Advertisement

Associate Partner

Style Partner

Associate Partner

Weddings Partner

Food Partner

somrabazar

দশভুজা নন, সোমড়াবাজারের সেন পরিবারে ত্রিভুজা রূপে পূজিত হন দেবী

সেন পরিবারের প্রথা, দু’টি বড় বাঁশে দোলনা তৈরি করে তাতে চড়িয়েই দেবী প্রতিমা গঙ্গায় বিসর্জন করা হয়।

কণাদ মুখোপাধ্যায়
হাওড়া শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৯ ১৭:১৪
Share: Save:

মহাদেব দিলেন শূল, বিষ্ণু দিলেন চক্র, বরুণ দিলেন শঙ্খ, অগ্নি দিলেন শক্তি, বায়ু দিলেন ধনু ও বাণপূর্ণ তূণীর, ইন্দ্র দিলেন বজ্র। এ ভাবেই দশ হাতে নানা অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মহিষাসুর বধ করেছিলেন দেবী দুর্গা। তিনি সাধারণত দশভুজা রূপেই কল্পিত। তবে পুরাণে তাঁকে অষ্টভুজ এবং অষ্টাদশভুজ রূপেও কল্পনা করা হয়েছে। শাস্ত্রকারদের অনেকে তাঁর কুড়িটি হাতের কথাও বলে থাকেন। আবার এই বাংলাতেই ভিন্ন রূপেও পূজিতা হন দুর্গা। হুগলি জেলার বলাগড় ব্লকের সোমড়াবাজারের সেন পরিবারে দেবী পূজিতা হন ত্রিভুজা রূপে।

এ বছর ২৫৯ বছর পূর্ণ করল সেন বাড়ির পুজো। বাংলা তো বটেই, দিল্লির ইতিহাসেরও নানা উত্থান পতনের চিহ্ন বয়ে নিয়ে চলেছে এই সেন পরিবার। পরিবারের সদস্য রঞ্জনকুমার সেনের কথায়, “১৭৬০ সালে আমাদের পূর্বপুরুষ রায় রায়ান রাজা রামচন্দ্র সেনের হাত ধরেই এই পুজো শুরু হয়েছিল। সেই থেকেই চলে আসছে পুজো।”

কিন্তু, এই বাড়ির দেবী ত্রিভুজা রূপে পূজিতা হন কেন? রঞ্জনবাবুর কথায়, “এই রূপ আসলে স্বপ্নাদিষ্ট। স্বপ্নে এই অবয়বেই দেবীকে পুজো করার নির্দেশ পেয়েছিলেন রামচন্দ্র সেন। তবে, পুজো যাতে নিখুঁত হয়, সে জন্য প্রথম থেকেই দেবীর দুই কাঁধেই আরও ছোট ছোট সাতটি হাত থাকে। সেগুলি অবশ্য প্রকাশ্যে নয়। আমাদের দেবীর দু’টি দক্ষিণ অর্থাৎ ডান হাত। আরেকটি বাম হাত। সমবেত ভাবে দেবী দশভুজা। তবে দৃশ্যত তাঁর তিনটি হাত রয়েছে। দেবীর উত্তোলিত দক্ষিণ হস্তে থাকে খড়্গ। দ্বিতীয় দক্ষিণ হস্তে থাকে শূল। বাম হস্তে দেবী অসুরের কেশ ও নাগপাশ ধারণ করেছেন।"

আরও পড়ুন: বিজয়ার গুটিকয় চিঠি লেখার অভ্যাসই অগুনতি প্রেমের চিঠি লিখিয়ে নিয়েছে

সেন পরিবারের দুর্গা দালান।

আড়াইশো বছরেরও বেশি সময় ধরে চলে আসছে এই পুজো। এর পরতে পরতে জড়িয়ে ইতিহাসের কথা, নানা উত্থান পতনের গাথা। এক সময় সেন পরিবারের মূল নিবাস ছিল কৃষ্ণনগর। সেখানে দুর্গাপুজোর প্রচলন করেছিলেন রামচন্দ্র রায়ের বাবা কৃষ্ণরাম রায়। রঞ্জন কুমার সেনের কথায়, “রাজনৈতিক কারণেই কৃষ্ণনগর ত্যাগ করতে হয় কৃষ্ণরামকে। আর সেই অস্থির সময়ে ভাগ্যান্বেষণে বেরিয়ে পড়েন কৃষ্ণরামের পুত্র রামচন্দ্র। দিল্লির দরবারে পৌঁছন তিনি। নিজের পাণ্ডিত্য ও বুদ্ধিবলে তৎকালীন মোগল সম্রাটের নজর কেড়ে নেন রামচন্দ্র। ১৭৪৩ সালে তিনি রায় রায়ান উপাধিও পান। ওয়ারেন হেস্টিংসের নির্দেশে বাংলা, বিহার এবং ওড়িশার দেওয়ানও নিযুক্ত হন তিনি। সেই সময় থেকেই বলাগড়ের সোমড়াবাজারে পাকাপাকি ভাবে বসবাস করতে শুরু করেন তিনি।”

ইতিহাসের সুদিন যেমন দেখেছে সেন পরিবার, তেমনই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার মুখোমুখিও হতে হয়েছে তাঁদের। রঞ্জনকুমার সেনের দাবি, “রামচন্দ্র প্রতিষ্ঠিত দুর্গা মণ্ডপ আদতে ছিল কাষ্ঠ নির্মিত। কিন্তু, কোনও এক বিজয়া দশমীতে বাড়ির সকলে যখন প্রতিমা নিরঞ্জনে ব্যস্ত তখন সেই কাষ্ঠ নির্মিত মন্দির ধ্বংস করে দেয় কিছু হামলাকারী।” কারা হামলা চালিয়েছিল সে দিন? রঞ্জনবাবুর মতে, "কেউ বলেন সে দিনের হামলাকারীরা বর্গি, আবার কেউ বলেন ইংরেজদের মদতপুষ্ট দুষ্কৃতী।"

আরও পড়ুন: পুজোর বৃষ্টিতে ভেজা পিঠ, মুখে অন্য এক নক্ষত্রের হাসি

Send a message

বিজয়া দশমীর বিষাদের সুর বাজছে সেন পরিবারে। মা পাড়ি দেবেন কৈলাসে। তাঁর বিসর্জনের সকরুণ রাগেও বাজছে আগমনীর সুর। সেন পরিবারের প্রথা, দু’টি বড় বাঁশে দোলনা তৈরি করে তাতে চড়িয়েই দেবী প্রতিমা গঙ্গায় বিসর্জন করা হয়। সেই বাঁশ থেকেই জন্মাষ্টমী তিথিতে প্রতিমার কাঠামো পূজা করেন সেন পরিবারের পুরোহিত। নতুনের সঙ্গে আবহমান কালের মালা গেঁথে ফের শুরু হয় প্রতিমার ঘট স্থাপনের প্রস্তুতি।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy