Advertisement

Associate Partner

Style Partner

Associate Partner

Weddings Partner

Food Partner

Durga Puja Celebration in Naskari Durga Puja at Nadia

হাজি সাহেবের গড়া মন্দিরে আসেন উমা, দেখতে ভিড় জমান বাংলাদেশের মানুষও, দেখে আসুন নস্করী দুর্গা

নস্করী দুর্গা। কেন এমন নাম? জানেন কি? যার ঠাঁই করিমপুরের কাছাকাছি তেহট্টে। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে। এই পুজো নিয়ে লিখেছেন তমোঘ্ন নস্কর

আনন্দ উৎসব ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১২:৩৯
Share: Save:

'এখেনেই আমি ঠাঁই নিলুম। এখানেই আমার অধিবাস হবে।’ শ্মশান থেকে ছুটে আসে নস্কর বর্মণ। এ তাঁকে কী নির্দেশ দিলেন মা! তবে, কি মায়ের এই ইচ্ছা? নিম বৃক্ষের তলায় পঞ্চমুণ্ডির আসনে স্থাপন করলেন মা-কে। তন্ত্র মতেই নিষ্ঠাভরে পূজা দিলেন মা-কে।

সেই থেকে শুরু হল পূজা। অভিমানী মা ছেলের নামেই নাম পেলেন, ‘শ্রী শ্রী নস্করী দুর্গা মাতা’ বা নস্করী মা।

সে বহু যুগ আগের কথা। তখন মোগলদের শাসন। রাজশাহীর ভেড়ামারা-র জমিদার-গৃহে মায়ের পুজো। ওই অঞ্চলের কাছে এক গ্রাম। নাম মুরুটিয়া। সেখানে মৃৎশিল্পীদের ডেরা। তো, সেখানকার কোনও এক ‘পাল’-এর ঘর থেকে থেকে সাজ-সরঞ্জাম আর মূর্তি নিয়ে চলেছেন জমিদার। পথে তুমুল ঝড়-ঝঞ্ঝা। এগোবার উপায় নেই। পথি মধ্য আটকে পড়লেন জমিদার।

অন্য দিকে, সেখানেই নিম বৃক্ষের তলে সাধনা করতেন নস্কর বর্মণ বা নস্কর ঠাকুর। সে রাতেই স্বপ্নে দেখলেন মা'কে। শুরু হল মায়ের পূজা।

‘নবম্যাদি কল্পারম্ভ’ অর্থাৎ কৃষ্ণ নবমীতে মায়ের বোধন হয় ওই নিম বৃক্ষের তলায়। কাল যায়, দিন যায় তন্ত্রোক্ত পূজা ধীরে ধীরে বদলে যায়। মা’য়ের নির্দেশে বন্ধ হয় বলি। কুমড়ো বলিতেই সমাধা হয় পূজা।

নস্কর ঠাকুরের পর পূজা ধরলেন চট্টোপাধ্যায় পরিবার। তাঁরা নস্কর ঠাকুরেরই বংশধর। নস্কর ঠাকুরের প্রতি মায়ের যেন অপার ভালবাসা। সাধক ঠাকুর চলে গিয়েছেন কিন্তু মা নস্কর বাড়িতে আপন ঘর মেনে নিয়েছিলেন।

কথিত আছে, ‘কোন এক সময় কুঠিঘাটে এক শাঁখারি বালিকাকে দেখতে পান। বালিকার সিঁথি ভর্তি সিঁদুর কিন্তু দুইটি হাত ফাঁকা! শাঁখারি তাঁকে দেখে অবাক হযন! বালিকা এগিয়ে এসে তাঁর কাছে শাঁখা পরতে চায়। শাঁখারি তাকে শাঁখা পরিয়ে দাম চাইলে, সেই বালিকা বলে, ‘নস্কর বাড়িতে আমি থাকি। ওদের কাছ থেকেই আমার শাঁখার দাম নিয়ো।’ শাঁখারি এগোয় নস্কর বাড়ির দিকে। পিছনে পিছনে বালিকা।

নস্কর বাড়িতে আসার পর শাঁখারি জানতে পারেন, সে বাড়িতে অমন কোনও বালিকা নেই! বর্ণনা শুনে শাঁখারির সঙ্গে ছুটে বেরিয়ে আসেন বাড়ির কর্তা। এসেই যুগলে দেখেন, এক অপরূপ দৃশ্য! বালিকা জলে ঝাঁপ দিচ্ছে আর জলে বিম্বিত হচ্ছে দশভুজা মায়ের, বরাভয়দায়িনী রূপ! তরঙ্গের সঙ্গে কেঁপে কেঁপে ভেঙে মিলিয়ে যায় সে রূপ!’

আজও মায়ের শাঁখা সেই পাল শাঁখারির বাড়ির লোকেরা নিজে হাতে এসে দিয়ে যান। মা আর কারুর শাঁখা হাতে নেন না। সপ্তমীর দিন অন্নভোগ, অষ্টমীতে লুচি ভোগ, নবমীতে খিচুড়ি, পঞ্চব্যঞ্জন ও দশমীতে খই-দইয়ের নৈবেদ্য দেওয়া হয় মাকে।

মায়ের লীলা এখানে অপার। শোনা যায়, বহু বছর ধরে মায়ের ঠাঁই ছিল নিম গাছের তলার চালাটি। তারপর সেটিকে পাকা মন্দির বানিয়ে দেন এক হাজি সাহেব। দুই ধর্মের মানুষকে নিজের আঁচলে ঠাঁই দিয়েছিলেন মা। তাই আজও বাংলাদেশ থেকেও বহু মানুষ ছুটে আসেন মায়ের দর্শনে।

মায়ের লীলা কেবল এখানেই শেষ নয়! পুরনো পথঘাট সব পাকা হয়ে গেলেও, যে পথ দিয়ে প্রথম প্রতিমা নিরঞ্জন হয়েছিল— শ্মশান ঘেঁষা, সেই পুরাতন বাঁশ বাগানের পথ ধরে খানাখন্দ পেরিয়ে মাকে নিরঞ্জনে নিয়ে যেতে হয়। এর অন্যথা হলে, মা নাকি এত ভয়ানক ভারী হয়ে যান যে, তোলা যায় না! বহু মানুষ এই ঘটনার সাক্ষী রয়েছেন। সে ঘটনা বেশিদিন পূর্বেরও নয়। আজও সেখানে গেলে কান পেতে শোনা যায় এই ঘটনার কথা।

কুঠিঘাট থেকে হোগলামারি প্রায় এক কিলোমিটার পথ সাত বার প্রদক্ষিণ করানো হয় মাকে। অথচ মায়ের এমনই মহিমা যে, নিরঞ্জনকারীরা পথের কষ্ট বুঝতেও পারেন না।

যাবেন নাকি করিমপুরের কাছাকাছি তেহট্টে ‘শ্রী শ্রী নস্করী মাতা’-র দর্শনে।

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

অন্য বিষয়গুলি:

Puja Parikrama Durga Puja 2023
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy