রাত পোহালেই কালীপুজো। দেবীর আারাধনায় মেতে উঠবে গোটা বাংলা। শ্যামা মায়ের আগমনে চার দিকে আলোর রোশনাইয়ে ভরে উঠছে। একই সঙ্গে দেশ জুড়ে পালন করা হবে দিওয়ালি বা দীপাবলি। দুর্গাপুজোয় আমরা অনেক বনেদি বাড়ির পুজো নিয়ে কথা বলি। কালীপুজোয় কি বনেদি বাড়ির অভাব?
উত্তর হল, একেবারেই না।হয়তো তুলনামূলকভাবে কম। তবু আছে অনেক। মা কালীর বনেদি পুজোর খোঁজ নিল আনন্দবাজার অনলাইন।
সালটা ১১২৫। তখন কলকাতা শহরই গড়ে ওঠেনি। স্বাভাবিক ভাবেই বাংলার অধিকাংশ জায়গা জঙ্গল ঘেরা। বর্তমান গিরিশ পার্ক মেট্রো স্টেশন অঞ্চলের বাসিন্দা মতিলাল বন্দ্যোপাধ্যায় তখন মা কালীর স্বপ্নাদেশ পান। তাতেই পুজোর আদেশ দেওয়া হয় তাঁকে।
পরের দিন বাড়ির কর্তা সেই মতিলাল ঘর থেকে বেরিয়ে জঙ্গল ঘেরা জায়গায় একটি মা কালীর মাটির মূর্তি পান। তবে সেই মূর্তির রূপ কালীর অনান্য রূপের থেকে পুরোপুরি আলাদা।
মা এখানে ভগবান শিবের উপর বসে। হ্যাঁ! ঠিক পড়ছেন। মা দাঁড়িয়ে নেই। বসে আছেন। বাকি অংশ অবশ্য এক। সবাই এই রূপকে বলেন, বসা কালী।
গিরিশ পার্ক অঞ্চলে 'বসা বাড়ি কালীপুজো'র এ বারে ৮৯৮ বছর। এমনটাই দাবি পরিবারের সদস্যদের। সেই মতিলালবাবুর পাওয়া কালীর মূর্তি এখনও পুজো করা হয় এখানে। প্রতি বছর পুজোর সময় নতুন রঙে রাঙিয়ে, নতুন বস্ত্র পরানো হয় মাকে। সোনার অলঙ্কারে মুড়ে ফেলা হয় দেবী প্রতিমা। বছর ভর মায়ের প্রতিনিয়ত পুজো করা হয়। প্রতি অমাবস্যায় বিশেষ পুজো হয়। মা'কে খিচুড়ি, ভাজা ইত্যাদি দিয়ে ভোগ দেওয়া হয়। প্রতি মহালয়ার দিনে লুচির ভোগ দেওয়া হয়।
অম্বুবাচীর চারদিন অন্য জায়গার মতো এখানে মায়ের মুখ ঢাকা হয় না। সেই সময় দেবী মূর্তিপুজো করা না হলেও ঘট পুজো করা হয়। স্নানের দিন মাকে মাছ, ভাত, পান ভোগ হিসাবে দেওয়া হয়।
কালীপুজোর দিন সকাল থেকেই তোড়জোড় শুরু হয়। তবে ভক্তদের ভিড় থাকায় পুজো শুরু করা যায় না। তা হতে হতে গভীর রাত।
ভোর হয় পুজো শেষ হতে। শাড়ি,গহনা দিয়ে মাকে সাজানো হয়। এই ক্ষেত্রে ভক্তদের দেওয়া শাড়ি পরিয়ে দেওয়া হয় তাঁর অঙ্গে। ভোগে নতুন ওঠা সবজি দিয়ে খিচুড়ি রান্না করা হয়।
অমাবস্যা থাকাকালীন মাকে শোল মাছের ভোগও দেওয়া হয়। পুজোয় মানত থাকলে কেউ যদি বলি দিতে চায়, তিনি দিতে পারেন। তবে বাড়ির পক্ষ থেকে বলি দেওয়া হয় না।
পরিবারের লোকের পুজো করার নিয়ম থাকায় বিশেষ দিনগুলিতে বাড়ির জামাই সুরঞ্জন চক্রবর্তী পুজো করেন। বর্তমানে এই বাড়ির পুজোর দায়িত্ব মেয়েদের উপর। বাড়ির পুরুষ সন্তান না থাকায় শ্বশুড়বাড়ি থেকে মেয়েরাই এসে এই পুজো করেন। পরিবারের মেয়ে মধুশ্রী চট্টোপাধ্যায় এখন এই পুজো এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
আগের বছর পর্যন্ত মধুশ্রীদেবী ও তাঁর বোন তনুশ্রী এই পুজো করতেন। তনুশ্রীদেবী গত হয়েছেন। এ বার তাঁর মেয়েরা পুজোর সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছেন।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy