিবেশ-বান্ধব স্থানকে সেরার স্বীকৃতি দেয়। শিলং থেকে ৯০ কিলোমিটার দূরত্বে খাসি জনজাতি অধ্যুষিত এই গ্রামে মাত্র ৯০০ জনের বাস। মাতৃতান্ত্রিক সমাজে বাড়ির বড় মেয়ে পরবর্তী প্রজন্মের উত্তরাধিকার হিসেবে সম্পত্তি লাভ করেন। জন্মসূত্রে মায়ের উপাধিও পান মেয়েরা।
কুর্গ, কর্ণাটক: পশ্চিমঘাট পর্বতমালা সংলগ্ন এই পরিবেশবান্ধব স্থানের প্রধান আকর্ষণ অ্যাবে জলপ্রপাত। গ্রামের আদি জনজাতি, কোদাভা সম্প্রদায়ের মানুষজন এখনও কোদাভা ভাষায় কথা বলেন। তাঁরা পরম্পরাগত ভাবে অস্ত্রের পূজারি। তির-ধনুক, তরোয়াল, বন্দুক পুজো করে। ভারতে একমাত্র এই সম্প্রদায়ের মানুষেরই আগ্নেয়াস্ত্র বহনের জন্য কোনও লাইসেন্সের দরকার পড়ে না।
প্রাগপুর, হিমাচল প্রদেশ: কাংড়া জেলায় ধৌলাধর পর্বতমালায় এই পরিবেশবান্ধব পর্যটন কেন্দ্র কুটির শিল্পের জন্য বিখ্যাত। বহু তাঁতি, ঝুড়ি প্রস্তুতকারী, দর্জি, কম্বল প্রস্তুতকারী, শাল প্রস্তুতকারী, হাতে ব্লক প্রিন্ট করা কাপড়-শিল্পীর বসবাস এখানে। এখানকার কালেশ্বর মন্দির ও ছিন্নমস্তিকা ধামও কালীভক্তদের কাছে অতি পবিত্র স্থান।
তবে এমন জায়গায় বেড়াতে গেলে নিজেরও কিছু দায়িত্ব-সচেতনতা জরুরি। ১. স্থানীয় সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকুন। ২. বাইরে কোথাও ময়লা ফেলা চলবে না, বিশেষত প্লাস্টিকের সামগ্রী। ৩. হোটেলের চেয়ে হোম-স্টেতে থাকার চেষ্টা করুন। ৪.পরিবেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য একদম নষ্ট করবেন না। গাছ থেকে ফুল তোলা বা ফল পাড়াও নয়। ৫.স্থানীয় জিনিস কিনে, স্থানীয় খাবার খেয়ে সেখানকার আর্থ-সামাজিক অবস্থাকে সাহায্য করুন আপনার মতো করে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy