Advertisement

Associate Partner

Style Partner

Associate Partner

Weddings Partner

Food Partner

Green Kali Puja

সবুজ কালী! এ কাহিনির সঙ্গে জড়িয়ে এক বৈষ্ণব

সবুজ কালী। এ অঙ্গ রাগের সঙ্গে কী ভাবে জড়িয়ে আছেন এক বৈষ্ণব? শ্যামাপুজোর দিন মা'কে এখানে বাঁশি বাজিয়ে শোনান বাদক।

তমোঘ্ন নস্কর
শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২৩ ২১:২০
Share: Save:
০১ ১০
চতুর্দিক থেকে ঘিরে নিচ্ছে শিয়ালের রব। ভীতিকর রাত্রি-আওয়াজ। পেঁচার ক্ষুধার্ত ফ্যাঁসফ্যাঁস। এত রাতে এ বনে মানুষ আসে না! তারা ক্ষুধার্ত এবং বিরক্ত। সব কিছু উপেক্ষা করে চললেন বটকৃষ্ণ।

চতুর্দিক থেকে ঘিরে নিচ্ছে শিয়ালের রব। ভীতিকর রাত্রি-আওয়াজ। পেঁচার ক্ষুধার্ত ফ্যাঁসফ্যাঁস। এত রাতে এ বনে মানুষ আসে না! তারা ক্ষুধার্ত এবং বিরক্ত। সব কিছু উপেক্ষা করে চললেন বটকৃষ্ণ।

০২ ১০
 মনের মধ্যে কেবল কৃষ্ণনামটি ভরে নিয়েছেন। যে ভাবেই হোক সন্ন্যাসী ঠাকুরের কাছে তাঁকে যেতে হবে। ক্রমশ বন পাতলা হয়ে আসে। ক্ষীণ আলোয় দৃশ্যমান হয় এক পর্ণকুটির। সন্ন্যাসী ঠাকুর তখন তাঁরই অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে। এ কাহিনি এক পরম বৈষ্ণবের, যার কাছে মা ধরা দিয়েছিলেন একই দেহে দুই রূপে। দুর্বাদলঘন চিকন শ্যামে মা আপনাকে স্থিতি দিয়েছিলেন। এ কাহিনি মা সবুজ কালীর, না কৃষ্ণকালীর তথা অভিন্ন ব্রহ্মের।

মনের মধ্যে কেবল কৃষ্ণনামটি ভরে নিয়েছেন। যে ভাবেই হোক সন্ন্যাসী ঠাকুরের কাছে তাঁকে যেতে হবে। ক্রমশ বন পাতলা হয়ে আসে। ক্ষীণ আলোয় দৃশ্যমান হয় এক পর্ণকুটির। সন্ন্যাসী ঠাকুর তখন তাঁরই অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে। এ কাহিনি এক পরম বৈষ্ণবের, যার কাছে মা ধরা দিয়েছিলেন একই দেহে দুই রূপে। দুর্বাদলঘন চিকন শ্যামে মা আপনাকে স্থিতি দিয়েছিলেন। এ কাহিনি মা সবুজ কালীর, না কৃষ্ণকালীর তথা অভিন্ন ব্রহ্মের।

রটন্তী তিথি- কৃষ্ণ ও কালী একই অঙ্গে

০৩ ১০
সে প্রায় সত্তর বছরের কথা। হরিপালের, শ্রীপতিপুর গ্রাম  বৈষ্ণব পরিবারের সন্তান বটকৃষ্ণ অধিকারী। গরিবি নিত্য সঙ্গী। ম্যাট্রিক দিয়ে পরবাসী হয়েছিলেন পেটের দায়ে কিন্তু ওই যে মায়ের লীলা! বিবাহিত জীবনে দারিদ্র বড় কঠিন বালাই। সবই বিষময় হয়। বৈরাগ্য আসে। গরু নিয়ে বেরিয়ে পড়ে, মাঠে ঘাটে শ্মশানে ঘুরে বেড়াতেন অধিকারী মশাই।

সে প্রায় সত্তর বছরের কথা। হরিপালের, শ্রীপতিপুর গ্রাম বৈষ্ণব পরিবারের সন্তান বটকৃষ্ণ অধিকারী। গরিবি নিত্য সঙ্গী। ম্যাট্রিক দিয়ে পরবাসী হয়েছিলেন পেটের দায়ে কিন্তু ওই যে মায়ের লীলা! বিবাহিত জীবনে দারিদ্র বড় কঠিন বালাই। সবই বিষময় হয়। বৈরাগ্য আসে। গরু নিয়ে বেরিয়ে পড়ে, মাঠে ঘাটে শ্মশানে ঘুরে বেড়াতেন অধিকারী মশাই।

০৪ ১০
নিজের মতো আড়বাঁশি বাজিয়ে মনের সব কিছু উপুড় করে দেন। এমনই এক দিনে গরুর খোঁটা বাঁধছেন। দেখা দেন, এক সন্ন্যাসী জঙ্গুলে মহাশ্মশানের গর্ভে তাঁকে ডাক দেন। তার পর আসে সেই রাত। গুরুমুখী বিদ্যা সবই গুপ্ত। তাই সে কথা জানা যায় না। কিন্তু আমূল-পরিবর্তন ঘটে যায় তাঁর মননে।গোঁড়া বৈষ্ণব মানুষটা শক্তি সাধনা করেন। সিদ্ধ হন। এবং স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে মা কালীর মন্দির তিনি প্রতিষ্ঠার মনস্থ করেন। বাধ সাধে, কুলীন বৈষ্ণব পরিবার ও কুল!

নিজের মতো আড়বাঁশি বাজিয়ে মনের সব কিছু উপুড় করে দেন। এমনই এক দিনে গরুর খোঁটা বাঁধছেন। দেখা দেন, এক সন্ন্যাসী জঙ্গুলে মহাশ্মশানের গর্ভে তাঁকে ডাক দেন। তার পর আসে সেই রাত। গুরুমুখী বিদ্যা সবই গুপ্ত। তাই সে কথা জানা যায় না। কিন্তু আমূল-পরিবর্তন ঘটে যায় তাঁর মননে।গোঁড়া বৈষ্ণব মানুষটা শক্তি সাধনা করেন। সিদ্ধ হন। এবং স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে মা কালীর মন্দির তিনি প্রতিষ্ঠার মনস্থ করেন। বাধ সাধে, কুলীন বৈষ্ণব পরিবার ও কুল!

মা'কে এই বাঁশি বাজিয়ে শোনানো হয়।

০৫ ১০
তিলক সেবা, রাধা-গোবিন্দের নাম না নিয়ে জল স্পর্শ হয় না যে গৃহে, সেই গৃহে শক্তি পূজন! কিন্তু ডাক যার এসেছে,  তিনি করেন কী? এ ক্ষুদ্র মানুষের সাধ্য কী, তাঁকে উপেক্ষা করে। বাড়িতে মায়ের ঘট স্থাপন করেই পূজাপাঠ করেন।

তিলক সেবা, রাধা-গোবিন্দের নাম না নিয়ে জল স্পর্শ হয় না যে গৃহে, সেই গৃহে শক্তি পূজন! কিন্তু ডাক যার এসেছে, তিনি করেন কী? এ ক্ষুদ্র মানুষের সাধ্য কী, তাঁকে উপেক্ষা করে। বাড়িতে মায়ের ঘট স্থাপন করেই পূজাপাঠ করেন।

০৬ ১০
আবার এক রাত আসে, স্বপ্ন দেখেন বটকৃষ্ণ ঠাকুর। নিরাকার বিন্দু হতে সাকার হয়ে বিন্দুতে মেলান মা! সে এক অপূর্ব শোভা!  কালো বা নীল নয়, নব দুর্বাদলঘন শ্যাম ও শ্যামা এক সাথে মিশে যাচ্ছেন ও লয় হচ্ছেন বারবার। খড়গ ও ত্রিশূল একই সঙ্গে।

আবার এক রাত আসে, স্বপ্ন দেখেন বটকৃষ্ণ ঠাকুর। নিরাকার বিন্দু হতে সাকার হয়ে বিন্দুতে মেলান মা! সে এক অপূর্ব শোভা! কালো বা নীল নয়, নব দুর্বাদলঘন শ্যাম ও শ্যামা এক সাথে মিশে যাচ্ছেন ও লয় হচ্ছেন বারবার। খড়গ ও ত্রিশূল একই সঙ্গে।

কৃষ্ণকালী ভাবকল্প

০৭ ১০
বটকৃষ্ণ ঠাকুর বুঝতে পারেন নির্দেশ। সমাজ উপেক্ষা করে, রটন্তী কালীপূজার দিনই প্রতিষ্ঠা করেন দুর্বাদল ঘনশ্যাম  কৃষ্ণকালী। এখানে মা পরম বৈষ্ণব, বিষ্ণু এখানে পরম শাক্ত... দুজনে মিলেমিশে একাকার!

বটকৃষ্ণ ঠাকুর বুঝতে পারেন নির্দেশ। সমাজ উপেক্ষা করে, রটন্তী কালীপূজার দিনই প্রতিষ্ঠা করেন দুর্বাদল ঘনশ্যাম কৃষ্ণকালী। এখানে মা পরম বৈষ্ণব, বিষ্ণু এখানে পরম শাক্ত... দুজনে মিলেমিশে একাকার!

মা সবুজ কালী

০৮ ১০
সময় গড়িয়েছে। বৃহৎ বৈষ্ণব সমাজের মধ্যমণি মা রয়ে গেছেন আজও। অদ্ভুত লীলা মায়ের, বটকৃষ্ণের বাঁশিতে মোহিত হয়ে ধরা দিয়েছিলেন কৃষ্ণকালী। তাই আজও নিত্য বাঁশি বাঁজিয়ে শোনাতে হয় তাকে। রেকর্ডিং নয় লাইভ! তৃতীয় পুরুষে এসে অধিকারী পরিবার বংশী বাদন ছাড়তে পারেনি তাই। বটকৃষ্ণ ঠাকুরের পুত্র কালিপদ অধিকারী (পণ্ডিত শিবানন্দপুরী) এই পঞ্চমুন্ডীর মন্দিরে সাধনা করেন। তিনিই বর্তমান সেবাইত।

সময় গড়িয়েছে। বৃহৎ বৈষ্ণব সমাজের মধ্যমণি মা রয়ে গেছেন আজও। অদ্ভুত লীলা মায়ের, বটকৃষ্ণের বাঁশিতে মোহিত হয়ে ধরা দিয়েছিলেন কৃষ্ণকালী। তাই আজও নিত্য বাঁশি বাঁজিয়ে শোনাতে হয় তাকে। রেকর্ডিং নয় লাইভ! তৃতীয় পুরুষে এসে অধিকারী পরিবার বংশী বাদন ছাড়তে পারেনি তাই। বটকৃষ্ণ ঠাকুরের পুত্র কালিপদ অধিকারী (পণ্ডিত শিবানন্দপুরী) এই পঞ্চমুন্ডীর মন্দিরে সাধনা করেন। তিনিই বর্তমান সেবাইত।

সাধক শিবানন্দপুরী। একদা বৈষ্ণব অধুনা শাক্ত সাধক।

০৯ ১০
পূজা বিধি:  মায়ের অঙ্গরাগ হয় দূর্বাঘাসের ভিতরের কচি সবুজ পাতার রং মিশিয়ে। দীপান্বিতা শ্যামা পুজোর দিন মায়ের বিশেষ ষোড়শ উপাচারে পূজা আরতি আমিষ ভোগ ও হোম নিবেদন হয়। আগের দিন ভুত চতুর্দশী তিথিতে, কৃষ্ণকালী মায়ের কাছে চৌদ্দ প্রদীপ জ্বালিয়ে মানত করলে মা ফেরান না। শ্যামা পূজার দিন রাত্রি দ্বিতীয় প্রহরে মা'কে বাঁশি বাজিয়ে শোনানো হয়। রাত নয়টা থেকে বারোটা পর্যন্ত অবিচ্ছিন্ন বাঁশি বাজে। সে এক অপূর্ব দৃশ্য। ওই দিন ভোগ হিসাবে ইলিশ মাছ থাকে । কারণ এই মায়ের প্রিয় ভোগ ইলিশ মাছ আর প্রিয় পুস্পার্ঘ্য জুঁই। মায়ের বাৎসরিক পূজা হয় রটন্তী পূজার তিথিতে।

পূজা বিধি: মায়ের অঙ্গরাগ হয় দূর্বাঘাসের ভিতরের কচি সবুজ পাতার রং মিশিয়ে। দীপান্বিতা শ্যামা পুজোর দিন মায়ের বিশেষ ষোড়শ উপাচারে পূজা আরতি আমিষ ভোগ ও হোম নিবেদন হয়। আগের দিন ভুত চতুর্দশী তিথিতে, কৃষ্ণকালী মায়ের কাছে চৌদ্দ প্রদীপ জ্বালিয়ে মানত করলে মা ফেরান না। শ্যামা পূজার দিন রাত্রি দ্বিতীয় প্রহরে মা'কে বাঁশি বাজিয়ে শোনানো হয়। রাত নয়টা থেকে বারোটা পর্যন্ত অবিচ্ছিন্ন বাঁশি বাজে। সে এক অপূর্ব দৃশ্য। ওই দিন ভোগ হিসাবে ইলিশ মাছ থাকে । কারণ এই মায়ের প্রিয় ভোগ ইলিশ মাছ আর প্রিয় পুস্পার্ঘ্য জুঁই। মায়ের বাৎসরিক পূজা হয় রটন্তী পূজার তিথিতে।

মায়ের তৃতীয় নয়ন তলে চন্দ্র ও সূর্য

১০ ১০
অদ্ভুত এ বঙ্গ আর অদ্ভুত এ বঙ্গের কালীক্ষেত্র। কত রূপে, কত ভাবে যে এখানে মা বিরাজমানা। দেখেই আসুন না, দূর্বাদলশ্যাম সবুজ মা'কে। হুগলী জেলার নালিকুল স্টেশন থেকে শিয়াখালা যাবার অটো চেপে নারকেলতলা স্টপেজ ঠনঠনেপাড়া। অধিকারী ঠাকুর বাড়ি। ঋণ: এই পরিবারের তৃতীয় প্রজন্ম দেবজ্যোতি অধিকারী।  এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

অদ্ভুত এ বঙ্গ আর অদ্ভুত এ বঙ্গের কালীক্ষেত্র। কত রূপে, কত ভাবে যে এখানে মা বিরাজমানা। দেখেই আসুন না, দূর্বাদলশ্যাম সবুজ মা'কে। হুগলী জেলার নালিকুল স্টেশন থেকে শিয়াখালা যাবার অটো চেপে নারকেলতলা স্টপেজ ঠনঠনেপাড়া। অধিকারী ঠাকুর বাড়ি। ঋণ: এই পরিবারের তৃতীয় প্রজন্ম দেবজ্যোতি অধিকারী। এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy