Advertisement

Associate Partner

Style Partner

Associate Partner

Weddings Partner

Food Partner

Durga Puja 2022

ধনৌলটিতে কাচের দেওয়ালে মুখ দেখে তুষারশৃঙ্গ

দার্জিলিঙের পরে যদি কোনও হিল স্টেশনকে আমার প্রিয় জায়গার তালিকায় রাখতে হয়, তা হলে সেটা মুসৌরি।

ধনৌলটির প্রকৃতি

ধনৌলটির প্রকৃতি ছবি সৌজন্যে: সুচরিতা সেন চৌধুরী

সুচরিতা সেন চৌধুরী
শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৮:৩০
Share: Save:

ভিড়। থিক থিক করছে মানুষজন। দোকানপাট। কেনা-বেচা। অনেকে বলেন, পাহাড়ের নাকি কোনও ‘ফ্লেভার’ই নেই। কিন্তু দার্জিলিঙের পরে যদি কোনও হিল স্টেশনকে আমার প্রিয় জায়গার তালিকায় রাখতে হয়, তা হলে সেটা মুসৌরি। কেন জানি না, আমার জন্য উত্তরাখণ্ডের এই চিরপরিচিত পাহাড়ি শহরের প্রতিটি কোণায় যেন অপেক্ষা করে থাকে অনন্ত ভাললাগা। যত বার যাই তত বার নতুন নতুন করে ভাললাগা তৈরি হয়। তবে হ্যাঁ, ভাললাগা, ভালবাসা ভীষন ভাবে ব্যক্তিগত অনুভূতি। তাই মুসৌরি যাঁদের ভাল লাগে না তাঁরা প্লিজ যাবেন না। না-ভাললাগা নিয়ে পাহাড়ে যেতে নেই। তবে আজ আমি বলব মুসৌরি লাগোয়া অন্য একটি জায়গার কথা।

সে বারও মুসৌরি তালিকায় ছিল। কিন্তু তাঁর সঙ্গে আমরা জুড়ে নিয়েছিলাম উত্তরাখণ্ডেরই ধনৌলটি। পুজো ভ্রমণ শুরু হয়েছিল ধনৌলটি দিয়ে। কলকাতা থেকে রাজধানী এক্সপ্রেসে দিল্লি পৌঁছে সেই রাতের ট্রেনেই কাকভোরে পৌঁছে গেলাম দেহরাদূনে। তখনও আলো ফোটেনি। বাইরে বেশ ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব। দূরে পাহাড়ের হাতছানিটা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। সবাইকে ওয়েটিংরুমে বসিয়ে গাড়ি খুঁজতে বেরিয়ে পড়লাম। পেয়েও গেলাম। আলো-আঁধারির মধ্যেই গাড়ি ছুটল ধনৌলটির উদ্দেশে। ৩৬ কিলোমিটার রাস্তা পৌঁছে গেলাম ২ ঘণ্টার কিছু বেশি সময়ে।

টেহরি গাঢ়বাল জেলার এই ছোট্ট জনপদ ঘিরে রয়েছে উজাড় করে দেওয়া প্রকৃতি। স্থানীয় মানুষদের আনোগোনা। তেমন ভাবে ট্যুরিস্ট নেই বললেই চলে। তবে ফাঁকায় ফাঁকায় শুধু প্রকৃতির সঙ্গে সময় কাটাতে হলে ধনৌলটির কোনও বিকল্প নেই এই চত্বরে। অক্টোবর মাসের শেষের দিক হওয়ায় বরফশৃঙ্গগুলি স্পষ্ট জানান দিচ্ছে তারা রয়েছে। আমাদের গাড়ি মূল রাস্তার উপর যেখানে এসে থামল সেখানেই দাঁড়িয়ে রয়েছে পুরো কাচের দেওয়ালের হোটেল। বরফ শৃঙ্গের ছবি ধরা পড়ছে সেই কাচে। প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট। আর এই মুগ্ধতাতেই ঘটল এক কাণ্ড। গাড়ি থেকে একটা ব্যাগ নামাতে ভুলে গেলাম। ভাগ্যিস চালকের ফোন নম্বর ছিল। তাঁকে ফোন করে জানা গেল তিনি পৌঁছে গিয়েছেন মুসৌরি। তার পর সেখানকার এক হোটেলে আমাদের ব্যাগটি তিনি রেখে গেলেন। সেই ব্যাগ আনতে হোটেলওয়ালার বাইকে চেপে মুসৌরি ছুটতে হল আমাদেরই এক সঙ্গীকে। শেষ পর্যন্ত ব্যাগ ফিরল যথাস্থানে।

ও এখানে বলে রাখা ভাল, ধনৌলটিতে বিএসএনএল ছাড়া কোনও মোবাইল সেই সময় কাজ করত না। তবে হোটেলের ওয়াইফাই ব্যবহার করা যায়। তাই দিয়েই কাজ চালাতে হবে যাঁদের কাছে বিএসএনএল কানেকশন নেই। তবে ওই পরিবেশে মোবাইলের প্রয়োজন হয় না। হোটেল রুমের জানলায় চোখ রাখলেই সামনে শুধুই রং বদলে বদলে দাঁড়িয়ে রয়েছে পাহাড়ের ধাপ। দিনের প্রতি মুহূর্তে বদলে যাচ্ছে তার রূপ। সূর্য ডুব দিতেই শীতের কামড়টা বেশ টের পাওয়া গেল। তার মধ্যে দু’রাতের জার্নির ক্লান্তি তো ছিলই। লেপের তলায় ঢুকে ভাতঘুমটা ভালই এল। তবে জানলার পর্দা এক বারের জন্যও টানা হয়নি। চোখ খুললেই সামনে দাঁড়িয়ে শুধুই প্রকৃতি। কিন্তু প্রথম দিন যখন দুপুরের ঘুম ভাঙল, তখন অন্ধকার নেমেছে পুরো ধনৌলটি জুড়ে। এখানে পাহাড়ে আলোর রোশনাই নেই। তাই সমস্ত চরাচরই ডুবে রয়েছে অন্ধকারে। ঘরেই সন্ধের চা আনিয়ে নিলাম। বাইরের ঘুটঘুটে অন্ধকার, কনকনে শীত সঙ্গে গরমাগরম চা আর পকোড়ার সঙ্গে আড্ডা জমে গেল।

টেহরি ড্যামে স্পিড বোট রাইড

টেহরি ড্যামে স্পিড বোট রাইড ছবি সৌজন্যে: সুচরিতা সেন চৌধুরী

রাত হতেই ডিনারের ডাক এল। রীতিমতো কাঁপতে কাঁপতে ডিনার হলে গিয়ে আমরা রাতের খাওয়া সারলাম। শীত উপভোগ করব বলে ওই রাতেই হোটেলের বাইরে এসে দাঁড়াতেই যেন মনে হল, তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নীচে নেমে গিয়েছে। তবে হোটেলের লোকেরা জানালেন, না, তেমন কোনও ব্যাপার নেই। তবে তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রির নীচেই রয়েছে। শীতের শুরু থেকেই এই এলাকা পুরো বরফে ঢেকে যায়। ধনৌলটির এটাই বড় আকর্ষণ। বুঝতে পারলাম কেন এত বরফ পড়ে এখানে। এখানকার উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সাড়ে সাত হাজার ফিট। সারা ক্ষণই একটা কনকনে ঠান্ডা হাওয়া থাকে। যা রীতিমতো কাঁপুনি ধরাচ্ছে যাবতীয় গরম জামা-কাপড় চাপিয়েও। বাইরে দাঁড়িয়েই টের পেলাম, তাপমাত্রা কমছে। তাই ঘরে ঢুকতেই হল।

সকালের ঘুম ভাঙতেই জানলার ফ্রেমে ধরা পড়ল তুষারশৃঙ্গ। আগেই বলেছি, যে ক’দিন ধনৌলটিতে ছিলাম, জানলার পর্দা এক বারের জন্যও টানা হয়নি। তাই চোখ খুলেই লেপের তলা থেকে দেখতে পেতাম ঝকঝকে রোদ্দুরে চকচক করছে বরফমোড়া পাহাড়। লেপের আবেশ ছেড়ে গরম জামা-কাপড় চাপিয়ে হোটেলের বাইরে আসতেই আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরল ঠান্ডা। তবে রোদের মধ্যে কনকনে ঠান্ডার অনুভূতিটা উপভোগ্য। পাহাড়ের রাস্তায় অজানার উদ্দেশে হেঁটে বেড়ানো আমার সব সময়ই প্রিয়। তাই হাঁটা শুরু করলাম যে দিকে দু’চোখ যায়। মাঝে ছোট ছোট কয়েকটি দোকান পড়ল। তাতে চা, ব্রেকফাস্ট পাওয়া‌ যায়। কিন্তু মুশকিল হল হোটেল ছেড়ে বেরোতেই মোবাইল নেটওয়ার্ক উধাও। হাঁটতে হাঁটতে এত দূর চলে গিয়েছি যে, আমার সঙ্গে আর কেউ যোগাযোগ করতে পারছে না। ফেরার পরে বকা খেতে হল বটে, তবে পাহাড়ি অচেনা রাস্তায় এই হেঁটে বেড়ানোর অনুভূতি, বলে বোঝানো যাবে না। বার বার হারিয়ে যেতে ভাল লাগে এই অজানার উদ্দেশে।

ব্রেকফাস্ট সেরে বেরিয়ে পড়লাম টেহরি ড্যাম দেখতে। যা নিয়ে দীর্ঘ লড়াইয়ের গল্প সকলেরই জানা। তাই তাঁর সৌন্দর্যের কথাই বলব। ভাগীরথী নদীর উপর তৈরি হয়েছে হাইড্রো ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশন। যার জন্য ধ্বংস হয়ে গিয়েছে একটা পুরো গ্রাম। নিজেদের জন্মের গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে অন্যত্র। আজও ড্যামের জল কম থাকলে মাথা তুলে দাঁড়ায় টেহরি গ্রামের মন্দিরের চূড়া। সেটা ভেঙে ফেলা হয়নি। পরিবেশবিদরাও চাননি, এই ড্যাম হোক। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়েছে এবং এখন সেটা দ্রষ্টব্য। পাহাড়ঘেরা বিশালাকার জলাশয়ের পান্না সবুজ জলে চোখ আটকে যাবেই। রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে জলের উপর পাহাড়ের প্রতিফলন, আকাশের রং বদলের ছবি দেখতে দেখতে কেটে যাবে সময়। চাইলে ড্যামের পাশের কটেজে কাটানো যায় রাত। তবে আমাদের পরিকল্পনায় ছিল না। তাই ড্যামের পাড়ে বসে চা, ম্যাগি খেয়ে লাঞ্চ সেরে নিলাম। চাইলে স্পিডবোট রাইড করা যেতে পারে। টেহরি ড্যামের ভাললাগাকে সঙ্গে নিয়ে রওনা দিলাম প্রিয় মুসৌরির পথে।

কীভাবে যাবেন— কলকাতা থেকে ট্রেনে দেহরাদূন গিয়ে সেখান থেকে গাড়িতে পৌঁছতে হবে ধনৌলটি। স্টেশনের বাইরে থেকেই গাড়ি পাওয়া যাবে। বিমানে গেলেও যেতে হবে দেহরাদূন। দিল্লি থেকেও সরাসরি গাড়ি নিয়ে যাওয়া যেতে পারে।

কোথায় থাকবেন— মুসৌরিতে প্রচুর হোটেল থাকলেও ধনৌলটিতে কম। তাই আগে থেকে বুকিং করে যাওয়াই ভাল। খেতে হবে হোটেলেই। প্রয়োজনে সাইড সিনের জন্য হোটেল থেকেই গাড়ি পাওয়া যাবে।

এই প্রতিবেদনটি 'আনন্দ উৎসব' ফিচারের একটি অংশ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy