পুজো প্রায় দোরগোড়ায়। পাড়ায় পাড়ায় শুরু হয়ে গিয়েছে প্রহর গোনা। নজর কাড়বে কে, তারই এক ঝলক।
সেলিমপুর পল্লি: ৮৬তম বছরের থিম ‘অন্তঃস্থ শক্তি’। মণ্ডপে তুলে আনা হচ্ছে আত্মার ধারণা। আত্মা অবিনশ্বর, তার মৃত্যু নেই। আসলে আত্মা জন্ম ও মৃত্যুর চক্রে ঘুরতে থাকা একটি শক্তি। পুজোর আগে দেবীমূর্তিও জড়পদার্থ মাত্র। প্রাণ প্রতিষ্ঠা করার পরেই মায়ের কাছে নিজেদের আর্জি তুলে ধরি আমরা। তাই পুজোর সঙ্গেও এই ধারণার যোগ রয়েছে। প্রতিমা থিমের সঙ্গে মিলিয়ে।
শিবমন্দির: সংসারের নানা বন্ধনে সব মানুষই আবদ্ধ। পারিবারিক মায়া-মমতা, বন্ধুত্বের বন্ধন, কাজের জায়গার সম্পর্ক থেকে শুরু করে ভালবাসার বাঁধন — এই নিয়েই জীবন। তবে এই বাঁধনের টান এখন আলগা হয়ে পড়ছে। অথবা এমন জটিল অবস্থায় পৌঁছচ্ছে যে, তার থেকে মানুষ মুক্তি খুঁজছে। এই ভাবনারই দেখা মিলবে মণ্ডপে— ‘বন্ধনী’ থিমের মধ্যে দিয়ে। এ বার পুজো পড়ল ৮৩ বছরে।
মুদিয়ালি: ৮৫তম বছরের থিম ‘সাজিয়ে পূজার ডালি, রঙের হাটে মুদিয়ালি’। মণ্ডপ সেজে উঠবে রঙের খেলায়। সঙ্গে অভিনব আলোকসজ্জা, বিভিন্ন কাল্পনিক ও বিমূর্ত মোটিফ ও মূর্তির কাজ। তার মাধ্যমেই উৎসবের আবহকে তুলে ধরা হবে। প্রতিমা সাবেক। সাজে সাত রঙের ছোঁয়া।
যোধপুর পার্ক সর্বজনীন: এ বারের মূল ভাবনা ‘স্থাপত্যের শেষ থেকে শুরু’। যে কোনও সৃষ্টিই ধ্বংসের পরে মাটি বা ছাইয়ে পরিণত হয়। সেই ছাই দিয়েই এ বারের মণ্ডপ। ফ্লাই অ্যাশের ইট দিয়ে তৈরি শিবের মন্দির। সেই মন্দিরেই দেখা যাবে কষ্টিপাথর রঙের দুর্গা মূর্তি।
৯৫ পল্লি: ৭০তম বছরের থিম ‘জাগরণ’। পুজোকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন শিল্প-ভাবনার প্রকাশ ঘটে। সেই বিষয়টিই তুলে ধরা হয়েছে। দুর্গা, কৃষ্ণ ও মা কালীর অবয়বকে একত্রিত করেই তৈরি হয়েছে প্রতিমা। অসুর নিরস্ত্র। দেবীর হাতে ত্রিশূলের বদলে বাঁশি।
সুরুচি সঙ্ঘ: এ বারের বিষয় উৎসব। ২০০ ফুট উঁচু মেঘের তলায় থাকবে নানা ধরনের ঘর। লোহার জালি দিয়ে তৈরি হয়েছে মেঘ। যেন মা তৈরি করে দিয়েছেন একটি শামিয়ানা। নীচে আশ্রয় সব শ্রেণির মানুষের।
রাজডাঙা নব উদয় সঙ্ঘ: শাটল কর্ক আর উদ্বাস্তুদের অবস্থা অনেকটা একই রকম। পৃথিবী জুড়েই উদ্বাস্তুদের বাস। তাঁরা ছুটে বেড়ান এক দেশ থেকে অন্য দেশে। এই সমস্যাই তুলে ধরব মণ্ডপে। ৩৬তম বছরে পুজোর শিরোনাম, ‘উদ্বাস্তু এক ফিনিক্স পাখি’।
গোখেল স্পোর্টিং ক্লাব: ৮১ বছরে সাবেক পরিবেশে মায়ের আরাধনা। প্রতিমার সাজ সোনালি। বিশেষ আকর্ষণ নবমীর দিন ধুনুচি নাচ।
বিবেকানন্দ পার্ক অ্যাথলেটিক: ৪৭তম বছরের থিম ‘অন্তরালে’। কুম্ভকার বা পাল গোষ্ঠীভুক্ত শিল্পীরা মাটির মূর্তি গড়েন। অর্থমূল্যে তাঁদের শিল্পের বিচার করা ধৃষ্টতা। অথচ তাঁদের নাম-পরিচয় আড়ালেই থেকে যায়। সেই না-বলা কথাই উঠে আসছে মণ্ডপে।
স্টেট ব্যাঙ্ক পার্ক সর্বজনীন: ৪৯তম বর্ষের থিম ‘আবাহনে আলপনা’। আলপনার আঙ্গিকে মণ্ডপসজ্জা। ব্রতকথা ভিত্তিক নয়, এই আলপনা রবীন্দ্রনাথের, শান্তিনিকেতনের ছাঁচে গড়া। লোহা দিয়েও তৈরি হচ্ছে কিছু ত্রিমাত্রিক আলপনা। রয়েছে ষড় ঋতুর প্রভাব। মা সনাতন রূপে। প্রতিমার সাজেও কাগজের আলপনা।
চেতলা অগ্রণী: কলকাতা শহর কত যুগের, কত ইতিহাসের সাক্ষী। যেন বিভিন্ন ঘটনা দেখতে দেখতে হেঁটে চলেছে সেই শহর। রাখিবন্ধনের মধ্যে দিয়ে রবীন্দ্রনাথের মৈত্রীর বার্তা, কখনও আবার বিশ্বযুদ্ধের পরের দুর্ভিক্ষ—এ হেন বহু স্মৃতি উস্কে দেবে মণ্ডপ। ‘কলিকাতা চলিয়াছে নড়িতে নড়িতে’ এ বারের উপস্থাপনা।
সন্তোষপুর ত্রিকোণ পার্ক: ৭০ বছরে পা দিয়ে পুরনো সময়কে ফিরে দেখার চেষ্টা। থিম ‘বিস্মৃতি’। ৭০-এর দশকের বহু জিনিসপত্র দিয়ে সেজে উঠবে মণ্ডপ। গ্রামোফোন, রেকর্ড, রেডিয়ো, সেই সময়ের বিজ্ঞাপনের পোস্টার— থাকছে অনেক কিছুই। প্রবীণেরা খুঁজে পাবেন ফেলে আসা দিনগুলি। আর নতুন প্রজন্ম জানতে পারবে সেই যুগটা কেমন ছিল।
রামলালবাজার সর্বজনীন: ২৮তম বর্ষে মণ্ডপের মধ্যে গ্রামবাংলার সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলব। এক সময়ে এই গরফা এলাকাও গ্রাম ছিল। আমের বন ছিল, ছিল হিজলের বন। সভ্যতার অগ্রগতিতে আজ সে সব হারিয়েছে। একটি সুন্দর গ্রাম কেমন হতে পারে, তা-ই আমরা তুলে ধরব।
মহামায়াতলা (ইস্ট) মিলনী: সাবেকি পুজোয় আন্তরিকতাকে অনুভব করা যায়। তাই এ বার আমরা সাবেক পুজোর দিকেই ঝুঁকেছি। মণ্ডপ ও প্রতিমা সাবেক। পাড়ার সকলে মণ্ডপে বসে গল্প-গুজব করে সময় কাটানোও অন্যতম আকর্ষণ।
পাটুলি সর্বজনীন: সাধারণত আমরা পাশের বাড়ির ছোট্ট মেয়েটিকে দুগ্গা বলে ডাকি। সেই মেয়ে এক দিন বড় হয়। কখনও সে লেখাপড়া শিখে কর্মজীবন বেছে নেয়। কখনও নিজেকে আবদ্ধ করে ফেলে সাংসারিক জীবনে। সব ক্ষেত্রেই সে সফল। তখনই সে ‘দুগ্গা’ থেকে হয়ে ওঠে ‘দুর্গা’।
পূর্বাচল আমরা সবাই: সাড়ে তিন লক্ষ চামচের ব্যবহারে তৈরি মণ্ডপ। তবে পুজো অবশ্যই সাবেকিয়ানায় ভরা। পুজোর থিম ‘আমরা বাঙালি ষোলোআনা, পুজো আমাদের সাবেকিয়ানা’। এ বার পুজো ৬৬ বছরে পা দিচ্ছে। সাবেক মণ্ডপের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ আলোকসজ্জা।
বেহালা ক্লাব: এ বছর পুজো ৭৫ বছরে পা দেবে। বিষয়বস্তু ‘প্রাণের পরব কথা’। দুর্গাপুজো ছাড়াও টুসু, ভাদু, চড়ক, গাজনের মতো বিভিন্ন উৎসব বাঙালির জীবনে রয়েছে। গ্রামবাংলায় তা ঘটা করে পালিত হয়। উৎসবের মূল স্রোত থেকে ওই সব পরব যেন খানিকটা বিচ্ছিন্ন। এমন হারিয়ে যেতে বসা উৎসবের সঙ্গে পরিচয় করাব দর্শকদের।
অ্যাভিনিউ সাউথ পল্লিমঙ্গল: ৫৩তম বর্ষের থিম ‘প্রতিচ্ছবি’। ঈশ্বরের আরাধনার জন্য আমরা নির্দিষ্ট আধার তৈরি করি। কিন্তু ঈশ্বর কি শুধু সেখানেই বিরাজমান? না কি আমরাই তাঁকে অন্যত্র খুঁজে পাই না? এই ভাবনা ফুটিয়ে তুলতে ইনস্টলেশনের সাহায্য নিচ্ছি। আয়না দিয়ে সাজানো মণ্ডপের যে কোনও জায়গা থেকে ঈশ্বর অর্থাৎ প্রতিমার প্রতিচ্ছবি দেখতে পাওয়া যাবে।
বাঘা যতীন তরুণ সঙ্ঘ: ৭০ বছরের থিম ‘এসো মুক্ত করো’। নদী ও জল বাঁচানোর বার্তা দিতে গঙ্গা বাঁচানোর উপরে জোর দিচ্ছি। নতুন ভগীরথ কেউ আসুক, যিনি গঙ্গাদূষণ রোধ করে বাঁচার পথ দেখাবেন। আলোর কারসাজির মাধ্যমে এই বার্তাই ফুটিয়ে তুলব মণ্ডপে। প্রতিমা থিমের সঙ্গে মানানসই।
বাঘা যতীন বিবেকানন্দ মিলন সঙ্ঘ: ৭০ বছরের পুজোর থিম ‘এসো বাংলার কথা কই’। পুরুলিয়ার ধামসা-মাদল-ছৌ, মেদিনীপুরের পটের কাজ, ঝুমুর গান, বীরভূমের বাউল গান, নদিয়ার পুতুলনাচ তুলে ধরা হচ্ছে। হাতে আঁকা পট দিয়েই অন্দরসজ্জা। পটের গান, পুতুল নাচ, ছৌ নৃত্য থেকে বাউল গান— দর্শকদের জন্য থাকছে সব। প্রতিমা সাবেকি ধাঁচের।
যাত্রা শুরু সঙ্ঘ: ৬২তম বর্ষের থিম ‘তাহাদের কথা’। জেলেদের জীবনযাত্রার ছবি। বাঁশ, গামছা, লালপেড়ে শাড়ি, মাছ ধরার জন্য জালের সুতো, পোলো, ঘুনি দিয়ে জেলেপাড়ার পরিবেশ ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে। সামনের অংশ সাজানো হচ্ছে নৌকা দিয়ে। তবে প্রতিমা সাবেক।
দক্ষিণ কলকাতা তরুণ সমিতি: ৮৪তম বর্ষে আমাদের থিম ‘স্বর্ণময়ী’। ‘স্বর্ণ’ নামে এক কাল্পনিক নারী তাঁর ঘর সাজিয়ে তুলেছেন বাংলার লোকশিল্পের কিছু বিশেষ শিল্পের মিশেলের মাধ্যমে। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলা শিল্পীদের হাতে তৈরি কাঁথাশিল্পে সাজছে মণ্ডপ। রায়বেঁশে লোকনৃত্যের আদলে প্রবেশদ্বার। প্রতিমা নারীশক্তির প্রতীক।
নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘ: মানুষের জৈবিক জন্ম-মৃত্যুর থেকেও বড় বোধ অথবা চেতনার জন্ম। প্রতি মুহূর্তে নিজেকে ভেঙেচুরে আবার গড়ে তোলার মধ্যেই মনুষ্যজন্মের সার্থকতা। তাই ৩৩ বছরের পুজোর থিম ‘জন্ম’। দশ হাজার মাটির কলসি দিয়ে সেজেছে মণ্ডপ। কবীর সুমনের গান ও কলসির মধ্যে জল ও বাতাস ঢুকিয়ে তৈরি আবহসঙ্গীত। n বৈষ্ণবঘাটা পাটুলি উপনগরী স্পোর্টিং ক্লাব: থিম ‘আমার পাড়া আমার পুজো’। গ্রামবাংলার আবহে উৎসবের আমেজ। কাশবনের মধ্যে মায়ের আবির্ভাব। থাকছে হাওয়া-কল। মণ্ডপের অন্দরসজ্জায় থাকছে হাতপাখা, জরি, কদমফুল। প্রতিমা সাবেকি ধাঁচের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy