Advertisement

Associate Partner

Style Partner

Associate Partner

Weddings Partner

Food Partner

Durga Puja 2019

অ্যাসিড-মেয়ে পারমিতার উত্তরণ আজকের দুর্গায়

আজ তাই আশ্বিনের কাশফুলের জোৎস্না আলো তাঁর রক্তে।

স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৯ ১৮:৫১
Share: Save:

অনেকগুলো মেক আপের বাক্স ছিল তাঁর। মেদিনীপুরের মেয়ের। ছোট থেকে পড়া, কবিতা বলা আর সাজ। সারা রাত স্বপ্ন দেখা, নিজেকে দেখা। আকাশ যেমন তাকিয়ে দেখে পৃথিবীকে। পারমিতা বেরা।

সেই দেখতে দেখতেই আকাশ পৃথিবীর মাঝে কোনও এক কালো পোড়া হাত। অভিশপ্ত রাত পারমিতার পরিবারে। ‘‘সে সব থাক। এই অ্যাসিড ভিক্টিম বলে লাফালাফি প্রচার আমার একদম পছন্দ নয়। অ্যাসিড ছাড়াও আমার জীবনে অনেক সুন্দর কিছু আছে। সেগুলো নিয়ে একটু বলি?’’ প্রশ্ন করেন পারমিতা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সোশিওলজির ছাত্রী। আশ্বিনের এক প্রাগৈতিহাসিক সকালে কী বলতে চান তিনি? ‘স্বর্গের দেবপুরুষগণ যুদ্ধে পরাজিত হয়ে যে রণদেবীকে অসুর নিধনে পাঠিয়েছিলেন সেই দুর্গাই একুশ শতকে নারীর ক্ষমতায়ন। তাঁর মহাতেজ চিরজাগরুক আগুন হয়ে জ্বলে উঠুক মাটির পৃথিবীর প্রতিটি নারীর মধ্যে। হে মহামানবী, তোমাকে সালাম!’

মল্লিকা সেনগুপ্তের ‘কন্যাশ্লোক’ বলে চলেছেন পারমিতা। যেন নিজের অটুট মনোবল একটু একটু করে ছড়িয়ে দিচ্ছেন পৃথিবীর মাঝে।
লাল পেড়ে সাদা শাড়ি। নথ। শঙ্খ। সোনার গয়না... পারমিতা তাঁর উত্থানের নতুন নাম দিয়েছেন, ‘উমা’। তাঁর ছবি তুলেছেন ডোনা বসু। ভিডিয়োগ্রাফি সন্দীপ রায়। সঙ্গীত অভিষেক দিন্ডার। সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন দেবমিত্রা সাহা আর অর্চন রায়।

‘‘আমি কৃতজ্ঞ আমার ডাক্তারের কাছে। পনেরোটা সার্জারির পর তিনি আমায় এই রূপ দিয়েছেন। আমি যে কোনও দিন সাজতে পারব ভাবিনি।’’ আবেগ পারমিতার কণ্ঠে। খুব দুল পড়তে ভালবাসতেন, কিন্তু অ্যাসিডে গলে গিয়েছিল তাঁর কান।

‘‘আমি বলেছিলাম বিয়ে করব না। বাড়িতে এসে রাতের বেলা ঘুমিয়েছিলাম। সেই ঘুমের মধ্যে অ্যাসিড মারল। মা আর ভাইয়েরও লাগল সেই বিষ! যে অপরাধ করে তার ক্ষমতা বেশি। তাই আমরা মেদিনীপুর ছাড়লাম। আর পনেরো দিনের মাথায় ওই লোকটা বিয়ে করে দেখাল, ও চাইলেই নারী শরীরে রং নিয়ে খেলতে পারে, কখনও তা সিঁদুর। কখনও অ্যাসিড,’’ কঠিন হয়ে আসে পারমিতার স্বর। এই ঘটনা তাঁকে নতুন করে বাঁচতে শিখিয়েছে। বলেছিল পাড়ার লোকে, ‘‘এ মেয়ের তো আর বিয়ে হবে না। বাবা-মায়ের পর কে দেখবে একে? একে মেরে ফেলাই ভাল,’’ খুব সহজ করে বলেন পারমিতা। যাদবপুরের ছাত্রী।

সে এক তাঁর পেরিয়ে আসার সময়। যখন দু’চোখ বেয়ে রাত্রি ঝরে, পাংশুটে রাত। রক্তমাখা চাঁদের দেহে জোৎস্না উধাও! পারমিতা দমে যাওয়ার পাত্রী নন। আজ তাই আশ্বিনের কাশফুলের জোৎস্না আলো তাঁর রক্তে। ছন্দে। আজ যাদবপুরের বন্ধুরাই তাঁর পাশে।

আরও পড়ুন: পথ-বিধি মনে করাতেই উদ্বোধনে মৃতদের পরিবার

‘‘এখন যা অবস্থা তাতে চাকরি করলে ভাল হত। তবে ক্লাস আর পড়াশোনা করে তো চাকরি করতে পারব না। তাই কবিতাকে সামনে আনছি। একটা ইউটিউব চ্যানেল করছি। সাবস্ক্রিপশন যদি বাড়ে...।’’ পারমিতার অভিলাষী মন চন্দ্রে না-পাক জোৎস্নায় পাক সামান্য ঠাঁই... এটুকুই যেন চাওয়া। পারমিতার মা-ও ভাবেননি সেই সাজ ভালবাসা মেয়েকে তিনি ফিরে পাবেন। ‘‘মা আজ বলছে, অতগুলো সাজের বাক্স দিয়ে না দিলেই তো হত!’’ হাসছেন পারমিতা। চমৎকার করে সাজিয়েছেন তাঁকে বিরপল কর। লড়াই করে জিতে নেবেন তিনি সকলের পরান।

আজও সেই আশ্বিন আর এক সকাল... সেই সকালে ভেসে আসে পারমিতার কণ্ঠ, ‘আমার দুর্গা আত্মরক্ষা শরীর পুড়বে, মন না...।’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy