কংগ্রেসের ফান্ড সংগ্রহ করতে তাঁর বাড়ি এসেছিলেন মহাত্মা গাঁধী স্বয়ং। লর্ড কার্জন ছিলেন যাঁর অন্তরঙ্গ বন্ধু। যার এককথায় লক্ষ লক্ষ টাকার ডোনেশন জমা পড়ত। ঘনশ্যাম দাস বিড়লা, বদ্রীদাস গোয়েঙ্কার মতো শিল্পপতিরা যাঁর মৃত্যুর পর শববহনে কাঁধ দিয়েছিলেন। তিনি হলেন ভারত-বিখ্যাত চিকিৎসক স্যার কৈলাশ চন্দ্র বসু। সিমলার বসু পরিবারের মধুসূদন বসুর দ্বিতীয় সন্তানটি অসম্ভব মেধাবী ছিলেন। প্রথমে আইনের ছাত্র ছিলেন পরে কলকাতা মেডিকাল কলেজ থেকে ডাক্তারি পাশ করেন এবং ক্যাম্পবেল হাসপাতালে মেডিকাল অফিসার হন। তার পর ভাইয়ের পরামর্শে চাকরি ছেড়ে স্বাধীন চিকিৎসা ব্যবসা শুরু করেন।
১৮৭৮ সাল। ৭৮ নম্বর সুকিয়া স্ট্রিটে, এক বিরাট অট্টালিকা নির্মাণ করেন কৈলাস বসু। সেই অট্টালিকায় ১৮৮০ সালে শুরু হয় জাঁকিয়ে দুর্গাপুজো। সেই পুজো আজ পায়ে পায়ে ১৪৩ এ পা দিয়েছে। বসু বাড়ির দুর্গামূর্তিকে সবদিক থেকে সমানভাবে দেখা যায়। সেকারণে নাম, 'সর্বসুন্দরী'।
সেযুগে নাটমন্দিরের ১২ টি থাম ও কার্ণিশ মুড়ে ফেলা হত কাঁচের নকশায়। যা আলো পড়লে ঝলমল করে উঠত। পুজোর কটা দিন সাতটি উঠোনে সাতটি আনন্দ অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকত। যেমন কোথাও নাচ-গান তো কোথাও বা কমিক কিংবা সিনেমার আসত বসত। গওহরজানের মত বাইজি এসে গান ধরেছেন এবাড়ির পুজোয়। শুধু তাই নয়, পুজোর কটা দিন পাড়ায় পাড়ায় ঢ্যাঁড়া পিটিয়ে নিমন্ত্রণ করে ভোররাত অবধি খাওয়া দাওয়া চলত।
পুজোর অষ্টমীর দিন ব্রহ্মদত্যি আসার এক কিংবদন্তীর কাহিনির কথা উল্লেখ করেছেন স্যার কৈলাস বসুর প্রপৌত্র বলাই চাঁদ বসুর কন্যা সর্বাণী চক্রবর্তী। তিনি বলছেন, " আমি শুনেছি কৈলাস বসুর আমলে সন্ধিপুজোর সময় এক ব্রহ্মদত্যি আসতেন এবং মন্ত্র উচ্চারণ করে চলে যেতেন। পরে সেই মন্ত্র উচ্চারণ করে পুজো শুরু করতেন পুরোহিত।" সর্বাণী চক্রবর্তীর কথায়, "অষ্টমীর পুজোয় আজও বাজে সেযুগের 'চাইনিজ গং'। যা কলকাতার আর কোনো পুজোয় সেভাবে বাজতে শোনা যায় না। একবার কৈলাস বসুর পুত্র চণ্ডীচরণ বসু সেই গং বাজানো বন্ধ করলে সেই চাইনিজ গং নিজের থেকে বাজতে শুরু করে। তারপর থেকে আজও সেই রেওয়াজে ভাটা পড়েনি।" ঠাকুর আজও বিসর্জন হয় আহিরিটোলার ঘাটে।
কৈলাস বসুর সঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের এক শ্রদ্ধার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। কৈলাস বসুর বাড়ির পুজোয় তিনি এসেছিলেন কিনা জানা যায় না কিন্তু ঠাকুরের দেহরক্ষার পর কৈলাস একজন আদর্শ শিষ্যের ন্যায় গুরুর প্রতিটি উপদেশ মেনে চলতেন।সর্বাণী চক্রবর্তীর কথায়, "একবার কৈলাস বসুর পুত্র অসুস্থ হয়ে আঙুর খেতে চান। সেসময় আঙুর ছিল দুর্লভ কিন্তু শ্রীরামকৃষ্ণ কৈলাস বসুকে স্বপ্নে দর্শন দেন এবং অলৌকিক ভাবে পরদিন এক পেশোয়ারি ভক্ত আঙুর নিয়ে কৈলাস বসুর বাড়িতে হাজির হন!"শোনা যায়, মত্যুর সময় কৈলাস ডাক্তার তিন বার ঠাকুর বলে উঠেছিলেন। তখন তাঁর ঘরে ঝোলানো শ্রীরামকৃষ্ণের ছবিটি পড়ে যায়।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy