তিনি নামে লক্ষ্মী। কাজেও তাই! দুর্গাপুরের বেনাচিতির শ্রীনগরপল্লির লক্ষ্মী পাল প্রতিমা-শিল্পকে অবলম্বন করে হাল ধরেছেন সংসারের। তবে তাঁর আক্ষেপ, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ছে না প্রতিমার দর।
লক্ষ্মীদেবীর স্বামী বিমলবাবু প্রতিষ্ঠিত মৃৎশিল্পী। প্রতিমা তৈরির জন্য তাঁর কারখানাও রয়েছে। পুজোর ক’মাস আগে থেকে সেখানে দেখা যেত ব্যস্ততা। এমনকি, রাতেও বাড়িতে কাজ বয়ে আনতেন তিনি। আর তা দেখে-দেখেই শিল্পে হাতেখড়ি লক্ষ্মীদেবীর। কিন্তু তিন মেয়ে আর স্বামীকে নিয়ে লক্ষ্মীদেবীর সাজানো সংসারে তিন বছর আগে ঘটল এক বিপর্যয়। ‘স্ট্রোক’ হল বিমলবাবুর। তার পরে থেকে কাজও তেমন করতে পারেন না তিনি, জানান লক্ষ্মীদেবী।
এর পরে পেটের টানেই এগিয়ে আসা স্বামীর পেশায়, জানান বছর ৪৩ বছরের লক্ষ্মীদেবী। তিনি জানান, প্রতিমার জন্য খড়ের কাঠামো বানানো, মাটি দিয়ে প্রতিমা তৈরির প্রাথমিক কাজটা করার জন্য রয়েছেন দু’জন কারিগর। এর পরের যাবতীয় ধাপের দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নেন লক্ষ্মীদেবী। তিনি জানান, মূর্তির গায়ের মাটি শুকিয়ে কাঠামো ফেটে গেলে ভিজে প্রলেপ দিয়ে তা মেরামত, রঙের কাজ সবই করেন। ‘‘তবে এ সবের মধ্যে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ দেবীর চোখ আঁকা। দরকার, নিবিড় মনযোগ, দক্ষতারও। কঠিন হলেও দেবীর এই চক্ষুদানই আমার সব চেয়ে প্রিয়’’— বলেন ব্যস্ত এই প্রতিমাশিল্পী। এই কাজ করেই মাস ছ’য়েক আগে মেজো মেয়ের বিয়েও দিয়েছেন তিনি।
ডাকের সাজের ও আটচালার প্রতিমা, দুই-ই এই শিল্পী তৈরি করেন। পাশাপাশি, কালী, লক্ষ্মী, কার্তিক, গণেশ, সরস্বতী, বিশ্বকর্মা, মনসা-সহ অন্য নানা দেবদেবীর প্রতিমা তৈরিতে বছর বয়ে যায় এই শিল্পীর।
কিন্তু দিনে আট থেকে বারো ঘণ্টা পরিশ্রম করেও পুজোর মরসুমে বাড়তি টাকা রোজগার এখন দূরঅস্ত্ বলে দাবি তাঁর। তিনি বলেন, ‘‘প্রতিমা তৈরির উপকরণ, কারিগরদের মজুরি প্রতি বছর বাড়ছে। খরচ বাঁচাতে মেয়েও কাজে হাত দেয়। কিন্তু প্রতিমার দাম তেমন বাড়ছে না।’’
স্ত্রীর এই শিল্পকর্মে খুশি বিমলবাবু। স্ত্রীর কাজের পাশে থেকে তিনি বলেন, ‘‘ও না থাকলে সংসারটাই হয়তো ভেসে যেত।’’ লক্ষ্মীদেবীর এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন দুর্গাপুর পুরসভার ২ নম্বর বরো চেয়ারম্যান রমাপ্রসাদ হালদার। তিনি বলেন, ‘‘এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। উনি যদি সাহায্যের জন্য আর্জি জানান, তা হলে পুরসভার যা করণীয়, করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy