এই নবাব বাদশার শহরে এসে বাদশাহী খানা না খেলেই নয়! হায়দরাবাদে বিরিয়ানির অন্যতম সেরা জায়গা সেকেন্দ্রাবাদের একটি বিখ্যাত রেস্তরাঁ। যে কোনও কাউকে জিজ্ঞেস করলেই তিনি নাম বলে দেবেন। রেস্তরাঁটির অনেক গুলি তল। বাজেট বুঝে নিয়ে একটি তল-এ ঢুকে পড়ে স্টুয়ার্টকে ডেকে আপনার পছন্দ বা কেমন স্বাদের বিরিয়ানি চাইছেন, বুঝিয়ে দিন। তার পর উনিই আপনাকে বলে দেবেন, কোনটা নিলে ভাল হয়। নইলে হাজারটা বিরিয়ানির রকম দেখে তালগোল পাকিয়ে ফেলবেন।
অবশ্যই দেখবেন গোলকুণ্ডা ফোর্ট। হুসেন সাগর থেকে ৯ কিমি দূরে এই দূর্গ। এই কেল্লা তৈরির পিছনে এক ঐতিহাসিক কাহিনি আছে। প্রাচীন কালে মেষ পালকরা এই পাথুরে টিলার উপর মেষ চরাতে গিয়ে কোনও এক মূর্তির খোঁজ পায়। সে খবর যায় রাজার কানে। সেই সময় কাকতীয় রাজাদের রাজত্ব। রাজা এটিকে রাজ্যের জন্য শুভ মনে করে নির্দেশ দেন, পবিত্র স্থানটিকে দেবতার আলয় করতে হবে। তৈরি হয় মাটির দূর্গ। এর প্রায় দু’শো বছর পরে বাহামনী রাজারা কাকতীয় সাম্রাজ্য দখল করে নেয়। তাদের হাতে দূর্গের রক্ষণাবেক্ষণ পর্ব চলে। পরবর্তীকালে কুতুবশাহী রাজাদের হাতে আমূল পরিবর্তন হয় এই দূর্গের। ১৬৮৭ সালে মোঘল সম্রাট আওরঙ্গজ়েব গোলকুণ্ডা দখল নেবার পরে এই দূর্গ ধীরে ধীরে ভগ্নদশায় চলে যায়।
এই দুর্গের ৮টি দরজার মধ্যে ফথে দরজার কথা না বলেই নয়। এটিই প্রবেশ-পথ। এই দরজায় আওরঙ্গজ়েবের সেনা আক্রমণের সময় রাজা দূর্গ-শীর্ষ থেকে বুঝতে পেরে ছিলেন আক্রমণের কথা। তিনি তখন পালিয়ে যান। কী ছিল সেই জানতে পারার রহস্য? সেই সময়কার প্রকৌশলীর বুদ্ধি দেখে বিস্ময় জাগে। ফথে দরজার সামনে চাতালে দাঁড়িয়ে হাতে হাতে তালি দিন। ১ কিমি দূরে দূর্গ শীর্ষে কেউ দাঁড়ালে সে আপনার তালি শুনতে পাবে।
এরপর দেখুন সালার জং সংগ্রহশালা। বহু দর্শনীয় বিষয়বস্তুর ঠাঁই। এখানে ঘণ্টায় ঘণ্টায় একটি ঘড়িতে ঘণ্টা বাজে। যা বাজায় একটি যন্ত্রচালিত পুতুল!
তবে সব ‘দেখা’-কে ছাড়িয়ে যায় একটি ভাস্কর্য। নাম রেবেকা। ইতালিয়ান শিল্পী জিবি বেনজোনির অসাধারণ এক শিল্পকর্ম। দুধ সাদা পাথরের মূর্তি। এক লাজুক অপরূপার। তার মুখের উপর দিয়ে পাতলা চাদর। দেখলে ভ্রম হয়, চাদরটি কি সত্যিই পাথরের, নাকি কাপড়ের। এই লাজুক নয়নার গল্পটি লেখা আছে পাশে। সয়ম্ভর সভায় এক যুবককে দেখে পছন্দ হয় রেবেকার। তিনি তখন লজ্জায় বিহ্বল হয়েছিলেন। এ মূর্তি সেই গল্পই ধারণ করে।
এর পাশাপাশি চারমিনার তো দেখবেনই দেখবেন। কিন্তু ভুলেও মুক্ত কিনতে যাবেন না। বরং হুসেন সাগরে ইচ্ছে হলে নৌকা বিহার করতে পারেন। আর মক্কা মসজিদটা বাদ যায় কেন?
দেখাদেখি হয়ে গেলে খানা হোক বিরিয়ানি দিয়ে। একটি দোকানের খবর তো আগেই দেওয়া আছে। এ ছাড়া শহরের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বহু বিরিয়ানির দোকান। তার মধ্যে কয়েকটির স্বাদ? উউউউউউফ!
এই প্রতিবেদনটি 'আনন্দ উৎসব' ফিচারের একটি অংশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy