Advertisement

Associate Partner

Style Partner

Associate Partner

Weddings Partner

Food Partner

Durga Puja 2020

পঙ্‌ক্তি ভোজন আবার হবে আসছে বছর

শহর ও শহরতলির অধিকাংশ পুজোর উদ্যোক্তাই জানাচ্ছেন, ‘পঙ্ক্তি ভোজনের পরিকল্পনা বাতিল।’

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২০ ১৬:০১
Share: Save:

‘ওরে ছেঁচড়াটা এ দিকে নিয়ে আয়।’

শারদোৎসবের দুপুরে এমন হাঁকডাকে গমগম করত পাড়ার কমিউনিটি হল কিংবা মণ্ডপের পিছনে ম্যারাপবাঁধা ঘেরা জায়গা। গত বছরও সেখানে বসেই কব্জি ডুবিয়ে খেয়েছেন অনেকেই। ভোজন শেষে পান অথবা মশলা মুখে পুরে বাড়ি ফিরে কিছুক্ষণের বিশ্রাম। সন্ধ্যার মুখে ফের স্বেচ্ছাসেবীর ভূমিকায় বা আড্ডার মেজাজে মণ্ডপে হাজির হওয়া।

করোনার সৌজন্যে এ বার বদলে যাবে সেই ছবিটাই। শহর ও শহরতলির অধিকাংশ পুজোর উদ্যোক্তাই জানাচ্ছেন, ‘পঙ্ক্তি ভোজনের পরিকল্পনা বাতিল।’ থিম, আলো, প্রতিমার পাশাপাশি দুর্গাপুজো বললেই ভেসে ওঠে জমিয়ে আড্ডার চেনা ছবি। বেশির ভাগ বাড়ির হেঁশেলেই পুজোর চার দিন তালা ঝোলে বিলক্ষণ। স্পরিবার, সদলবলে পাড়ার পুজোতেই বসে চলে খাওয়াদাওয়া। এমনকী বাদ যান না পাড়ার কারও বাড়িতে আসা অতিথিরাও। এ বার অবশ্য রান্নাঘরে নয়, তালা ঝুলবে মেলামেশার এই সামাজিকতায়!

অষ্টমীতে কুপন কেটে প্রায় হাজার দুয়েক লোকের খাওয়ার আয়োজন এ বছর স্থগিত রাখার কথা জানাচ্ছেন সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের পুজোর সভাপতি প্রদীপ ঘোষ। বললেন, ‘‘পুজোর পরে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়বে। সেটা মনে রেখেই পুজোর আয়োজন করতে হবে।’’

গোটা বেগুনকে চার ফালি করে তার ভিতরে মশলার পুর ঠেসে ‘বেগুন বাহার’। তার স্বাদ ভুলতে পারেন না সন্তোষপুর লেকপল্লির কর্মকর্তা সঞ্জয় দাস। জানালেন, সপ্তমী থেকে দশমী প্রতিদিন প্রায় ৭০০ লোক যোগ দেন তাঁদের পুজোর পঙ্ক্তি ভোজনে। প্রথম দু’দিন নিরামিষ হলেও, নবমী-দশমীতে পাঁঠার মাংস, কাতলা বা রুইয়ের কালিয়া আর শেষ পাতে কমলাভোগ থাকত। এ বার ভুরিভোজ বন্ধ রেখে কাজ হারানো পল্লিবাসীর পাশে দাঁড়ানোই মূল লক্ষ্য- জানাচ্ছেন সঞ্জয়বাবু।

আরও পড়ুন: লকডাউনের একঘেয়েমি কাটাতে প্রতিমা গড়ল অর্ঘ্যদীপ, পুজোয় সামিল হবেন পড়শিরা

রোজ না হলেও অষ্টমীতে বড় ভোগের আয়োজন করত উত্তর কলকাতার জগৎ মুখার্জি পার্ক। বাসিন্দা থেকে দর্শনার্থী, সব মিলিয়ে প্রায় ২৫-৩০ হাজার লোকের কাছে পৌঁছে যেত খিচুড়ি, পোলাও, বেগুন ভাজা, আলুর দম, ছানার কোফতা, ধোঁকার ডালনা, পায়েস ও শুকনো বোঁদে সাজানো থালা। একই পদ প্রায় তিন হাজার বাক্সে ভরে হাজির হতো শুভানুধ্যায়ীদের কাছেও। পুজোর যুগ্ম সম্পাদক দ্বৈপায়ন রায় বলেন, ‘‘কোনও ভাবেই এ বছর ভিড় হতে দেওয়া যাবে না। সরকারি নির্দেশিকা মেনেই সব আয়োজন করছি। তাই এ বছর বড় ভোগওবন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’’

পঙ্ক্তি ভোজনের মাধ্যমে প্রতিবেশীদের সম্পর্কের বন্ধনটা জোরালো হয়। ফাইল চিত্র।

খাওয়াদাওয়া মানেই তা হবে জমাটি। তাই শান্ত মনে রসনাতৃপ্তির জন্য বরাবরই পুজোর পরের একটি দিন বেছে নেয় একডালিয়া এভারগ্রিন। দক্ষিণের এই হেভিওয়েট পুজোর কর্মকর্তা তথা মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রায় হাজার দেড়েক লোক একসঙ্গে বসে ১২-১৩ রকমের পদ খেতেন। এ বারে সেটা হচ্ছে না।’’ তবে ভোগ বিলির পরম্পরা বন্ধ রাখা হবে না বলেই জানান সুব্রতবাবু। বাক্সে ভোগ-প্রসাদ পৌঁছে যাবে পরিচিত এবং অতিথিদের কাছে।

পুজোর চার দিন শুধু পাত পেড়ে খাওয়া আসল উদ্দেশ্য নয়। পঙ্ক্তি ভোজনের মাধ্যমে প্রতিবেশীদের সম্পর্কের বন্ধনটা জোরালো হয় বলেই মনে করেন নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘের সাধারণ সম্পাদক বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্ত। প্রতি বছরই সপ্তমী থেকে নবমী চলে তাঁদের খাওয়াদাওয়া। শেষ দিনে আমিষ। বাপ্পাদিত্য বলেন, ‘‘শুধু নবমীতে এলাকার প্রতি বাড়িতে আমিষ ভোগের মালসা দিয়ে আসব। যাতে মণ্ডপে ভোগ নেওয়ার ভিড় না হয়।’’

আরও পড়ুন: প্রকৃতির কোলে পশু পাখি চেনাই মানুষকে, সেই তো আমার পুজোর আনন্দ

প্রতি বছর পছন্দের রাঁধুনিকে দিয়ে আমিষ-নিরামিষের বিবিধ পদ রান্না করিয়ে তা পরিবেশনে হাত লাগান কসবা বোসপুকুর শীতলা মন্দিরের পুজোর উদ্যোক্তারাই। সভাপতি বিজন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এ বার যে মহিলারা পুজোর কাজ করবেন, তাঁদের জন্য ওই ব্যবস্থা থাকবে।’’

পুজো উদ্যোক্তাদের এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের সাধারণ সম্পাদক শাশ্বত বসু। তিনি বলেন, ‘‘মণ্ডপ ও সংলগ্ন এলাকায় যাতে ভিড় না হয়, সে দিকে সকলকে নজর রাখতে বলা হয়েছে। ফলে পঙ্ক্তি ভোজন বন্ধ রেখে প্যাকেট দেওয়া যেতে পারে।’ উদ্যোক্তারাও বলছেন, ‘আসছে বছর, আবার হবে!’

অন্য বিষয়গুলি:

Durga Puja 2020 Durga Puja Celebration 2020 Durga Puja Special Durga Puja Nostalgia Kolkata Durga Puja Durga Puja Preparations
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy